ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তামিম সাকিব মুস্তাফিজকে ভালবাসেন অস্ট্রেলিয়ানরা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ জুন ২০১৭

তামিম সাকিব মুস্তাফিজকে ভালবাসেন অস্ট্রেলিয়ানরা

টিউব ট্রেন দিয়ে ওভাল স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়ার সময় দেখা গেল প্রচুর বাংলাদেশী দর্শক। সবাই বাংলাদেশের জার্সি পরে ওভালের দিকে যাচ্ছেন। চলছে চুটিয়ে আড্ডা। সবাই একটি বিষয় নিয়েই বেশি চিন্তিত। বৃষ্টি কী খেলাটাকে প- করে দেবে? এর মধ্যে হঠাৎ করেই একজন টিউব ট্রেনে ঢুকলেন। একজন ছেলে তিনি পুরো শরীরে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা মুড়িয়ে রেখেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান সমর্থক। এত বাংলাদেশী জার্সি পরা মানুষ দেখে তিনি একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর মিটিমিটি হাসছেন। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই জানা গেল, বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানকে খুব পছন্দ করেন তিনি। সবসময়ই এ তিনজনের খেলা দেখেন। এমনকি তিনি জানালেন, অস্ট্রেলিয়ানরা নাকি বাংলাদেশের খেলা এখন গভীরভাবে দেখে। তামিম, সাকিব, মুস্তাফিজকেই তাদের পছন্দ। তারা এ তিন ক্রিকেটারকে ভালবাসেন! ছেলেটির নাম হচ্ছে পিটার। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। খেলা দেখতে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচগুলো দেখতে এসেছেন। এখানে উঠেছেন এক বন্ধুর বাসায়। ক্যামব্রিজের সিডনি স্ট্রিটে থাকছেন। অস্ট্রেলিয়ার খেলা যেখানেই হচ্ছে। তিনি সেখানেই হাজির হচ্ছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও খেলাও তাই দেখতে এসেছেন। খেলা দেখতে এসে টিউব ট্রেনে এত বাংলাদেশী দর্শক দেখে শুরুতে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। পরে নিজেকে সামলে নেন। যখন তার সঙ্গে কথা বলা হলো, দেখা গেল তিনি আসলে অস্ট্রেলিয়ান হলেও একজন বাংলাদেশী সমর্থকও। জানালেন, ‘আসলে শুরুতে টিউবে উঠেই যখন দেখলাম এত বাংলাদেশী একটু ঘাবড়ে গেলাম। পরে দেখলাম সবাই আমাকে দেখে হাসছে। তখন আমিও স্বস্তি পেয়ে হাসতেই থাকলাম।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কে জানতে চাইলেই শুরুতে জানালেন, ‘বাংলাদেশ দলটি এখন অনেক উন্নতি করছে। ২০১৫ সালে তো অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছে। আমরা কিন্তু তোমাদের দলকেও এখন ফলো করি। বাংলাদেশের খেলা নিয়মিত দেখি। বিশেষ করে তামিম, মুস্তাফিজ, সাকিবকে অনেক পছন্দ করি। অস্ট্রেলিয়ানরা তোমাদের এ তিন ক্রিকেটারকে অনেক পছন্দ করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ব্রিসবেনে ম্যাচটি ছিল, সেই ম্যাচটি বৃষ্টিতে প- হয়েছে। না হলে সবাই কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলছে। একটি ম্যাচ খেলেও ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়াও একটি ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে হেরেছে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচে এক পয়েন্ট হয়েছে। বাংলাদেশকে পছন্দ করলেও পিটার চায় তার দেশ অস্ট্রেলিয়াই জিতুক। তিনি আরও বলেন, ‘তামিম দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও কী দারুণ ব্যাটিংই না করল। মুস্তাফিজত যে কোন দলের জন্যই এখন আতঙ্কের নাম। আর সাকিবকে তো আমরা অনেক পছন্দ করি। ও বিগব্যাশেও খেলে। সে যে কোন মুহূর্তে প্রতিপক্ষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ধরা দিতে পারি। আশা করি ভাল একটি ম্যাচ দেখব। উপভোগ্য ম্যাচ হবে। তবে আমি স্বাভাবিকভাবেই চাই অস্ট্রেলিয়া জিতুক।’ অস্ট্রেলিয়ান সে। স্বাভাবিকভাবেই চাইবে তার দেশ জিতুক। বাংলাদেশী দর্শকরাও তো চাইবে বাংলাদেশ জিতুক। শুধু কী চাওয়া। বাংলাদেশী দর্শকরা তো আসলে ইংল্যান্ডও মাতিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে কোন খেলা হলে দর্শকরা ভিড় জমায়। মাঠে যাওয়ার আগে এমন আবহ তৈরি করে, বোঝাই যায়, বিশ্বের আর কোন দেশে এমন দর্শক আবহ নেই। সত্যিই নেই। ওভালে খেলা হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশের নয়। অন্য দেশগুলোরও খেলা হচ্ছে। কিন্তু যখনই বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে, তখনই কেবল কোলাহল দেখা যাচ্ছে। সব বাংলাদেশী দর্শকরা হাজির হয়ে, এমন আবহ তৈরি করছেন; যেন এক টুকরো বাংলাদেশই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও খেলা দেখতে এসেছেন বাংলাদেশীরা। এসেই স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে হইহুল্লোড় শুরু করে দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব তুলছেন। গান গাইছেন। নাচছেন। বাংলাদেশ থেকে তো সমর্থক এসেছেনই। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও পুরো স্টেডিয়াম যেন ঘিরে রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দর্শকরা বলেও দিচ্ছেন, ‘শুধু বাংলাদেশের খেলা দেখতেই এসেছি। বাংলাদেশই জিতবে।’ বাংলাদেশ জিতবে, কী অস্ট্রেলিয়া; তা বোঝা যাবে ম্যাচ শেষে। ম্যাচটা তো আগে হতে হবে। আবহাওয়া সংবাদ যে অবস্থা দাঁড় করিয়েছে, তাতে শুরুতেই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে। ম্যাচটা পুরোপুরি না হওয়ার আতঙ্ক, শঙ্কা। তবুও লন্ডন ব্রিজের সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক দূর করে ঠিকই সমর্থকরা স্টেডিয়ামে এসেছেন। নিজ দেশকে সমর্থনও দিয়েছেন। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া খেলা শুরু হতে তখনও এক ঘণ্টা বাকি। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা ওভালে এসে অনুশীলন করছেন। উইকেটের একদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা, আরেকদিকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা আছেন। কেউ ব্যাট করছেন। কেউ বোলিং করছেন। কিন্তু যখনই মুস্তাফিজুর রহমান মূল উইকেটে বোলিং করার জন্য দৌড়াচ্ছেন, তখন ‘মুস্তাফিজ, মুস্তাফিজ’ রব উঠেছে। বাংলাদেশী সমর্থকরাই এ আওয়াজ তুলছেন। আবার যখন তামিম ও সাকিব মাঠে দৌড়াচ্ছেন, রানিং করছেন; তখনও চিৎকার শোনা যাচ্ছে। চিৎকার দিচ্ছেন বাংলাদেশী দর্শকরাই। তবে অস্ট্রেলিয়ানরাও কিন্তু তামিম, সাকিব, মুস্তাফিজকে ভালবাসেন। অনেক পছন্দ করেন। তা তো পিটারের কথাতেই স্পষ্ট।
×