ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

প্রসঙ্গ কওমী মাদ্রাসা ও ভাস্কর্য

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৩ জুন ২০১৭

প্রসঙ্গ কওমী মাদ্রাসা ও ভাস্কর্য

বেশ কিছুদিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। কারণটি ব্যক্তিগত। এই সময়ের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে, আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছে বিশেষ করে দুটি ঘটনা- কওমী মাদ্রাসার গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার্স ডিগ্রীর স্বীকৃতি এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের প্রবেশপথের মুখে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য স্থাপন এবং আবার সেখান থেকে অপসারণ করে কোর্ট ক্যাম্পাসেই কিছুটা আড়াল করে স্থাপন। এতে শ্যাম কুল দু-ই রক্ষা হয়েছে কিনা ভবিষ্যতই বিচার করবে। তবে গত কিছুদিন ধরে এই দুটি ইস্যু বাংলাদেশের রাজনীতিকে সবকিছুর উর্ধে টেনে নিয়ে এসেছে। পক্ষ-বিপক্ষের রাজনীতি মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গেছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। বলতে দ্বিধা নেই সমাজে যেমন উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রয়েছে, তেমনি উগ্র-প্রগতিশীল গোষ্ঠীও রয়েছে। এই দুই গোষ্ঠীই দেশের বাস্তবতাবিবর্জিত। কারণ, এই দুই পক্ষের কারও কার্যত দায় নেই, দায়িত্বও নেই। অথচ বাস্তবতা অস্বীকার করে কোন সমাজ এগুতে পারে না। পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। ॥ এক ॥ প্রথমেই আলোচনা করতে চাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং তাদের মাঝখানে দিয়ে উঁকিমারা হেফাজতে ইসলাম, যারা মূলত উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এর নেতৃত্বে আছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার বড় হুজুর মওলানা আহমেদ শফী, যিনি এরই মধ্যে নারী বিদ্বেষী ‘তেঁতুল হুজুর’ নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এতদিন দুই জোটের মাঝখান দিয়ে উঁকিমারা কমিউনিস্টরা ওদের কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে কয়েক কিলোমিটার পেছনে পড়ে গেছে। তাদের টেনে তুলতে হলে সময়ের সাহসী রাষ্ট্রনেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই পেয়াদা পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে মইসহ। নইলে বেচারাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। শেখ হাসিনা দুটি ইস্যুকে সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ তো বটেই, এ অঞ্চল তথা বৈশ্বিক রাজনীতিতেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন। তার জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কোন সমস্যাকে এড়িয়ে যান না। যে ভূমিকা দলের কোন দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতার পালন করার কথা, অনেক সময় তিনিই তা পালন করেন। যে কথা একজন মাঠকর্মীর বলার কথা তিনি নিজেই তা বলে দেন। এজন্য তাকে একশ্রেণীর তথাকথিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকের তোপের মুখে পড়তে হয়। তিনি তা পরোয়া করেন না। যেভাবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদের লোলুপ দৃষ্টিকে পরোয়া না করে দেশকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক তথা মূলধারায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, তেমনি দেশের ডান-বাম উগ্র-সাম্প্রদায়িক উগ্র-প্রগতিশীল শক্তিকে তার রাজনীতির মাঠে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছেন। যে কারণে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের রাজনীতির একক রাষ্ট্রনেতা। আরেকজন খালেদা জিয়া, বর্তমান ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার কোন ক্ষমতা-যোগ্যতা কোনটাই তার নেই। ঘরে বসে বসে আপোসহীনতার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। গলায় ঝুলছে দুর্নীতির (ছেলেসহ) কাঁটার মালা। ॥ দুই ॥ কেউ কেউ হেফাজত আর কওমী মাদ্রাসাকে এক পাল্লায় তুলে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেন। তারা বাংলাদেশের মানুষকে বোকা ভাবেন। মানুষ জানে হেফাজত একটি উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। ঠিক আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর মতো। যদিও হেফাজতের অনেকেই বা দলগতভাবে সরাসরি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী না হলেও তাদের মানসিক ফ্যাকাল্টিতে কোন পার্থক্য নেই। আবার এই হেফাজতই মূলত কওমী মাদ্রাসার মূল পরিচালক। তাই হেফাজতের দাবির মুখে যখন সুপ্রীমকোর্টের প্রবেশ প্রাঙ্গণ থেকে গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরানো হয় তখন বলতেই হয় ক্রমে ক্রমে ওদের হাত লম্বা হয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাংলায় একটা কথা আছে ‘বাবাকে কুমিরে খেয়েছে সেজন্য দুঃখ করি না, কুমির যে বাড়ির পথ চিনল সেটিই ভাবনার বিষয়।’ তারপরও সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ স্পর্শকাতর ইস্যুটিকেও যৌক্তিক এবং সার্থকভাবে সমাধান করেছেন। তিনি তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কওমী মাদ্রাসার ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পর্যায়ে কিছু বিষয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ের স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটা নিয়ে উগ্র-প্রগতিবাদীদের কি আক্ষেপ- শেখ হাসিনা তার সরকার ও দেশকে মৌলবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা ভুলে যান অথবা জানেন না কওমী মাদ্রাসার সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকসহ সম্পৃক্তদের সংখ্যা ৭০ লাখের মতো। কেউ কেউ অবশ্য বলেন ৪০ লাখ। ৭০ লাখ হোক ৪০ লাখ হোক তারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং অধিকাংশই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবার থেকে এসেছে। এদের ইগনোর করে বা পশ্চাতে ফেলে রেখে দেশ যে এগিয়ে নেয়া যাবে না এই বাস্তবতা কেবল শেখ হাসিনাই উপলব্ধি করেছেন। যেমন বলা হয় অর্ধেক নারীকে পেছনে ফেলে দেশ এগোবে না। তাই আজ কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপীই নারীর ক্ষমতায়ন বা ড়িসবহ বসঢ়ড়বিৎসবহঃ- এর ওপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। আর হেফাজত-জামায়াত-কওমীরা তো নারীদের ঘরে বন্দী রাখাই ধর্মসম্মত মনে করেন। যে কারণে আজ সময় এসেছে পশ্চাৎপদ কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের ক্ষমতায়ন বা য়ঁধসর সধৎফৎধংযধ ংঃঁফবহঃ’ং বসঢ়ড়বিৎসবহঃ -এর ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ তাদেরও দেশের মূলধারায় টেনে তুলতে হবে। নইলে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় জঙ্গী গোষ্ঠী অর্থ দিয়ে তাদের দলে টানবে এবং তারা নিরাপত্তা প্রাচীরঘেরা কওমী মাদ্রাসায় বসে চাপাতি ধার দেবে মানুষের ঘাড়ে কোপ দেবার জন্য। শেখ হাসিনা এ জায়গায় অনন্য। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে হাঁটার পথ দেখিয়েছেন। ॥ তিন ॥ আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীলদের শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপ মোটেই পছন্দ হয়নি। কেন শেখ হাসিনা ‘তেঁতুল হুজুর’ বা ‘বড় হুজুর’ নামে খ্যাত হাটহাজারী কওমী মাদ্রাসা প্রধানসহ হেফাজতিদের গণভবনে ডাকলেন? কেন শেখ হাসিনা তেঁতুল হুজুরকে সালাম দিলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা ভুলে যান শেখ হাসিনা জাতির পিতার কন্যা। জাতির পিতা অগ্রজ রাজনীতিকদের যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনি শেখ হাসিনা এক বর্ষীয়ান নাগরিককে (বয়স ৯০-এর ওপরে) সম্মান করেছেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী। ‘তেঁতুল হুজুর’ নো-ডাউট বিতকৃত ব্যক্তি। তবুও যখন গণভবনে ডেকেছেন তিনি কি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন খালেদা জিয়ার মতো? তার ছেলের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গেলে তিনি শেখ হাসিনাকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেননি। এখানেই দু’জনের পার্থক্য। তেঁতুল হুজুরের সঙ্গে শেখ হাসিনার নৈতিক ও আদর্শিক দূরত্ব যোজন যোজন। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রনেতা তখন কাউকে বাড়ির চত্বর থেকে অপমান করে তাড়াতে পারেন না। শেখেননি বা তাড়াননি। তবে কওমীদের শেখ হাসিনার ভব্যতা, উদারতাকে দুর্বল ভাবলে চলবে না। জঙ্গী দমন বা ২০১৩-এর শাপলা চত্বরের ৫ মে’র কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। নিজেদের কুমির ভাববারও সুযোগ নেই। ॥ চার ॥ একই সঙ্গে আজ যখন কথা উঠেছে কেন শেখ হাসিনা হঠাৎ করে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিতে গেলেন? তারা ভুলে যান শেখ হাসিনা কারও মতো ‘স্বশিক্ষিত’ (?) নন, রীতিমতো স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর মাড়িয়ে তবেই ডিগ্রী পেয়েছেন এবং ৩৭ বছর যাবত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ-বিদেশের খবর রাখেন বলেই বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করতে সাহস দেখান। কওমী মাদ্রাসা বা হেফাজত তো বিশ্বব্যাংকের মতো শক্তিশালী নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী বা যুদ্ধাপরাধীদের মতো নেটওয়ার্কও তাদের নেই। ॥ পাঁচ ॥ কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি আমার মনে হয় শেখ হাসিনা তাদের ক্রমান্বয়ে শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেব দিয়েছেন। সেটি সম্ভবও। আজ মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু একদিন বর্তমানের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞাননির্ভর ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এটি একটি কওমী মাদ্রাসা ছিল। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে ‘ফাতেমী খিলাফতের’ সময় ৯ম শতাব্দীতে মিসরের কায়রো শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু এটি ইসলামী ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার জন্য ধং ধ পবহঃৎব ড়ভ ওংষধসরপ ষবধৎরহম... এবং আরবী ভাষাভাষী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় সে কারণে এর শিক্ষার মাধ্যম প্রথম থেকেই আরবী। নামও ছিল ‘জামিয়াতুল আজহার’। কি বিশাল ক্যাম্পাস। বিশাল পাঠাগার। পরবর্তীতে কিছু আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও ’৯০-এর শেষের দিকে দেখেছি পাঠকক্ষে সেই প্রাচীনকালের মতোই চাটাইর ওপর বসে পাঠদান ও পাঠগ্রহণ চলে। কিন্তু কালক্রমে এটি আর কেবল ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার প্রতিষ্ঠান থাকেনি, বরং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। গত শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে ধর্মতত্ত্বের বাইরে বিষয়সমূহ শিক্ষার পাদপীঠ.... ওহ ১৯৬১ ধফফরঃরড়হধষ হড়হ-ৎবষরমরড়ঁং ংঁনলবপঃং বিৎব ধফফবফ ঃড় রঃং পঁৎৎরপঁষঁস”. একইভাবে পৃথিবীর আরেকটি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড। এটিও ১১ শতাব্দীতে খ্রীস্ট ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা যায় এটিও প্রথমদিকে খ্রীস্টানদের কওমী শিক্ষালয় ছিল এবং যেহেতু ইংরেজী ভাষাভাষী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় সেহেতু এর শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজী। প্রথমদিকে এতেও প্রধানত ধর্মতত্ত্ব (খ্রীস্টান) পড়ানো হতো। কালক্রমে আজ তা বিশ্বের ১ নম্বর আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিগ্রী যে কাউকে অনেক ওপরে তুলে দেয়। ॥ ছয় ॥ আমাদের কওমী মাদ্রাসাগুলোকেও ‘জামিয়াতুল আজহার’ বা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অক্সফোর্ডের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনা কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির মাধ্যমে সে পথে তাদের অগ্রসর হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। কারণ, বর্তমান অবস্থায় তারা যত বড় কওমী ডিগ্রীই নিন না কেন কর্মজীবনে একেবারেই মিসফিট। কওমীদের তাই ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করতে হবে। তবে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে হবে। তাদের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়াতে হবে, শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি সম্মান জন্ম দিতে হবে মন-মানসিকতায়। শেখ হাসিনা যে পথ দেখিয়েছেন তা অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। ॥ সাত ॥ এবার সুপ্রীমকোর্টের চত্বরের গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। প্রথম এটি ভাস্কর্য না মূর্তি সেটিও অমীমাংসিত। আমাদের উগ্র আধুনিক প্রগতিশীলদের কাছে এটি ভাস্কর্য আর উগ্র-সাম্প্রদায়িকদের কাছে এটি মূর্তি। আমরা সাধারণভাবে যেটুকু বুঝি তা হলো ভাস্কর্য ইতিহাস ধারণ করে, যার একটি নিদর্শন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণের ‘অপরাজেয় বাংলা।’ এটি প্রতীকী হিসেবে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। যার নিদর্শন ইরান, মিসরসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেও রয়েছে। আর মূর্তি হলো পূজার জন্যে দেব-দেবীর মূর্তি। সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণের তথাকথিত গ্রীক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যের স্রষ্টা ভাস্কর মৃণাল হক প্রথমে বলেছেন এটি গ্রীক ন্যায়বিচারের দেবী থেমিসের ভাস্কর্য। পরে অবশ্য বলেছেন বাঙালী নারীর প্রতিকৃতি। ডান হাতে তলোয়ার ও বাম হাতে ন্যায়বিচারের পাল্লা অর্থাৎ তলোয়ার হাতে কোন সমর ললনার প্রতিকৃতি বলা যাবে। আবার দেবী থেমিসকে শাড়ি পরিয়ে বাঙালী সমররানী বানিয়েছেন। শিল্পী লুৎফুল হকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বললেন, মৃণাল হকের করা একটিও ভাস্কর্য হয়নি। আমাদের মতো লে-ম্যানদের জন্য এর একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। আরেকটি কথা শোনা যায়, মৃণাল হক যত ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন (ঢাকা ও চট্টগ্রামে) তাতে তিনি নাকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন অর্থ নেননি। তবে এত টাকা পেলেন কোত্থেকে? ঢাকা ॥ ১ জুন, ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×