ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দূরপাল্লার যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যাচ্ছেন

মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৩ মে ২০২৪

দূরপাল্লার যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যাচ্ছেন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আট লেনের মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। ফুটওভারব্রিজ, ইউলুপ ও আন্ডারপাস নির্মা

ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের যানজটপ্রবণ এলাকায় ইউলুপ, ইউটার্ন, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ দ্রুতগামী লেন নির্মাণসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন আর আগের মতো যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান। এতে যাত্রীদের আর আগের মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। এবার ঈদুল ফিতরের আগে পরে মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে কোথায় যানজট ছিল না বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। যাত্রীরা যানজটমুক্ত পরিবেশেই গন্তব্যে যেতে পেরেছেন। অবস্থায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে নিত্যদিনের সেই চিরচেনা যানজট যেন হারিয়ে গেছে। অবশ্য স্থানীয় লোকজন, পরিবহন ব্যবসায়ী ঠিকাদারসহ নানা পেশার মানুষের দাবি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার, সড়ক সেতু মন্ত্রণালয়, সওজের মেধাসম্পন্ন প্রকৌশলীদের আধুনিক চিন্তা-ভাবনায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইউলুপ, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ, দ্রুতগামী লেন নির্মাণ, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণসহ নানা ধরনের আধুনিক পদক্ষেপ নেওয়ায় যানজট অনেকেটাই ম্লান হয়ে এসেছে। সর্বশেষ মেঘনা সেতুতে নতুন করে ছয়টি টোল বুথসহ আরেকটি নতুন টোল প্লাজা নির্মাণ করায় মেঘনা সেতুতে টোল আদায়ের সময় কোনো যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ এখন আধুনিক মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। জন্য যাত্রীরা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

সওজ সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বর্তমান সরকারের নির্দেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রিজ (শিমরাইল পর্যন্ত চার লেন থেকে আট লেনের মহাসড়কে উন্নীতকরণ, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত মাতুয়াইল, সানারপাড়, নয়াবাড়ী, কেওঢালা সাদিপুর এলাকায় পাঁচটি ইউলুপ নির্মাণ কাঁচপুর সেতু আন্ডারপাস, মদনপুর সেতু আন্ডারপাস, লাঙ্গলবন্দ সেতু আন্ডারপাস মারিখালী সেতু আন্ডারপাসসহ চারটি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থানে ইউলুপ আন্ডারপাস নির্মাণ করায় এগুলো দিয়ে যানবাহন ঘোরানো হচ্ছে। ফলে আর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত পদচারীদের পারাপারের জন্য ২০টি স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ কুতুবখালী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, নিউটাউন, সাইন বোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক, মাদানীনগর, শিমরাইল-, শিমরাইল-, কাঁচপুর-, কাঁচপুর-, কাঁচপুর-, মনদপুর, লাঙ্গলবন্দ, দড়িকান্দি, ত্রিপরদি, মোগড়াপাড়া মেঘনায় ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ। এই ২০টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের ফলে পদচারীরা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার হচ্ছেন বিধায় মহাসড়কে পারপারের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না।

আরও জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটির ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রিজ (শিমরাইল পর্যন্ত চারলেন থেকে আটলেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে অংশের কিলোমিটার দ্রুতগামী লেন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার কুতুবখালী থেকে মাতুয়াইল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চট্টগ্রামমুখী পাশে দ্রুতগামী লেন, মাদানীনগর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত কিলোমিটার উভয় পাশে দ্রুতগামী লেন, মদনপুরে এক কিলোমিটার উভয় পাশে দ্রুতগামী লেন মোগড়াপাড়ায় উভয় পাশে অর্ধেক কিলোমিটার দ্রুতগামী লেন নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুতগামী লেনে যানবাহনগুলো সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। দ্রুতগামী লেনে যাত্রী ওঠানামা করা নিষেধ। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের মেঘনা সেতুতে নতুন করে আরেকটি টোল প্লাজা তৈরি করা হয়েছে। নতুন টোল প্লাজা- আরও ৬টি ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি বুথ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন টোল প্লাজা- টোল প্লাজা-২সহ মোট ১২টি টোল বুথ চালু রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে ইউলুপ, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ, দ্রুতগামী লেন নির্মাণ, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণসহ নানা ধরনের আধুনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন সড়ক জনপথ বিভাগ। কারণে মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে এখন আগের মতো যানজট নেই। যানজটমুক্ত পরিবেশেই ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেট বিভাগীয় ১৮টি জেলার মানুষ নির্বিঘ্নে  স্বস্তিতেই যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা।

কাঁচপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, এখন সড়ক জনপথ বিভাগের মেধাসম্পন্ন প্রকৌশলীরা এসেছেন। বহুদিন পরে তাদের মাথায় এসেছে যে, যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে ইউলুপ, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন তারা সানারপাড়, মদনপুর নয়াবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ইউলুপ আন্ডারপাস নির্মাণ করেছেন। ফলে সাইন বোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর মদনপুর এলাকার যানজট যেন ম্লান হয়ে গেছে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাঁচপুর কাউন্টারের ব্যবসায়ী মো. আলী হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আধুনিক মহাসড়কের পরিণত হয়েছে। ইউলুপ, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলো আরও ১৫ বছর আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তা হলে আরও আগ থেকেই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজটের অভিশাপ থেকে যাত্রী, পরিবহন ব্যবসায়ী শ্রমিকরা মুক্তি পেত। সওজের এক ঠিকাদার জানান, আগে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর শুধু চার লেনের একটি সেতু মেঘনা নদীর ওপর দুই লেনের একটি সেতু ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার টানা কয়েকবার ক্ষমতায় থাকায় দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু (চার লেন বিশিষ্ট সড়ক)   দ্বিতীয় মেঘনা সেতু (চার লেন বিশিষ্ট সড়ক) নির্মাণ করেন। ফলে কাঁচপুর সেতু এলাকায় এখন দুটি সেতু মিলে নদীর ওপর দিয়ে আট লেনের মহাসড়ক মেঘনা সেতু এলাকায় দুটি সেতু মিলে ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। এতে কাঁচপুর মেঘনা সেতু এলাকায় অনেকটাই যানজট কমে এসেছে। মদনপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, আগে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডটি ছিল চৌরাস্তা। ফলে সারাক্ষণ যানজট অব্যাহত ছিল। কিন্তু এখন সওজ কর্তৃপক্ষ চৌরাস্তা বন্ধ করে দিয়ে নয়াবাড়ী কেওঢালা এলাকায় ইউলুপ নির্মাণ করেছেন। ছাড়াও মারিখালী সেতু আন্ডারপাস মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আর যানজট নেই। এমনকি এবার ঈদুল ফিতরের আগে পরে কোনো যানজট ছিল না। এতে আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি। জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

লাঙ্গলবন্দ এলাকার দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, লাঙ্গলবন্দ এলাকায় নতুন করে লাঙ্গলবন্দ সেতু আন্ডারপাস লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় এখন আর কোনো যানজট নেই। তিনি বলেন, গত ১৫ ১৬ এপ্রিল লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লাখ পুণ্যার্থী লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এবার মহাড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে কোনো যানজট ছিল না। ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়ার হোসেন বলেন, মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ছিল ত্রিমুখী রাস্তা। ত্রিমুখী রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ মাতুইয়াইল সানারপাড় এলাকায় দুটি ইউলুপ নির্মাণ করেন। এমনকি সাইনবোর্ড এলাকায় পথচারীদের জন্য একটি র‌্যাম্প সিঁড়ি যুক্ত একটি ফুটওভারব্রিজও নির্মাণ করেছেন। কারণে সাইনবোর্ড এলাকায় আর যানজট নেই। এভাবেই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় আধুনিক মহাসড়কে পরিণত করায় যানজট হারিয়ে গেছে।

হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ টিআই একেএম শরফুদ্দিন যানজটমুক্ত থাকার নেপথ্যে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিস্থিতি খুবই ভালো, খানাখন্দ নেই, যত্রতত্র ইউটার্ন নেই। ইউলুপ, আন্ডারপাস, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ হাইওয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে মহাসড়কটি এবারও ঈদের আগে পরে যানজটমুক্ত ছিল না। সড়ক জনপথ (সওজ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সে সকল স্থানে দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য ডেডিগেটেড লেন (দ্রুতগামী লেন), লোকাল যানবাহনের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ, ফুটওভারব্রিজ, ইউটার্ন, ইউলুপ আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ছাড়াও মেঘনা সেতুতে টোল প্লাজায় নতুন ৬টি বুথ নির্মাণ করে (পুরনো নতুন) সব কয়টি বুথে ইলেকট্রনিক্স টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি) চালু করা হয়েছে। যারা ইটিসি ব্যবহার করে টোল পরিশোধ করবেন তারা দ্রুততম সময়ে টোল প্লাজা অতিক্রম করতে পারছেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা গাড়ি বিকল হওয়া বিশেষ কারণ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের ৩৮টি কিলোমিটার অংশে এখন আর যানজট পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মো. আব্দুল করিম বলেন, এবার লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুলিশী ব্যবস্থা খুবই সন্তোষজনক ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশ ভালো পদক্ষেপ নেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়নি। ছাড়াও এখানে ফুটওভারব্রিজ, আন্ডারপাস মহাসড়কের ডিভাইডারের কাটা অংশ বন্ধ করে দিয়ে ইউলুপ আন্ডারপাস নির্মাণ করায় এবার যানজট সৃষ্টি হয়নি।

×