ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ জাভেদ হাকিম

সন্তানদের সঙ্গে উখিয়া...

প্রকাশিত: ০৭:২১, ২ জুন ২০১৭

সন্তানদের সঙ্গে উখিয়া...

একটি শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে তার মধ্যে ভ্রমণ হলো অন্যতম। সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠতে এবং বাস্তব জীবনের শিক্ষাদানের জন্য শিশুকে সময় সুযোগ করে মাঝে মাঝে নিয়ে যান প্রকৃতির কাছে। উদার করা প্রকৃতিই হলো আমাদের উত্তম শিক্ষক। শহুরে পরিবেশে-অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানরাও যন্ত্রে পরিণত হওয়ার পথে। যার দীর্ঘ নেতিবাচক প্রভাব শিশুর জীবনে প্রতিফলিত হয়। যা এক সমাজ-সংসার-রাষ্ট্রের গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টির অন্তরায়। আমি আমার সন্তানদের জন্য ভাবি, তাই সুযোগ পেলে প্রায়াই তাদের নিয়ে উজাড় করা প্রকৃতির পানে ছুটি। তেমনি গত কয়েকদিন আগে যান্ত্রিক জীবনে মিলেছিল দুদিনের ছুটি, ব্যাস আর পায় কে? সঙ্গী, জীবনসঙ্গিনী আর তিন কন্যা। রাতের গাড়িতে চড়ে সকাল দশটায় গিয়ে নামি কক্সবাজার। আগে থেকেই এন আজিম কটেজ রেখেছিল রেডি। কলাতলী নেমে সোজা হোটেল লবি, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ছুটি সৈকত পানে। বালিয়াড়ি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে করি মিতালি। বীচ বাইকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট হতে কলাতলী ছুটে বেড়াই মহাআনন্দে। আমার তিন কন্যা কনিতা, রবিতা, বসিতা বলতেই আমি যে অজ্ঞান, তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে আমিও হই উচ্ছ্বসিত। এবার শুরু হয় উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে জলকেলি, তিন কন্যার প্রতি তিক্ষè দৃষ্টি রাখতে গিয়ে আমি তখন মহাব্যস্ত। এ যে সন্তানের প্রতি বাবার অকৃত্তিম ভালবাসারই অংশ। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রের নোনা জলের ঢেউয়ের সঙ্গে মাতামাতি, অতঃপর ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, ফটোস্যুট অবশেষে হোটেলমুখী। ফ্রেস হয়ে বার্ড রেস্তরাঁয় কয়েক পদের ভর্তা, ভাত, রূপচাঁদা ফ্রাই দিয়ে সারলাম পেটপুজো। চেটেপুটে খেয়ে-দেয়ে সময়িক বিশ্রাম নিয়ে ঘুরে বেড়াই শহরজুড়ে, আচার কিনে ব্যাগ ভরি, শামুক-ঝিনুকের হরেক পসরা কিনে লই চোরের বোঝা, কলাতলী বীচে সি-পপিস এ মজাদার সব বার্গার আর সি-ফুড গ্রোগ্রাসে গিলে চলে যাই ঘুমোতে। ওঠতে হবে সকালে সকালে, যেতে হবে সৌন্দর্যের আঁধার, নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির রাজ্য উখিয়ার পাটুয়ার টেক। পেট বাবাজীর ডাকে হাজির হই সৈকত লাগোয়া এক রেস্টুরেন্টে, চলে দুপুরের আহার। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের টাকা খসাতে এসব হোটেলের জুড়ি মেলা ভার। সারাদিন সুমুদ্রপাড়ে ঘোরাফেরা হৈহুল্লোড়ে পেটের ক্ষুদা এতটাই তীব্রতর যে, খাবার সময় রেস্টুরেন্টেগুলোর খাবারের দাম একেবারেই হিসেবে থাকে না। হোটেলে অতি মাত্রায় ব্যয় হলেও অন্য সার্ভিসগুলো রিতিমতো বিড়ম্বনার। যেমন একটি ড্রেসিং রুমের জন্য সামান্য ব্যবস্থা না থাকায় সত্যই কষ্টকর, যে কারণে টয়লেটের ভেতরেই সারতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের ভেঁজা কাপড় বদলানোর কাজ। আশ্চর্য! বাইরে কত সুন্দর সাজনো-গুছানো অথচ বাতির নিচে অন্ধকার। দেখা হয় ঢাকা থেকে যাওয়া নানা দেশে ঘুরে বেড়ানো ভ্রমণপিপাসু হুমায়ুন সাহেবের সঙ্গে। তিনিও এমন একটি রেস্টুরেন্টে ড্রেসিং রুম না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করলেন। এসব কারণেই আমাদের দেশে পর্যটনশিল্প বিকাশ এখন সেকেলে। খাবার পর্ব চুকিয়ে আবারও ছুটি। ইনানী হতে মাত্র সাত কিলোমিটার। পাটুয়ার টেক যাবার পথের সৌন্দর্য যেন আরও হৃদয়গ্রাহী আরও বেশি কোমল। উদার করা প্রকৃতির মোহে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি- ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর/যেখানে দুঃখ নেই কষ্ট নেই। সিএনজির ব্রেকে চেতনা ফিরে এলো। একেবারে পাটুয়ার টেক বীচে লাগোয়া থেমেছে। ততক্ষণে ভাটা শুরু, পুরোপুরি মোক্ষম সময়। ওয়াও! এ যেন প্রবাল পাথরের স্বর্গরাজ্য। সৈকতজুড়ে শামুক-ঝিনুকের ছড়াছড়ি, নেই কোন উটকো হকার কিংবা অসচেতন মানুষের উদ্ভট কোলাহল, বর্জ্যমুক্ত চিকচিক করা সাদা বালির সৈকত। ঝিনুক কুড়ানো শিশুদের সঙ্গে আমার তিন কন্যাও মিলেমিশে করেছিল সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন, আজ নেই কোন ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। সবাই এখানে প্রকৃতির সন্তান। উচ্ছল উদ্যম প্রাণচাঞ্চল্য ছুটোছুটি। সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের ছাঁয়া। সৈকতের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের গালিচায় মোড়ানো পাহাড়, রয়েছে জেলে পরিবারের জীবনযাপনের চিত্র। হাত বাড়ালেই মিলবে হরেক পদের সদ্য ধরে আনা সামুদ্রিক মাছ। তৃপ্তি পাবেন, যখন দেখবেন আপনি ও আপনার শিশুরা কলাতলী বা লাবণী পয়েন্টে বীচে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে প্রকৃতির নরম গালিচায় বিচরণ করছেন, সত্যই এক নির্মোহ শান্তির পরস বুকের ভেতর অনুভব করবেন। মঝে মধ্যে খুব ক্ষোভও কাজ করবে যদি আপনি প্রকৃতি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতন হন। কারণ, যেখানেই গিয়েছি দেখেছি এক শ্রেণীর নোংরা প্রাণী আছে যার অতি সুন্দর জায়গা মুহূর্তে নোংরা করতে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ করে না। তাদের কর্মকা- অবলোকন করে সত্যই আমি ব্যথিত হই। পুরো একটা বিকেল ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি- আম কুড়াতে সুখ থুক্কু পড়ন্ত বিকেলে সাগরপাড়ে শামুক-ঝিনুক কুড়াতে সুখ। পশ্চিমা অথৈ জলে সূর্য লুকানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও উত্তরে ফেরার পথ ধরি। যোগাযোগ : ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িতে কক্সবাজার কলাতলী। সেখান থেকে সিএনজি/ মাইক্রোতে উখিয়ার পাটুয়ার টেক। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া জনপ্রতি ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রচুর হোটেল/মোটেল/কটেজ রয়েছে কক্সবাজার। ভাড়া রুমপ্রতি ১২ শ’ টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আরও বেশি জানতে ইনটারনেটে গিয়ে গুগলে সার্চ দিন, পেয়ে যাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য হোটেল-মোটেলের ঠিকানা।
×