ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় বাড়ছে মানুষ

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ২ জুন ২০১৭

ঢাকায় বাড়ছে মানুষ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-এর সর্বশেষ তথ্যমতে রাজনৈতিক ও পারিবারিক, বিয়ে, চাকরির সন্ধান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ২০১৪ ও ২০১৫ এই দুই বছরে দেশের দুই কোটি ২১ লাখ মানুষ স্থান পরিবর্তন করেছে। যার মধ্যে ঢাকায় এসেছে ৩১.৫ ভাগ মানুষ। অবশ্য পুরুষের চেয়ে নারী অভিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি। তার অন্যতম কারণ বিয়ে। বিয়ের কারণে নারীদের স্থান বদল করতে হয়, এক জেলা থেকে আর এক জেলায় যেতে হয়। স্বামীর পেশার ধরন আর সুবিধার কারণেও স্থান বা জায়গা বদল করতে হয়। কর্মসংস্থানের বা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা যেখানে বেশি সে জায়গায় গন্তব্য নির্ধারণ ও নিশ্চিতের বিষয়টিও বিবেচ্য হয়। ৪২ শতাংশ অভিবাসীর মত হচ্ছে বিয়ের কারণেই তাদের স্থান বদল করতে হচ্ছে। অর্থাৎ এটাই যে প্রধান বা মুখ্য বিষয় তা স্পষ্ট। তবে কাজের সন্ধানে মানুষ যে ঢাকায় আসছে প্রতিনিয়ত এবং এতে যে ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ এবং বদলিজনিত কারণে ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় অভিবাসী হচ্ছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ তো রয়েছেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানী ঢাকা কিভাবে এ চাপ মোকাবেলা করবে। সর্বাগ্রে ভাবতে হবে বিকেন্দ্রীকরণের কথা। প্রতিটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অন্তত মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থান, গুরুত্ব এবং পারিপার্শ্বিকতা বিচার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দফতর-পরিদফতর স্থানান্তর করা উচিত। খুলনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর করা হলে তাতে শিল্প ও বাণিজ্য যেমন দ্রুত সম্প্রসারিত হবে তেমনি এর কাজও সহজ ও সুগম হতে পারে। তেমনি কৃষি, স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার নিমিত্তে বিভাগীয় পর্যায়ে এর দফতর-পরিদফতর স্থানান্তর করা যেতে পারে। ঢাকাকেন্দ্রিক তথা রাজধানীকেন্দ্রিক সব সদর দফতর স্থাপনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার ওপর মানুষের চাপ বাড়ে। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকায় এসে তার কার্যসম্পাদন করে। যদি ক্ষমতাকেন্দ্রিক কাঠামোর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় তা হলে মানুষের ঢাকামুখিতা কমবে। তাছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে তো বটেই, এমনকি জেলা পর্যায়েও সরকারী এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ এমনিতেই স্থান বদলের আগ্রহ পরিহার করবে। যাতায়াত এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা সুনিশ্চিত ও নিরাপদ করা গেলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক বিত্তবানই শিল্প-কারখানা গড়ার ব্যাপারে উৎসাহী হবে। সরকারের যে কোন পরিকল্পনার পেছনে জনকল্যাণ এবং জনগুরুত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরী। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। তাতে এর সুফল সাধারণ মানুষ সহজে ভোগ করতে পারবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মকা-ই মানুষের জীবন-জীবিকা বদলে দেয়। কর্মসংস্থানের জন্যই মানুষ জায়গা বদল করে। কারণ, বেঁচে থাকার উপায় এবং অবলম্বন হচ্ছে কাজ। কাজের পরিধি যত বাড়বে, বিস্তৃত হবে ততই মানুষ নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপনের চিন্তা তখন মানুষের প্রবল হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনায়ন কর্মসূচী আরও ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিনিয়ত মানুষ নানা কারণে ঢাকামুখী হচ্ছে। এ কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং তার সুষ্ঠু সমাধান কঠিন কিছু নয়। ঢাকাকে সব ধরনের চাপ ও দূষণমুক্ত রাখতে হলে বিকেন্দ্রীকরণের কোন বিকল্প নেই।
×