ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

ঈদে ব্যতিক্রমী চরিত্রে ঈশানা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১ জুন ২০১৭

ঈদে ব্যতিক্রমী চরিত্রে ঈশানা

জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মৌনিতা খান ঈশানা। ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৯’ এর প্রথম রানার আপ। এর পর শোবিজ অঙ্গনে পথচলা শুরু। নিত্য-নতুন চরিত্রের মধ্যদিয়ে নিজেকে ভেঙে-গড়ে নতুন করে সাজাচ্ছেন অভিনয়ে। ইতোমধ্যেই তিনি রূপ-মাধুর্য ও অভিনয়গুণে শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় তারকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বর্তমানে অভিনয় নিয়েই তার পথচলা। ঈশানা একের পর এক নতুন খ- নাটক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করে যাচ্ছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি মডেলিংয়েও খ্যাতি লাভ করেছেন দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী ঈশানা। বর্তমানে একাধিক ধারাবাহিক ও খ- নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। অভিনয় ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে কথা হলো আনন্দ কণ্ঠের সঙ্গে। বিশেষ দিবসের বাইরেও এ অভিনেত্রী নিয়মিত একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। ঈদের জন্য প্রায় এক ডজন নাটকের কাজ করছেন তিনি। এরমধ্যে খ- নাটকের বাইরে থাকছে ঈদের বিশেষ ধারাবাহিক ও টেলিছবি। সম্প্রতি ঈদের জন্য তিনি মিনহাজুল ইসলাম অভির ‘শূন্য সৈকতে’ শীর্ষক ছয় পর্বের একটি ধারাবাহিকের কাজ শেষ করেছেন। এ ছাড়া শেষ করেছেন স্যামুয়েল রনোর ‘আহত পাখির ডানা’ শীর্ষক একটি টেলিছবির কাজ। ঈদের খ- নাটকের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো- অনিক বিশ্বাসের ‘প্রবঞ্চনা’, ও ‘ক্রাস’, পার্থিব মামুনের ‘ভালবাসা হয়নি বলা’, শামিম জামানের ‘প্রেমিক দর্জি’, শাহীন রিজভীর ‘চৈত্র ফুল’, ও শফিকুল ইসলাম শামীমের ‘ছুটে চলা’, এ্যালার্ম ম্যানসহ বেশকিছু নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় চলছে। ঈশানা বলেন, দর্শক এখন প্রতিটি শিল্পীর চরিত্রে নতুনত্ব দেখতে চায়। আমিও চেষ্টা করছি ব্যতিক্রমী কিছু চরিত্রে এবার ঈদে দর্শকদের সামনে আসতে। এছাড়া ছয় পর্বের ধারাবাহিক ‘শূন্য সৈকতে।’ এ নাটক আমি ছাড়া আরও অভিনয় করছেন পাবেল ও ইমন। এখানে আমার চরিত্রের নাম হলো শৈলী। গল্পে দেখা যাবে, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে আমার ইমনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এদিকে আবার ইমনের সাবেক প্রেমিকা এসে যোগ হয়। তারপর গল্প অন্যদিকে মোড় নেয়। এ ছাড়া আরেকটি খ- নাটক হলো ‘ক্রাশ’। এটি পরিচালনা করছেন অনিক বিশ্বাস। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করছেন জোবান। সমসাময়িক গল্পে এটি নির্মিত হয়েছে। ঈশানাকে প্রশ্ন কররলাম আপনার প্রচার চলতি ধারাবাহিক কি কি? বিটিভিতে অনন্ত হীরার ‘সিনেমার গল্প’ মামুন খানের পাসওয়ার্ড। শীর্ষক ধারাবাহিকগুলো প্রচার হচ্ছে। ধারাবাহিকে তেমন একটা দেখা যায় না আপনাকে এর কারণ কি? আমি ধারাবাহিক একটু কম করি। তবে এখন আগের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে করছি। আসলে আমার কাজ করা নির্ভর করে নাটকের গল্পের ওপর। ভাল গল্প ও চরিত্র পেলে তবেই অভিনয় করি। ঈদের জন্য যে কয়টি ধারাবাহিকে কাজ করেছি তার গল্প বেশ ভাল লেগেছে। আশা করছি দর্শকও গ্রহণ করবেন।’ গল্পের প্রয়োজনে তো দেশ-বিদেশ নানা জায়গাতেই শূটিং করতে হয়। কেমন লাগে? জ্বী অবশ্যই ভাললাগে। কেননা, কাজও করা হয় বাহিরের দেশে ভ্রমণও করা হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে খুব ভাললাগে। কিন্তু ওই ক্ষেত্রে আসলে ওটা বলতে হয় যে, বাহিরের দেশে কাজ করা অনেক বেশি কষ্টকর এবং ক্লান্তিকর ঢাকার তুলনায়। দেশের মধ্যে কাজ করা হয় কক্সবাজার, ভৈরব, মানিকগঞ্জ এ সব জায়গায় কাজ করে অনেক আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে কাজ করা অনেক বেশি কষ্ট হয়। আমাদের দেশে কাজ করলে যে আরামটা পাওয়া যায় কিন্তু দেশের বাহিরে কাজ করলে সেটা পাওয়া যায় না বরং অনেক বেশি কষ্ট করে কাজটি করতে হয়। যেমন সুবিধা আছে তেমন অসুবিধা ও আছে। তবে কাজটা ভাল হলে ভাললাগে। বড়পর্দা নিয়ে কোন ভাবনা আছে? নাটকের বাইরে বড়পর্দায় কাজের স্বপ্ন থাকে প্রত্যেক শিল্পীরই। তার ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু নয়। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আরও কিছু সময় নিতে চান ঈশানা। এ মুহূর্তে চলচ্চিত্রের মতো বড় মাধ্যমে কাজ করার প্রস্তুতি নেই বলেই মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ঈশানা আনন্দকণ্ঠকে বলেন, বড়পর্দা নিয়ে আসলে ভাবনা আছে। কিন্তু এখন বড়পর্দা নিয়ে ভাবছি না। অনেকেই আছে বড়পর্দায় কাজ করে এবং ছোট পর্দায় ও সমানতালে কাজ করে। আমি আসলে এমনটা করতে চাই না। আমি যখন বড় পর্দায় যাব। বড় পর্দার জন্য মোন থেকে ইচ্ছেটা হবে তখন করব। ‘চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। কিন্তু এখনও মনে হচ্ছে, যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার তা আমার নেই। বড় পর্দায় কাজ করার জন্য অনেক কিছু শেখার বাকি আছে এখনও। হুডহাড করে করতে চাই না। চলচ্চিত্রে টিকে থাকাটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি এমনভাবে যেতে চাই, যেখান থেকে ছিটকে পড়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। কিংবা আমার অভিনয় নিয়ে কেউ কটূক্তি করবেন না। তাই নিজের প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। সবদিক থেকে নিজেকে প্রস্তুত করে তবেই বড় পর্দায় কাজ করব।’ আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছি। আমি নিজ থেকেই চলচ্চিত্রে কাজ করছি না। তবে চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু সেটি কবে থেকে শুরু করব বলতে পারছি না। এখন অনেক ভাল ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। দর্শকদের মন জয় করার মতো কোন গল্প পেলে হয়ত কাজ করব। বড় পর্দায় আপাতত কাজ না করলেও ছোট পর্দার অভিনয় নিয়েই পরিকল্পনা তার। এত নাটকে চরিত্রের ভিড়ে ঈশানা চেষ্টা করছেন বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে অভিনয় করতে। কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সবসময় ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা করি। তবে এটা বেশির ভাগ ডিপেন্ড করে নাটকের গল্পের ওপর। তারপরও আমি একটু লাকি। ভাল ভাল চরিত্রগুলো আমার বেলায় জুটে যায়। আর এসব কাজ থেকেই প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার আগ্রহটা আমার মধ্যে ভীষণভাবে কাজ করে।’ ঈশানা বলেন, ‘আমার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয় এ্যাব নরমাল একটা মেয়ের চরিত্র দিয়ে। এরপরবহু ব্যতিক্রমী চরিত্রে কাজ করছি। গ্রামীণ চরিত্র কিংবা শহুরে আলট্রা মডার্ন সব চরিত্রেই অভিনয় করছি। তবে আমার অনেক পছন্দের চরিত্র হচ্ছে এ্যাভেঞ্চার টাইপের কোন চরিত্রে অভিনয় করা। ‘ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনার পরে ঈশানার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলাপচারিতা; এ পর্যায়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলো বিয়ে করছেন কবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আনন্দকণ্ঠকে বলেন, বিয়ের ব্যাপরে ভাইয়া আসলে প্লানটা এমন নয় যে পাঁচ মাসে করে ফেলব। এ রকম কোন পরিকল্পনা আমার নেই। আমার মনে হয় বিয়েটা পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তার হাতে থাকে। তো যখনই সৃষ্টিকর্তা চাইবেন এবং আমার পরিবার চাইবে আসলে তখনই বিয়ে করব। তেমন কোন প্লান নেই এবং বিয়ের প্রতি কোন আপত্তি নেই। কার অনুপ্রেরণায় মিডিয়ায় আসা? অবশ্যই আমার মা। আমার পরিবারই আমার অনুপ্রেরণার মূল জায়গা। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা? ভেবেছিলাম ভয় পাব, কিন্তু আসলে ভয় পাইনি। বরং ক্যামেরাটার প্রেমে পড়ে গিয়ে ছিলাম। নরমালি যেমন থাকি অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তেমনটাই থাকার চেষ্টা করেছিলাম, ফলে অভিনয়ে জড়তা আসেনি। তাছাড়া প্রথম নাটক ‘ফিরিয়ে দিলাম পৃথিবী’ এর পরিচালক তন্ময় তানসেন ও কো-আর্টিস্ট সজলের সহায়তায় ভাল একটি কাজ করতে পেরেছিলাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। অভিনেত্রী না হলে যা হতেন? কর্পোরেট ওমেন হতাম। কখনও ভাবিনি মডেল বা অভিনেত্রী হব। আগে থেকেই কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। বর্তমানে নাটকের হালচাল কেমন মনে হয় আপনার কাছে? আমার বরাবরই মনে হয় আমাদের নাটকের হালচাল খুবই ভাল। আমাদের দেশে এখন অনেক ভাল নাটক নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক ভাল গল্প আছে। অনেক ভাল পরিচালক আছে। নতুনদের অনেকেই ভাল কাজ করছেন। এখন শুধু চ্যানেলগুলো একটু আন্তরিক ও বাজেট বাড়ালে নির্মাতাদের কাজ করতে সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয় ছোটখাটো প্রতিবন্ধকতা না ঘটলে অবশ্যই আমাদের কাজ অনেক ভাল হয়। যে কোন দেশের সিরিয়াল হোক না কেন সেই তুলনায় আমাদের দেশের কাজ অনেক ভাল। ছবি : আরিফ আহমেদ
×