ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সামাজিক যোগাযোগ এবং কমিউনিটি ব্যাংকিং প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩০ মে ২০১৭

ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সামাজিক যোগাযোগ এবং কমিউনিটি ব্যাংকিং প্রয়োজন

(গতকালের ৬নং পৃষ্ঠার পর) দেশের পরিবেশগত মানোন্নয়নে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কিছু অসাধু উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী আছেন যারা অপরের সম্পদ কিংবা নদ-নদী-খাল-বিলকে নিজের মনে করে আত্মসাত করে থাকে। আসলে প্রকৃতিকে কেউ ধ্বংস করলে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তার পরিণাম ভোগ করতে হয়। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড় নির্মম। এদিকে বাংলাদেশের তুলনায় আমেরিকা যারা তথাকথিত সভ্যতার বড়াই করে, তাদের চিত্র পাওয়া যায় আব্দুল মান্নানের (১৪২৩ বাংলা সন) গ্রন্থে ‘বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সেই দেশের ভারতের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ রাস্তা আর পার্কে ঘুমায়। তারা গৃহহীন।’ অথচ তার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবতার বড়াই করে। দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় ৫১ লাখ ২০ হাজার প্রতিবন্ধী, বয়স্ক বিধবা ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফল ভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচীর আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮,৩৪,৯৬০ জন। তবে মাদ্রাসার শিক্ষা গ্রহণকারীদের কর্মনির্ভর শিক্ষার উদ্যোগ নেই। এরা সমাজের বোঝায় পরিণত হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কর্ম-উদ্যোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে সম্প্রসারিত হবে যুগোপযোগী মানসম্মত শিক্ষা। ২০১৬ সালে বয়স্ক ভাতার হার ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা এখন ৩১.৫ লাখ। বিধবা ভাতার হারও ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। উপকার পাচ্ছেন ১১.৫ লাখ দুস্থ ও বিধবা নারী। ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির ২০১৬-১৭ সালের বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ৪৭.৮৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ শারীরিক প্রতিবন্ধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ১০০টি শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে। এদিকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকা- না আবার কর্মসংস্থান ব্যাংকের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। তবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বর্তমান সরকারের নির্দেশনা ঠিকমতো মানছে না বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে। অসচ্ছল ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের আত্ম-উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান দরকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সুফল ভোগীদের সংখ্যা বর্তমানে ৭.৫০ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তাদের জন্য ভাতা বরাদ্দ হয়েছে ৬০০ টাকা হারে ৫৪০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আটটি উদ্যোগের একটি হচ্ছে আশ্রয় প্রকল্প। আশ্রয় প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ২৩৮টি প্রকল্পের অধীনে সুফলভোগীর সংখ্যা ২২,০৪০টি পরিবার। এই প্রকল্পের অধীনে ১ লাখ ২২ হাজার পরিবারের মধ্যে ৯৭ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে। দেশের জনগণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে আটটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প’। এ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘চর জীবিকায়ন কর্মসূচী-২’ ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী’, ‘পল্লী জনপদ (উন্নত আবাসন) সুজন’, ‘ইকোনমিক এম পাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওরেস্ট (ঊঊচ)’, ‘মিল্কভিটার কার্যক্রম সম্প্রসারণ’, ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।’ বস্তুত, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী হয়। তবে এ ব্যবস্থায় ইরম চঁংয-এর জন্য যরা ভেতর থেকে কাজ করছেন, তাদের অবশ্যই আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামার সংখ্যা ১৮.৭২ লাখ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা চার্জ বাড়িয়েছেন, কিন্তু সেবার মান হ্রাস করেছেন। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কর্মসূচী কার্যক্রমের আওতায় সদস্যদের মাঝে ১৮,৪৬০টি গভীর নলকূপ, ৪৪,৫২৩টি অগভীর নলকূপ, ১৯,৪০৫টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ২,৭৩,০০০টি হস্তচালিত পাম্প বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ইঅজউ ৮৮টি প্রশিক্ষণ, অবহিতকরণ এবং কর্মশালা সংগঠনের মাধ্যমে ৩,৬৫১ জন অংশগ্রহণকারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। চর জীবিকায়ন কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলার ২.৫০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেÑ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের নেতৃত্বে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) জনকল্যাণে তাদের সহযোগী ১৯৫টি পার্টনার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের কাজ চলেছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে (এমআরএ) ঢেলে সাজানো উচিত। সিআইবির আওতায় এনজিওসমূহের লেনদেনের হিসাব রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নচেত এটি মুখ থুবড়ে পড়া একটি সংস্থায় পরিণত হবে। এদিকে গ্রামীণ ব্যাংককে অবশ্যই এমআরএ-এর আওতায় নিতে হবে এবং ঋণ প্রদান ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হবে। তা না হলে জনকল্যাণের বিষয়টি উপেক্ষিত হবে। সর্বক্ষেত্রে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য ষষ্ঠ এবং সপ্তম পঞ্চম-বার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২৮, ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত। দেশী-বিদেশী সব বাধাকে নস্যাত করে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরিÑএ প্রয়াস সাধুবাদযোগ্য। আসলে নিট ফরেন এস্টেকে অবশ্যই ডমেস্টিক ক্রেডিটে রূপান্তর করতে হবে। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ
×