ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

‘কাজের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই’ -নাঈম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৫ মে ২০১৭

‘কাজের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই’ -নাঈম

দেশীয় টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা এফএস নাঈম। অভিনয়ের জাদু দিয়ে জয় করে নিয়েছেন অগণিত ভক্তের হৃদয়। টিভিপর্দায় যেমনটা দেখেন, বাস্তবেও ঠিক সে রকমই। সবসময় হাসিখুশি থাকতেই পছন্দ করেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। বর্তমানে অভিনয়ে তুমুল ব্যস্ত একজন মানুষ তিনি। সাবলীল অভিনয়ের এক নিপুণ উদাহরণ তিনি। ধারাবাহিক নাটক থেকে শুরু করে এক ঘণ্টার নাটকই বেশি করে থাকেন। সময়ের ব্যস্ততম এই অভিনেতার সঙ্গে তার সমসাময়িক কাজ নিয়ে কথা হলো আনন্দ কণ্ঠের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন নাঈম। খণ্ড নাটক, ধারাবাহিক ও টেলিছবিতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। পেয়েছেন তারকার তকমাও। অভিনয়গুণে দর্শক নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। ছয় বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছেন তিনি। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন ঈদের নাটক ও দুটি ধারাবাহিকের কাজ নিয়ে। একটি হলো অঞ্জন আইচের পরিচালনায় ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’ এবং অন্যটি আবু হায়াত মাহমুদের ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’। নিয়মিত টিভিপর্দায় দেখা গেলেও নাটকের সংখ্যাটা নাঈমের এখন কমই বলা চলে। এর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি আনন্দকণ্ঠকে বলেন, দেখুন একটি নাটক ভাল কি মন্দ সেটা নির্ভর করে গল্পের ওপর। আমি এ যাবত যা-ই করেছি আগে স্ক্রিপ্ট পড়েছি বা শুনেছি তারপর কাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ধরুন, ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’র গল্পটি। এটাতে অভিনয় করে এত সাড়া পেয়েছি যা বলে বোঝাতে পারব না। এ রকম গল্পই আমি পছন্দ করি। যা দর্শক দেখতে চান। সে সঙ্গে নতুনত্বটাও তাদের চাহিদার বড় একটি জায়গা। তাছাড়া আমি কখনও অতি মাত্রায় কাজ করতে পারি না। এটা আমাকে দিয়ে হয় না। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে অভিনয়টা আর থাকে না। এটা একজন শিল্পীর জন্য ক্ষতির কারণও বটে। তাই অল্প কাজ করেই দর্শকের মাঝে থাকতে চাই। যেটা দেখে দর্শক আমাকে হৃদয়ে ঠাঁই দেবেন সব সময়ের জন্য। প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে নাঈমের একাধিক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। বেশ কয়েকটি নাটকে দেখা যাবে তাকে। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘অক্ষয় কোম্পানির জুতা টু’। এতে তার সহশিল্পী হিসেবে আছে জাকিয়া বারী মম। এ শিরোনামের প্রথম নাটকেও নাঈম ও মম অভিনয় করেছিলেন। চয়নিকা চৌধুরীর ‘ফিরে আসার গল্প’, নাজমুল হক বাপ্পীর ‘ভালবাসি আজও’। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি নাটকের কাজ শুরু করব। ‘ভালবাসি আজও’ নাটকের মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো অপূর্ব ভাই, মেহজাবীন ও আমি একসঙ্গে একটি নাটকে অভিনয় করলাম। জাফরিন সাদিয়ার রচনা ও চিত্রনাট্যে নাটকটি পরিচালনা করেছেন তরুন চিত্রশিল্পী ও নাট্যনির্মাতা নাজমুল হক বাপ্পী। নাটকটি নিয়ে নাঈম বলেন, আমরা তিনজনই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি ভাল করার। আমার বড় ভাই অপূর্ব সবসময়ই আমাকে কাজের ক্ষেত্রে হেল্প করে। মেহজাবীন এবং আমি এক সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। সেই জায়গা থেকে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে শূটিং হয়েছে। তাছাড়া তরুণ নির্মাতা হিসেবে নাজমুল হক বাপ্পীর সঙ্গে কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। সত্যি কথা বলতে মানুষ যখন জেনে শুনে কাজ করে তখন তার সঙ্গে কাজ করে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। সবকিছু মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটি কাজ হয়েছে। নাটকের গল্পটা মৌলিক, এক কথায় চমৎকার। আমি কাজটি করে বেশ আনন্দ পেয়েছি। আমার বিশ্বাস দর্শকরাও নাটকটি দেখে পূর্ণ বিনোদন পাবেন।’ গল্পের প্রয়োজনে তো দেশ-বিদেশ নানা জায়গাতেই শূটিং করতে হয়। কেমন লাগে? ঘুরতে সবারই ভাল লাগে। শূটিংয়ের অনুভূতিটা আলাদা। শূটিংটা কাজ, যখন কষ্ট করে কাজটি করা হয় বানানোর পর দর্শক গ্রহণ করে তখন বেশি ভাল লাগে। এতে শূটিং করতে বেশ মজা লাগে। কারণ অভিনয়টা তো আমি ভলবাসি। আর তাই ভালবাসার জন্য তো সব কিছ্ইু করা যায়। বড়পর্দা নিয়ে কোন ভাবনা আছে? না! একদমই নেই। এদিকে ছোটপর্দার পাশাপাশি নাঈম বড়পর্দায়ও কাজ করেছেন। ‘জাগো’ ছবিতে অভিনয় করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। টিভি নাটকে অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন নাঈম। বর্তমান সময়ে নাটকের মান নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। এ বিষয়ে নাঈম ইতিবাচক মতই পোষণ করেন সবসময়। যারা বলছে যে, নাটকের মান খারাপ হচ্ছে তারা ভুল বলছে। কারণ হচ্ছে যে, উনি হয়ত ভাল কাজগুলো করছে না। বা, ভাল কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে না। তার মতে, অনেকে তো ঢালাওভাবে নেগেটিভ কথাই বলে থাকেন। আমি আমার জায়গায় বরাবরই পজেটিভ মনোভাব পোষণ করি। আমরা যারা কাজ করছি, ভাল স্ক্রিপ্ট ছাড়া কিন্তু কেউই তা করছি না। তাহলে কেন বলব গল্পের কারণে নাটক ভাল হচ্ছে না। ভাল হচ্ছে- এ কথাটি আমরা কেন বলতে পারছি না? এ ব্যাপারটিতে আমরা যদি একটু ইতিবাচক হই তাহলে অবশ্যই ভাল কিছু আশা করা যাবে। অভিনয় ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সংসারটাও বেশ জমিয়ে করছেন নাঈম। গেল বছরের ১৪ জানুয়ারি জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি দেশে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে এসেছেন এই অভিনেতা। কেমন যাচ্ছে সংসার জীবন? জানতে চাইলে নাঈম আনন্দকণ্ঠকে বলেন, আল-হামদুলিল্লাহ। বেশ ভালই আছি আমরা। সবার দোয়ায় আমি আর নাদিয়া সুখেই সংসার করছি। দুজন দুজনকে বেশ মানিয়ে নিয়েছি। আসলে এমনটা সম্ভব কেবল দুটো মানুষের বোঝাপড়ার কারণে। আর আমাদের মাঝে সে ব্যাপারটি ভালই বলতে পারি। সবাই দোয়া করবেন যেন বাকি জীবনটা এমন সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারি। ২০০৭ সালে অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ঈশিতা পরিচালিত ‘নিঝুম অরণ্য’ নাটকের প্রধান নায়কের চরিত্রে অভিয়ন করেন নাঈম। এটি ছিল তার প্রথম নাটক। দর্শকনন্দিত এ অভিনেতা জানান, প্রত্যেকটা কাজই ছিল তার ক্যারিয়ারের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। এমন কোন কাজ হয়নি, যেটা আমার ক্যারিয়ারে কাজে লাগেনি। চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন-প্রত্যেকটা কাজ আমার ক্যারিয়ারে কাজে লেগেছে।’ অবশ্য নাঈম এটাও স্বীকার করেছেন, ‘জাগো’ চলচ্চিত্রে কাজ করার পর তার পরিচিতির ব্যাপ্তিটা অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি জাগো ছবিতে অভিনয় না করতাম তাহলে, হয়ত আমার পরিচিতির ব্যাপ্তিটা এত বড় হতো না।’ এছাড়া ‘রংধনু’ নামে আরও একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন নাঈম। রংধনু চলচ্চিত্রটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন আঁচল ও এ্যানি। অভিনয়ের পাশাপাশি গানের চর্চাও করেন নাঈম। ‘তুমি এখনও আমার তুমি’ নাঈমের গাওয়া গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ হওয়ার পর বেশ জনপ্রিয়তা পায়। গানটির কথাও তিনি লিখেছেন। অভিনয় কিংবা গায়ক নাঈমকে দেখা গেলেও কখনই পরিচালক নাঈমকে দেখা যাবে না। এমনটাই জানিয়েছেন বর্তমান সময়ের ব্যস্ত এ অভিনেতা। নাঈম বলেছেন, এটা আমার কাজ না। ‘এই একটা কাজই আমি মিডিয়াতে যতদিন কাজ করব করতে চাই না। ওটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে ভাল অভিনয় করা।’
×