ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তোফায়েল আহমেদ

আলোর পথযাত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৭ মে ২০১৭

আলোর পথযাত্রী শেখ হাসিনা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এ বছর তাঁর ৩৬তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বার্ষিকী। শেখ হাসিনা যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন, সেদিন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না, ছিল সর্বব্যাপী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ। সামরিক স্বৈরশাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বদেশে তিনি হয়ে ওঠেন আলোকবর্তিকা-অন্ধকারের অমানিশা দূর করে আলোর পথযাত্রী। ’৮১-এর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিলে অনেক আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ও দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমরা সাব্যস্ত করি মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের পতাকা তাঁরই হাতে তুলে দেব। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন তিনি। একই বছরের ১৭ মে এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বৃষ্টিমুখর দিনে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। ওইদিন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে সে-সময়ের ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিকাল সাড়ে ৪টায় এসে পৌঁছেন। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে সেদিন বিমানবন্দরে সমবেত হয়। ওই সময় লাখো জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল-‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’; ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেবো’; ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’; ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’; ‘আদর্শের মৃত্যু নাই, হত্যাকারীর রেহাই নাই’; ‘মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বরের নির্মম হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলেছিল স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া। সংবিধান স্থগিত করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। রাজনীতিকদের বেচা-কেনার সামগ্রীতে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় মদতে দলভাঙার নীতি অবলম্বন করা হয়েছিল। জেনারেল জিয়া সদম্ভে ঘোষণা করেছিল, ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’ এবং ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ানস।’ জেল, জুলুম, হুলিয়া, গুম-খুন ইত্যাদি ছিল নিত্যকার ঘটনা। প্রতিদিন সান্ধ্য আইন জারি ছিল। চারদিকে গড়ে তোলা হয়েছিল এক সর্বব্যাপী ভয়ের সংস্কৃতি। ’৭৬-এর ১ আগস্ট সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া সীমিত পরিসরে ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ করার অনুমতি দেয়। আমরা যারা জেলে ছিলাম এবং যারা জেলের বাইরে ছিলেন তারা দলকে সংগঠিত করেছিলেন। তখন প্রয়াত মহিউদ্দীন আহমেদকে সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্যে ’৭৭-এর ৩ ও ৪ এপ্রিল মতিঝিলের হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়। নেতৃবৃন্দ মতবিরোধ নিরসন এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ’৭৭-এর এপ্রিলে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার এক বছর পর ’৭৮-এর ৩ থেকে ৫ মার্চ ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কারান্তরালে থাকা অবস্থায়ই আমাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। সেই দুর্দিনে জাতির জনক ও জাতীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে দলকে সংগঠিত করতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। দুঃসময়ের সেই দিনগুলোতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ভূমিকাকে কৃতজ্ঞতার সাথে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ’৮১-এর সম্মেলনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা জীবন-পণ চেষ্টা করে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর দলের নেতৃত্বভার অর্পণ করেছিলাম। দলের শীর্ষ পদে তাঁকে নির্বাচিত করে আমরা ভারতের রাজধানী দিল্লী গিয়েছিলাম এবং তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে এই আগমন দিনটি নির্ধারণ করেছিলাম। যেদিন তিনি ফিরে এলেন সেদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেছিল তারা শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেই যেন ফিরে পেয়েছে। সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে সন্ধ্যার প্রাক্কালে সকলের সিদ্ধান্ত অনুসারে আমি যখন দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নাম প্রস্তাব করি, তখন তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। সেকি আনন্দ-উচ্ছ্বাস, সেকি দৃশ্য! চোখের সামনে সেই ছবি ভেসে ওঠে। যা আজ ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। মনে হয়েছে যে, আবার আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে, যে রক্তের কাছে আমরা ঋণী,-যে ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না-সেই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে ঋণের বোঝা কিছুটা হয়ত হালকা করতে পেরেছি। সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম শুনে নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং বিপুল করতালির মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে। শেখ হাসিনা সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শ্রদ্ধেয় আবদুর রাজ্জাক এবং আমি পুনঃনির্বাচিত হই। কাউন্সিল অধিবেশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে শেখ হাসিনা একটি বার্তা প্রেরণ করে বলেছিলেন ‘আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যান।’ বার্তাটি সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক সম্মেলনে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। দলের শীর্ষ পদ গ্রহণে শেখ হাসিনার সম্মতিসূচক মনোভাব সম্পর্কে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে আমি বলেছিলাম, ‘আমরা সকলেই একটি সুসংবাদের অপেক্ষায় আছি।’ শেখ হাসিনা তার বার্তায় সর্বপ্রকার দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে ‘আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির’ মাধ্যমে কাউন্সিলর ও নেতাদের বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচী সোনার বাংলা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গণবিরোধী স্বৈরশাসকের ভিত কেঁপে উঠেছিল। ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার আগে জেনারেল জিয়ার নির্দেশে ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা। বিমানবন্দরে অবতরণের পর লাখ লাখ লোক তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছিল। সেদিন মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আমরা যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে যাই রাস্তার দু’পাশে লাখ লাখ লোক। এমন এক দৃশ্য যা বর্ণনাতীত। মঞ্চে উঠে তিনি শুধু ক্রন্দন করলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হৃদয়ের আবেগ ঢেলে সেদিন বলেছিলেন ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাই, আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনদিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী সংসার ছেলে রেখে আপনাদের কাছে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালী জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা-বিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি। আপনাদের ভালবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের সংগ্রাম শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা না পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের ভার সরকারের কাছে নয়, আমি আপনাদের কাছে এই হত্যাকা-ের বিচার চাই।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটানা ১৪ বছর দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (তখন ১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল) হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবেও কাছে থেকে কাজ করেছি। এছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি। আমার বারবার মনে হয়েছে যখন তার কাছে বসি বা ক্যাবিনেট মিটিং করি বা সভা-সফর করি, তখন বঙ্গবন্ধুর কথা স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নিষ্ঠার সঙ্গে সততার সঙ্গে দলকে সংগঠিত করছেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ তিনি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন। আমি সেই মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। কাছে থেকে দেখেছি দৃঢ়তা ও সক্ষমতা নিয়ে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ‘ইনডেমনিটি বিল’ বাতিল করে সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করে জাতির জনকের বিচারের কাজ তিনি শুরু করেছিলেন। ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে। আবার ২০০৮-এর নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কাজই সম্পন্ন করেননি। মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ করে চলেছেন এবং ইতিমধ্যে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ করে তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ৮ বছরের বেশি আমরা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে। এই ৮টি বছরে শেখ হাসিনা দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে আমরা ১৫ আগস্ট হারিয়েছি। নিষ্পাপ শিশু রাসেলকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা যদি সেদিন দেশে থাকতেন, তারাও আমাদের মধ্যে থাকতেন না। জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে বঙ্গবন্ধুর রক্তে গড়া আওয়ামী লীগের পতাকা আমরা তুলে দিয়েছিলাম। তিনি সেই পতাকা হাতে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর ভাষায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি চমৎকার। এটা আন্তর্জাতিক বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। নোবেল লরিয়েট অমর্ত্য সেনের ভাষায়, সামাজিক-অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে আজ আমরা পাকিস্তান থেকে এগিয়ে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকে আমরা এগিয়ে। অনেক বড় বড় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমাপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করার পরেও দৃঢ়তার সঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে আজ তা সমাপ্তির পথে। মেট্রো রেল, এলিভেটরি এক্সপ্রেসওয়ে, কর্নফুলী টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ তিনি হাতে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এতো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে, যা এই ক্ষুদ্র লেখায় প্রকাশ করা অসম্ভব। ২০০৮-এর নির্বাচনে রূপকল্প তথা ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মধ্যম আয়ের দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন না, বাস্তব। ইতোমধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছি এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছি। ২০২১-এ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে, তখন আমরা পরিপূর্ণভাবে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করব। এগুলো সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। আজ আমরা দেখি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করেছেন। কারণ বাংলার মানুষ যদি লক্ষ্য করে তবে দেখবে ’৯১তে তাদের কোন রূপকল্প ছিল না। ’৯৬তে রূপকল্প ছিল না। ২০০১-এ কোন রূপকল্প ছিল না। ২০০৮’র নির্বাচনেও তাদের কোন রূপকল্প ছিল না। কিন্তু আজকে যে রূপকল্প ঘোষণা করেছেন, তা প্রকৃতপক্ষেই শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করা। এই ‘ভিশন-২০৩০’-এ তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা নিজেই বিশ্বাস করেন না। তবুও একটি রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচী দিতে পারে। এ ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা যা বিশ্বাস করেন, জাতির জনকের মতো তাই তিনি বলেন এবং বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। জাতির পিতা দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা করে চলেছেন। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। এটাই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে আমার প্রত্যাশা। লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার [email protected]
×