ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ কলকাতা মোহামেডানের সুব্রত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ মে ২০১৭

ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ কলকাতা মোহামেডানের সুব্রত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক ভারতীয় বাঙালী কোচ আসার কথা ছিল। এসেছেনও। কিন্তু তাদের তাঁবুতে ভেড়েননি। যোগ দিয়েছেন অন্য দলে। হোঁচট খাওয়া দলটি তাতে হতোদ্যম না হয়ে এবার তাদের ডেরায় নিয়ে এলো আরেক ভারতীয় বাঙালী কোচকে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের এক সময়ের ‘ত্রিশক্তি’ খ্যাত ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের কথা। কদিন আগে তাদের ক্লাবে সপ্তমবারের মতো যোগ দেয়ার কথা ছিল সৈয়দ নাইমউদ্দিনের। কিন্তু নাইম শেষ মুহূর্তে মত পাল্টে যোগ দেন ঢাকা মোহামেডানে। এতে হতাশ হয় ব্রাদার্স। কিন্তু তাই বলে বসে থাকেনি তারা। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আরেক দ্রোণাচার্যকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে। যাকে ম্যানেজ করে ফেলে তিনিও ফেলনা নন, যথেষ্ট ওজনদার কোচই। তার নাম সুব্রত ভট্টাচার্য। মজার ব্যাপারÑ নাইমউদ্দিনেরই এক সময়ের শিষ্য ছিলেন এই সুব্রত। কলকাতা থেকে উড়ে আসা ৫২ বছর বয়সী সুব্রত বুধবার গোপীবাগে অবস্থিত ব্রাদার্স ক্লাবে বসে গণমাধ্যমের সঙ্গে পরিচিতপর্বে এমনটাই জানান। সেই সঙ্গে জানান, আসন্ন লীগে তিনি ব্রাদার্সকে সেরা তিনের মধ্যে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন (গত লীগে চতুর্থ হয় ব্রাদার্স)। চলতি মৌসুমের জন্যই সুব্রতকে নিয়েছে ব্রাদার্স। তবে দল ভাল রেজাল্ট না করলে মৌসুম শেষের আগেই কোচকে বরখাস্তও করতে পারে ব্রাদার্সÑ সুব্রতর সামনেই পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন ব্রাদার্স ম্যানেজার আমের খান। ১৯৮৪ সালে ভারতের জাতীয় যুব দলে নাইমউদ্দিনের কোচিংয়েই খেলেছিলেন সুব্রত (তার প্লেয়িং পজিশন ছিল গোলরক্ষক)। ২০০৫ থেকে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু তার। ২০১৫-১৬ মৌসুমে কলকাতা মোহামেডানের কোচ ছিলেন সুব্রত। এর আগে নাগাল্যান্ড রাজ্য দল, আসাম রাজ্য দল, ওয়েল ইন্ডিয়া এফসি, ভাস্কো স্পোর্টস ক্লাব, মুম্বাই এফসি, সাউদার্ন সমিতির মতো দলের কোচ ছিলেন। আগামী ১৩ মে ফেডারেশন কাপ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই বাংলাদেশ ফুটবলে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন এএফসি ‘এ’ লাইসেন্সধারী এই কোচ। এবার ব্রাদার্স দল গড়েছে তরুণ এবং অনভিজ্ঞ কিছু খেলোয়াড় নিয়ে। দলটি পরখ করার সময়-সুযোগ স্বভাবতই পাননি সুব্রত। তারপরও যে দলটি পেয়েছেন তাদের নিয়েই ভাল ফল করতে চান তিনি। গত মৌসুম লীগে চতুর্থ স্থানে থেকে শেষ করেছিল ব্রাদার্স। এবার একধাপ উন্নতির লক্ষ্য সুব্রতর। বাংলাদেশে প্রথমবার কোচিং করাতে আসলেও এদেশের ফুটবল সম্পর্কে ভালই খবর রাখেন সুব্রত। নব্বইয়ের দশকে আসলাম, মোনেম মুন্না, রুমির বিপক্ষে কলকাতা খেলার স্মৃতি এখনও মনে আছে তার। বাংলাদেশে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এবং ঢাকায় প্রথম এলেন তিনি। প্রথম এসেছিলেন ২০১৫ সালে। সেবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে কলকাতা মোহামেডানের কোচ হিসেবে এসেছিলেন। সে সময় ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলা দেখেছিলেন। কিছুটা ধারণাও পেয়েছিলের। সেই প্রেক্ষিতেই বললেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে গুণগত তফাত উনিশ-বিশ। বিদেশীরাই পার্থক্য গড়ে দেয়। তবে বাংলাদেশে ক্লাব ফুটবল যেভাবে চর্চা হয় সেটা অব্যাহত থাকলে আমার ধারণা ভারত যেমন আজ র‌্যাঙ্কিংয়ে শ’য়ের ঘরে এসেছে, বাংলাদেশের আসতে সময় লাগবে না। তারা ঠিক মতো খেললে এই মুহূর্তে ১১০ থেকে ১১৫’র মধ্যে আসতে পারবে।’ ভারতের বাইরের দেশে কোচিং করানোর ইচ্ছা থেকেই মূলত বাংলাদেশের ব্রাদার্সকে বেছে নিয়েছেন সুব্রত। ‘এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ, যাতে আমি জিততে চাই। আমার কোচিং দর্শনের মূলমন্ত্র হচ্ছে ফিটনেস।’ আসন্ন লীগে ব্রাদার্স-মোহামেডানের ম্যাচ হবে। ফেডারেশন কাপেও হয় তো মুখোমুখি হতে পারে দু’দল। সেখানে নিশ্চয়ই লড়াইটা দু’দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, অলিখিত লড়াই হবে কলকাতার দুই কোচ নাইমউদ্দিন-সুব্রতের মধ্যেও। এ প্রসঙ্গে সুব্রত বলেন, ‘নাইম ভাই অনেক বড়মাপের কোচ। আমি নিজেও তার অধীনে খেলেছি। কিন্তু মাঠে প্রতিপক্ষ ডাগআউটে যেই থাকুক তাকে এতটুকু ছাড় দেব না। তিনি নাইম ভাই হলেও নয়। এটাই পেশাদারিত্ব।’ সবশেষে সুব্রত বলেন, ‘একটা নতুন দলকে বুঝতে কোচের কমপক্ষে তিন সপ্তাহ লাগে। আমাকে একটু সময় দিন। আশাকরি সব এডজাস্ট করে নিতে পারব।’ ফেডারেশন কাপে ব্রাদার্সের গ্রুপটা বলতে গেলে সহজই হয়েছে। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের সঙ্গী হয়েছে টিম বিজেএমসি, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। টুর্নামেন্টে ব্রাদার্সের প্রথম ম্যাচ উদ্বোধনী দিনেই। ১৩ মে দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে বিজেএমসির মুখোমুখি হবে ব্রাদার্স।
×