ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩ কোম্পানির প্রস্তাবে সরকারের সায়

দেশী কোম্পানিগুলো বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৯ মে ২০১৭

দেশী কোম্পানিগুলো বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায় বাংলাদেশের শীর্ষ একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ৩ প্রতিষ্ঠান সরকারের সবুজ সংকেত আদায়ে সক্ষম হয়েছে। অপেক্ষা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের। এরা হলোÑ নিটল-নিলয়, আকিজ জুট মিলস ও হা-মীম গ্রুপ। পাইপলাইনে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল, সামিট, মেঘনা গ্রুপসহ শীর্ষ আরও একাধিক ব্যবসায়ী গ্রুপ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে দেশে বিনিয়োগে ভাটা চলছে, সেখানে বাংলাদেশী টাকা বাইরে বিনিয়োগ কতটা ইতিবাচক হবে সেটা ভাববার বিষয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, নিটল-নিলয়, আকিজ, হা-মীম গ্রুপ তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে আকিজ জুট মিলস মালয়েশিয়ায় ২টি কোম্পানি অধিগ্রহণে ২ কোটি মার্কিন ডলার, হাইতিতে একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনে হা-মীম গ্রুপ ১ কোটি ৪৪ হাজার মার্কিন ডলার ও আফ্রিকার গাম্বিয়ায় একটি ব্যাংক (গাম্বিয়া কমার্স এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক লিমিটেড) স্থাপনে নিটল-নিলয় গ্রুপ ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে এই ৩টি ব্যবসায়িক গ্রুপ বিদেশে মোট ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৩০০ কোটি টাকার বেশি। প্রস্তাবনাটি বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগে রয়েছে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত থাকায় ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তাবনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যথেষ্ট উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। গত বছরের নবেম্বরে যা ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এ তারল্য অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ন্যূনতম স্থানীয় বিনিয়োগ জিডিপির ৩২ ভাগ হওয়া প্রয়োজন। এ পর্যায়ে স্থানীয় বিনিয়োগ উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করা যথাযথ হবে কি না, তা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম। জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্য আমদানি ব্যয় বাড়ছে এবং রফতানি প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমছে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে ২০০ কোটি ডলার নিয়ে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনে সরকার সায় দিয়েছে। ২৫০ কোটি ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শে আরও বলেছে, দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানকরত, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করা হচ্ছে। বিদেশে মূলধন বিনিয়োগে আগ্রহীদের এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের উন্মুক্ত সুযোগ রায়েছে। এ বিনিয়োগের ফলে এ দেশে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিদেশে বিনিয়োগ করার অনুমতি দেয়াটা কতটা যৌক্তিকÑ তা চিন্তার বিষয়। বিনিয়োগের জন্য বিদেশে পাঠানো অর্থ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা; বিদেশে আয় করা মুনাফা দেশে আনা; টাকা নিয়ে গেলে তা ফেরত আসবে কি নাÑ সে বিষয়ও বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতামূলক এসব পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক রয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের আবেদন দিন দিন বাড়ছে। তবে বিদেশে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বিপুল অর্থ পাঠানোর নজির নেই। ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ জিডিপির বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগ কতটা যৌক্তিক। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ মাহবুব আলী বলেন, বিশ্বব্যাপী যদি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ স্বস্তিজনক থাকবে না। আবার বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে টাকার বিনিময় হারের ওপর প্রভাব পড়ে কি না, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশী ৭টি প্রতিষ্ঠানের দেশের বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে।
×