ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা সুফিয়ান

বাচ্চাকে যেভাবে খাওয়াবেন

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১ মে ২০১৭

বাচ্চাকে যেভাবে খাওয়াবেন

আমাদের দেশে মা-বাবা যেন তাদের বাচ্চাদের নিয়ে একটু বেশিই সচেতন। যেন তাদের নিয়ে বাবা-মা’দের আশা আকাশ সমান। যার জন্য জন্মানোর ৩-৪ বছরের পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনযুদ্ধ। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাচ্চারা। এই ৪ বছর বয়সেই তাদের বইয়ের ব্যাগের ওজন প্রায় তাদের সমান। ছোট থেকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাঁটা শুরু করছে আমাদের মা-বাবা’রা। জোর করে পড়ানো, জোর করে খাওয়ানো, জোর করে ঘুমানো এই এখন বাচ্চাদের দৈনন্দিন ক্রিয়া। গবেষকরা বলছে বাচ্চাদের সব ক্রিয়া যদি এমন হয় তবে তার ফলাফল ভাল আশা করা যায় না। এদের মধ্যে বাচ্চাদের জোর করে খাওয়ানো তো বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে যেমন তার শরীরের ক্ষতি হবে তেমনি ক্ষতি হবে তার মানসিক বিকাশে। কেবল অনভিজ্ঞ মা তার শিশুকে জোর করে খাওয়ান। এটা এক ধরনের মানসিক রোগ, যা শিশু নির্যাতনের চিত্র তৈরি করে। যতটা সম্ভব শিশুকে খাওয়ানোর সময় আনন্দপূর্ণ করে তুলুন। যখনই শিশু খাবার পাত্র থেকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়, তখন থেকে তাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা পরিহার করুন। কারণ, সে ইঙ্গিতে যা বুঝিয়ে দিয়েছে, তার ভাষা হলো, ‘আমার ভরপেট অবস্থা, এর বেশি আমি চাই না।’ এরপরও যদি আপনি জোরাজুরি করেন, হয়ত জিতে যাবেন। তবে তা হাসির চেয়ে কান্নার বাঁশি বাজাতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা। আপনার চঞ্চল বাচ্চার মধ্যেও পছন্দের খাবার বাছাইয়ের মানসিকতা গড়ে উঠেছে। আপনার মনে রাখা উচিত, এ শিশু শুধু আপনার ছায়াই নয়, তার স্বকীয়তা আছে, স্বাধীনতা আছে। সুতরাং তার পছন্দের মূল্য দিন। বেশিরভাগ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবা মনে করেন, কম খায় বলে তাদের বাচ্চাটা অপুষ্টিগ্রস্ত হয়ে যাবে বা ভাল মগজের অধিকারী হবে না। ডাঃ ডেভিস ৪ থেকে ১০ বছরের বয়সের বুকের দুধ পানে অভ্যস্ত শিশুদের ওপর জরিপ করে দেখেছেন, শিশুর সামনে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবারের পদ রেখে দেয়া হলে তারা খুশিমতো যেসব খাবার গ্রহণ করে, তা যথার্থই সুষম মানের। যদিও খাওয়ার সময় অনুযায়ী এবং একদিন থেকে অন্য দিনে এই পছন্দের তালিকায় বেশ প্রভেদ দেখা যায়। মূল কথা হলো, শিশুর মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে এমন এক সত্তা দেয়া আছে, কোনটা পুষ্টিকর, কোনটা পুষ্টিকর নয় এসব ধারণা না পেয়েও শিশু নিজের বৃদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খাবার গ্রহণ করে। জোর করে বাচ্চাকে খাওয়ানো কোন ভাল জবাব নয়। অপরিণত মা-বাবা শিশুকে খাওয়ানোর সময়টা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেন। এতে শিশুর মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এভাবে সে বির্মষ হয়ে যায়। শিশু যে খাবার পছন্দ করছে না, তা তার পাত থেকে সরিয়ে নিন। এতে সে স্বস্তি পায়। মোটকথা, বাচ্চাকে নিজের মতো করে করতে দিন। তার বিকাশে বাধা না দিয়ে সহায়তা করুন। আপনি যেভাবে ভাবছেন মনে রাখবেন সেভাবে সবকিছু নাও হতে পারে। আপনার বাচ্চার ব্যক্তিস্বাধীনতা তৈরি করতে আপনিই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।
×