ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটে তিন মোড়লের ক্ষমতা খর্ব

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

ক্রিকেটে তিন মোড়লের ক্ষমতা খর্ব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ক্রিকেটে তিন মোড়লের আধিপত্য খর্ব হয়ে গেল। আর্থিক বিষয়ের বিবেচনায় ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বড় প্রভাব ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি)। আর সে কারণে আর্থিক ক্ষমতাবলে আইসিসির নিয়মগুলোও নিজেদের মতো করেই সাজিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই লভ্যাংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং পূর্ণ সদস্যপদে কিছু অদল-বদলের প্রস্তাবনাও ছিল। অনেক সমালোচনা ও আলোচনা হয়েছে সেক্ষেত্রে। তবে এই মুহূর্তে আইসিসির সঙ্গে শুধু একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু সর্বশেষ দুটি প্রস্তাবনাই বাতিল হয়েছে বুধবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসির বোর্ড সভায় ভোটাভুটিতে। তিন মোড়লের জন্য বিতর্কিত অধিক লভ্যাংশ নীতি পাওয়ার বিসিসিআই প্রস্তাবনা ৮-২ ভোটে বাতিল হয়। পরিবর্তে আইসিসি যে আর্থিক মডেল দিয়েছে তাতে করে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ‘বিগ থ্রি’। আর গঠণতন্ত্র পুনর্গঠনের প্রস্তাবনাও নাকচ হয়েছে একই ব্যবধানে। ভারতের প্রস্তাবনা ছিল আইসিসির মোট লভ্যাংশের ২০ ভাগ পাওয়ার। কারণ ভারতীয় ক্রিকেটের দারুণ জনপ্রিয়তা, প্রসার, বাণিজ্য ও বিপণনে এগিয়ে থাকায় আইসিসি সর্বাধিক লাভ করে থাকে। এ কারণেই লভ্যাংশেরও সিংহভাগ তাদের দাবি ছিল। শুরু থেকেই ভারতের পক্ষে সুর মিলিয়েছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিল ‘বিগ থ্রি’। কিন্তু বাকি ৭ পূর্ণ সদস্য দেশ শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিসিসিআই গোঁ ধরে ছিল। বিষয়টি সমঝোতার জন্য আইসিসি প্রস্তাব দিয়েছিল ৪০০ মিলিয়ন ডলার নিতে। কিন্তু রাজি হয়নি বিসিসিআই। তারা অপেক্ষা করেছে দুবাইয়ের সভা পর্যন্ত। সেখানে ভরাডুবি হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। ভোটাভুটিতে ভারতের পক্ষে ছিল শুধু শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। এমনকি বাকি দুই মোড়লও তাদের পক্ষ ত্যাগ করেছে। ফলে ৮-২ ভোটে হেরে বাতিল হয়ে যায় বিসিসিআইয়ের প্রস্তাব। খর্ব হয়ে যায় তিন মোড়লের সব ক্ষমতা। বুধবার পাস হওয়া নতুন আর্থিক সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত আইসিসির কাছ থেকে ২৯৩ মিলিয়ন (২৯.৩ কোটি) মার্কিন ডলার পাবে। যা কিনা ভারতের দাবি করা অর্থের অর্ধেকের সামান্য বেশি। যদিও দু’দিন আগে আইসিসি বিসিসিআইকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরের দেয়া সমঝোতার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ভারত। এবার আরও বড় ক্ষতিতে পড়ল তারা। এদিন পরিচালন কাঠামো সংস্কার প্রস্তাবও পাস হয়েছে। তবে আইসিসি বাদ দিয়েছে পূর্ণ সদস্য দলের সহযোগী সদস্যের অবনমিত হওয়ার ধারাটি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট আপত্তি তুলেছিল প্রস্তাবিত ওই ধারার। এখন ভোটাভুটিতে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন নিচের দিকে থাকা দলগুলোর শঙ্কা নেই সহযোগী সদস্য দেশে পরিণত হওয়ার। যদিও এখন ভোটাভুটি হয়েছে, কিন্তু আগামী জুনে আইসিসির বার্ষিক সভাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হবে সব সংস্কার প্রস্তাব। এ কারণে হাল ছেড়ে দেয়নি বিসিসিআই। প্রস্তাবিত মুনাফা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বিসিসিআই তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও এই ফল যে তারা মেনে নেবে না সেটির ইঙ্গিত দিয়েছেন বোর্ডটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ‘বিসিসিআই উভয় প্রস্তাবে নিজেদের অনড় অবস্থানের পক্ষেই ভোট দিয়েছে। এই নীতি পরিবর্তন আমাদের কাছে একদমই অগ্রহণযোগ্য। এই মুহূর্তে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি, সব দরজা এখনই বন্ধ হয়ে যায়নি। এখন আমরা বিশেষ সভায় বসব। সদস্য দেশগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করব।’ সম্প্রতি আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব দেশকে সমানভাবে টাকা ভাগ করে দেয়া হবে। কিন্তু ভারতের দাবি, আইসিসি তাদের দেশকে ব্যবহার করেই বেশি আয় করে। তাই অন্যদের তুলনায় তাদের বেশি অর্থ প্রাপ্য। আইসিসির লভ্যাংশ বণ্টনের বিষয়টি কেমন হবে, সে সম্পর্কে একটি প্রস্তাবও দেয় দেশটি। সেটা বহাল হলে বিশ্বক্রিকেটে ‘তিন মোড়ল’ বলে পরিচিত দেশগুলো বেশি টাকা পেত। যার মধ্যে বিসিসিআইর কোষাগারেই যেত আইসিসির লভ্যাংশের প্রায় অর্ধেক অর্থ। কিন্তু আইসিসি সভায় সেটা বাতিল হওয়াতে লাভ হয়েছে বাকি ৭ দেশের। নতুন আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর বোর্ড ফুলে-ফেঁপে উঠবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও আয় প্রায় ৩০-৩৫ মিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে। সুষম বণ্টন নীতিতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো আয় কমে যাবে ভারতের।
×