ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চোখ মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চোখ মাশরাফিদের

টানা কয়েকটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরুর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ঘরের মাটিতে খেলে। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর ও মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। মাঝে একমাত্র টেস্ট খেলতে ভারত সফরও করেছে। এই সিরিজগুলোতে জয়-পরাজয়ের সমান অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছে টাইগাররা। আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেট লীগ নিয়ে ব্যস্ত জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। তবে ২৬ তারিখেই শেষ হচ্ছে প্রিমিয়ার লীগে তাদের খেলা। কারণ এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে যাবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। মূল চ্যালেঞ্জ আগামী জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এর আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবেন মাশরাফিরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রমাণ ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বেশ ভালভাবেই দিয়েছে। ঘরের মাটিতে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটি সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে। এরও আগে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয় হয়নি। গত বছর অক্টোবর-নবেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে নেমে টানা ৬ সিরিজ পর প্রথমবার হারের স্বাদ নেয় মাশরাফির দল। ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় সিরিজ। দারুণ ফর্মে থাকা দলটি ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের খরা ঘোচাতে। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে ডিসেম্বরে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ দল। তবে সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে জয়ের ধারায় ফেরে টানা ৪ ওয়ানডে পরাজয়ের পর। প্রথম ওয়ানডেতেই লঙ্কানদের হারিয়ে সুযোগ তৈরি হয় সিরিজ জয়ের। কিন্তু এবারও হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পর তৃতীয় ওয়ানডেতে পরাজিত হয়ে ১-১ সমতায় শেষ করে। অথচ এবার দারুণ সুযোগ ছিল ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে ওঠার। সে ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতার প্রয়োজন ছিল। উল্টো সিরিজ ড্র হওয়াতে অবস্থানে পরিবর্তন হয়নি বাংলাদেশের। ২০১৫ সাল ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সাফল্যে মোড়ানো বছর। এ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটে পেস বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমানের। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্য এবং মাশরাফির যোগ্য নেতৃত্বে সুসংবদ্ধ বাংলাদেশ দল একে একে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দেয় তিন ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এ তিনটি জয়ের মাধ্যমে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো ৭ নম্বরে উঠে আসে বাংলাদেশ দল। এ তিনটি সিরিজের আগে বিশ্বকাপে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা এবং বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে শতভাগ জয় পাওয়াটাও কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর সবগুলোই এসেছে মাশরাফির অধীনে। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেও দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার জন্য আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হতো। আর সেটা ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত র‌্যাঙ্কিং অনুসারে। টাইগারদের ঈর্ষণীয় নৈপুণ্য বিষয়টি নিশ্চিত করে ভালভাবেই। বিশ্বের সেরা আটটি দলের একটি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত করে ৭ নম্বরে থেকে। সেই অবস্থান এখনও ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আগামী ১ জুন ইংল্যান্ডে শুরু হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। গত দুই আসরে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয় আটে। ওই সময় বাংলাদেশ দল ছিল র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে। একই কারণে ২০১৩ সালের টুর্নামেন্টেও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে প্রথম দিকের ৫ আসরেই খেলেছিল। অবশ্য ১৯৯৮ সালে প্রথম যে আসরটি শুরু হয়, সেটার নাম ছিল নকআউট বিশ্বকাপ। প্রথম সেই আসরটি এককভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। আর ২০০০ সালেও সেটার নাম নকআউট বিশ্বকাপই ছিল। ২০০২ থেকে এ আসরটির নাম বদলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়। ২০০৬ সালের আসরটি শেষে তিন বছর বিরতি নিয়ে পরের আসরটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের সে আসরে আর খেলা হয়নি বাংলাদেশের। কারণ নতুন নিয়মে ৮ দল খেলেছে সেবার। তারপর চার বছর পর পর আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আসরেও র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় খেলতে পারেনি টাইগাররা। অবশেষে এ বছর আবার ফিরেছে টাইগাররা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এবার তাই নতুন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সপ্তম দল হিসেবে দারুণ কিছু করে দেখানোর পরীক্ষা। আর সম্প্রতিই মাশরাফি টি২০ থেকে অবসর নিয়ে ফেলার কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে তার দিকে বিশেষ নজর থাকবে। কারণ, শুধু এই ফরমেটেই এখন পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি। দেশের পক্ষে সফলতম অধিনায়ক তিনি জয়-পরাজয়ের অনুপাতে। ইংল্যান্ডের পরিবেশে আরও মানিয়ে নেয়ার জন্য এ মাসের ২৬ তারিখেই ঢাকা ত্যাগ করবে বাংলাদেশ জাতীয় দল। ১০ দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। অবশ্য এই ক্যাম্পে দলের সঙ্গে থাকতে পারবেন না কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কারণ, তারা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) টি২০ আসরে খেলছেন এই মুহূর্তে। ৬ মে কন্ডিশনিং ক্যাম্প শেষ করেই আয়ারল্যান্ডে যাবে বাংলাদেশ দল। সেখানে সিরিজ শুরুর আগেই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন মুস্তাফিজ ও সাকিব। ত্রিদেশীয় এ সিরিজটি শেষ হবে ২৪ মে। সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দলই। সিরিজ শেষে আবার ইংল্যান্ডে ফিরবে দল। শুরু হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবার এ আসরে খেলবে দল। টানা সাফল্য ধরে রাখার পরীক্ষাটাও দিতে হবে এবার বাংলাদেশ অধিনায়ককে।
×