ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানির কোন সিদ্ধান্ত নেই

চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে ইলিশের দাম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১০ এপ্রিল ২০১৭

চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে ইলিশের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বেড়েছে ইলিশের চাহিদা। সেই সঙ্গে বাজারে ছোট-বড় ইলিশের ছড়াছড়ি, রয়েছে জাটকাও। চাপিলা সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ টাকা কেজি দরে। ইলিশের নামে মৌসুমে সামুদ্রিক চন্দনা মাছও বিক্রি হচ্ছে। তবে এ বছর চাহিদা ব্যাপক নয়। তাই ক্রেতারা কিনছেন বুঝেশুনে। পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়া বাঙালী সংস্কৃতির অংশ না হলেও রাজধানীর বাজারে এ অজুহাতে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। কিনছেন শৌখিন ক্রেতারা। আর এ সুযোগে মজুদ করা ইলিশ চড়া দামে বিক্রি করছে সুপারশপগুলোও। আর ক’দিন পরই শুরু হচ্ছে বাংলা নতুন বছর ১৪২৪। ঐতিহ্য না হলেও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ। তবে বাড়তি চাহিদা থাকায় রাজধানীর বাজারে মাছ বিক্রেতাদের ডালায় শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের ইলিশ। সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে দোকানগুলোতে বাড়তি আনাগোনাও রয়েছে ক্রেতাদের। অনেকেই কিনছেন ইলিশ। বৈশাখকে সামনে রেখে পিছিয়ে নেই সুপারশপগুলোও। ইলিশ মজুদ করেছে রাজধানীর সুপারশপগুলো। তবে তারা বলছেন, বৈশাখে মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যেই তাদের এ আয়োজন। সুপারশপ কর্তৃপক্ষের দাবি, ইলিশ ধরায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার প্রেক্ষিতেই হিমায়িত ইলিশ বাজারজাত করছেন তারা। পহেলা বৈশাখে ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়া রীতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের কী সম্পর্ক তা কেউই খুঁজে পান না। তার পরও সংস্কৃতি রক্ষার নামে যেভাবে জাটকা ও মা ইলিশ খাওয়ার মহোৎসব চলে তাতে ইলিশের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ ভাগ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের নদ নদীতে ধরা মাছের ১২ শতাংশই ইলিশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) এর অবদান এক শতাংশ। এক মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত করতে পারলে বছরে ইলিশের বাণিজ্য হতো কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয় এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মা ইলিশ সুরক্ষা ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করায় প্রতিবছরই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, সরকারের বাস্তবমুখী বিভিন্ন কর্মসূচীর ফলে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। উৎপাদন বাড়াতে জাটকা ও মা ইলিশের প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা এ বিষগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে ইলিশ রফতানি নিষিদ্ধ রয়েছে। এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রফতানি করে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলছেন, ইলিশ রফতানির কোন সিদ্ধান্ত সরকার এখনও নেয়নি এবং আপাতত পরিকল্পনাও নেই। সরকার ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ইলিশ নিয়ে গবেষণাও চলছে।
×