ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওটিসি মার্কেট ঢেলে সাজাতে চায় ডিএসই

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৮ মার্চ ২০১৭

ওটিসি মার্কেট ঢেলে সাজাতে চায় ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট ঢেলে সাজাতে চায় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানি আইনের মাধ্যমে ১১৭ নামক ফরম পূরণ করে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করেন তা ওটিসির মাধ্যমে করাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) কাছে ওটিসি আইনের সংশোধন প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডিএসই। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ ধরনের কোম্পানির মালিকানা বা শেয়ার কেনাবেচায় স্টাম্প ফি বাবদ (দেড় শতাংশ) অর্থ খরচ হয়, ওটিসির মাধ্যমে লেনদেন হলে তা এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। এ ক্ষেত্রে কেবল ব্রোকারেজ কমিশন (প্রতি ১০০ টাকায় সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা) দিয়েই শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন তারা। এ ছাড়া বেমেয়াদি বা ওপেন-এ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড ওটিসি বাজারের মাধ্যমে কেনাবেচার সুযোগ রাখা হবে। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত অফিসেই কেবল এ ফান্ড কেনাবেচা হয়। ডিএসই কর্মকর্তারা জানান, ওটিসি বাজার কার্যকর করতে এর শেয়ার লেনদেন প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং ব্যবহারকারীবান্ধব করা হবে। মূল বাজারের মতো এ বাজারেও ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে তাদের শেয়ার ক্রয় বা নির্দিষ্ট কোন শেয়ার ক্রয়ের আদেশ দিতে পারবেন। ওটিসি বাজারকেও মূল শেয়ারবাজারের মতো ইলেক্ট্রনিক প্লাটফর্মে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন কেবল বিক্রেতা তাদের আদেশ প্রকাশ করতে পারেন। ওই বিক্রির আদেশ দেখে সমমূল্যে এবং সমুদয় শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন কেউ। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবটি তারা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। ডিএসই বিদ্যমান ওটিসি আইনের সংশোধন চেয়েছে। তবে কমিশন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করে ডিএসইর প্রস্তাবকে কিছুটা সংশোধন করে নতুন আইন কার্যকর করার চিন্তা করছে। জানা গেছে, ওটিসিতে বর্তমানে ৬৬ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি আছে, যেগুলোর অস্তিত্ব নেই বা কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। এ ধরনের কোম্পানি বাদে মাত্র ৩২টি কোম্পানি নতুন ওটিসিতে তালিকাভুক্ত হবে। বাকিগুলোকে বাদ না দিয়ে পৃথক করে রাখা হবে। এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপক পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, যারা এখনই মূল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না, তবে বিশেষ প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করতে চায় বা কেউ নিজের শেয়ার বেচে দিতে চায়, তাদেরও শেয়ারবাজার ব্যবহারের সুযোগ করতে দিতে চায় ডিএসই। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি কত বড় বা ছোট, তা বিবেচনা করা হবে না। এখানে মূল বাজারের মতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের খুব বেশি কড়াকড়ি থাকবে না। যিনি শেয়ার বিক্রি করবেন এবং যিনি কিনবেন, তারা উভয়ই জেনেবুঝেই এ লেনদেন করবেন। তিনি আরও বলেন, আরজেএসসিতে গিয়ে ১১৭ নামক ফরম পূরণ করে যারা শেয়ার কেনাবেচা করেন তারা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করেন। এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা কম থাকায় দর কষাকষির যথেষ্ট সুযোগ থাকে না। ডিএসই এ ধরনের শেয়ারের ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য এমন প্লাটফর্ম করে দেবে, যেখানে তারা তাদের শেয়ারের সবচেয়ে ভাল মূল্য পাবে। বিক্রেতা তার শেয়ারের জন্য নির্দিষ্ট দর চাইতে পারবে। আবার নির্দিষ্ট দরের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দরের একটি সীমাও প্রকাশ করতে পারবে। অথবা পারস্পরিক দর কষাকষির মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ পাবে। অবশ্য এ দর কষাকষি ব্রোকারের মাধ্যমে হতে হবে। প্রসঙ্গত, যৌথ মূলধনী কোম্পানির নিবন্ধক সংস্থা আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডাররা ১১৭ নামক ফরম পূরণ করে নিজেদের শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করেন। উল্লেখ্য, মূল শেয়ারবাজারে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ রাখতেই ওটিসি বাজার করা হয়েছিল। তবে কোন কোম্পানি এখন পর্যন্ত এখানে নিজে থেকে শেয়ার কেনাবেচার জন্য আসেনি। মূল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত থাকার যোগ্যতা হারানো কোম্পানিকে ২০০৯-১০ সালে একাধিক দফায় নির্দেশনা দিয়ে তালিকাচ্যুত এবং ওটিসিতে পাঠানো হয়েছিল। বিদ্যমান আইনে এ বাজারে লেনদেন প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং বিক্রেতানির্ভর বাজার। কেবল বিক্রেতার দেয়া আদেশের বিপরীতে ক্রেতা ক্রয় আদেশ দিতে পারেন। লেনদেন হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এ কারণে গুটিকয় কোম্পানির শেয়ার ছাড়া এ বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় না।
×