ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শততম টেস্টে স্মরণীয় জয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ মার্চ ২০১৭

শততম টেস্টে স্মরণীয় জয়

বাঘে-সিংহে লড়াই সব সময় দর্শনীয় হবেÑ এমন কোন কথা নেই। ক্রিকেটের বাঘ-সিংহের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। তবে এ দফায় সমুদ্রের টিপ কলম্বোয় ওই দুই শক্তিমানের রণ উপভোগ্যই হয়েছে। সিংহের নিজ অরণ্যে সাহসী বাঘের জয় সত্যিই বিস্ময়কর। ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ‘জয় বাংলা কাপ’ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে শেষ হাসিটি হেসেছে বাংলাদেশ। ওটি ছিল টাইগারদের শততম টেস্ট ম্যাচ। এই ম্যাচে জিতে একদিকে টাইগাররা দেশের সম্মান বাঁচিয়েছে সিরিজ পরাজয়ের লজ্জা উড়িয়ে দিয়ে। অপরদিকে বিরল সম্মানও বয়ে এনেছে চার উইকেটে লড়াকু জয়ের ভেতর দিয়ে। বিদেশের মাটিতে দেশের খেলোয়াড়রা একের পর এক নাজেহাল হতে থাকলে, দল ধারাবাহিকভাবে হারতে থাকলে মানুষের মনের অবস্থা কেমন হয় তা বলাই বাহুল্য। নিশ্চয়ই মনে আছে নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে দেশবাসীর কত আশাই না ছিল! সিরিজ দুটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। যদিও টেস্টে মিলেছিল কিছুটা সান্ত¡না পুরস্কার। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিল স্বপ্নের মতো একদিন। সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের দেড় শ’ পেরনো ইনিংস, পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটিÑ সবই স্বপ্নতুল্য। রেকর্ডবুক সমৃদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলি এখনও অনেকটাই শূন্য। শত ম্যাচে জয় এসেছে মাত্র নয়বার। এমন একটি বাস্তবতায় ইতিবাচক অর্থে ‘লংকাকা-ই’ ঘটিয়েছে মুশফিক বাহিনী। এখন আর কেউ টেস্টে বাংলাদেশকে বাঁকা কথা শোনাতে পারবে না। স্মরণে রাখতে হবে নিউজিল্যান্ডেও টাইগাররা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল তাতে বাংলাদেশের টেস্ট শক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছিল বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে বাঘা বাঘা দেশ। বলাবহুল্য, দেশের জন্য এটাই বড় অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে ক্রিকেটে ‘হোম গ্রাউন্ড’ বলে যে টার্ম রয়েছে সেটি থেকে বেশির ভাগ সময়ে ফায়দা নিয়ে থাকে স্বাগতিকরাই। দেশের বাইরে এর আগে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের কাছে লাগাতার হার দিয়ে লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গেলে অবশ্যই ওই হোম গ্রাউন্ডকেই ভাল নম্বর দিতে হবে। শ্রীলঙ্কাকে তাদের হোম গ্রাউন্ডেই হারিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে ঘুরেই দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। শততম টেস্টে জয়ের ইতিহাস খুব বেশি দেশের নেই। অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের রয়েছে। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য (সেঞ্চুরি ও ৬ উইকেট) ওই টেস্ট ম্যাচ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, সন্দেহ নেই। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে তামিম ও সাব্বিরের ব্যাটিং দক্ষতা জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। ম্যাজিক বয় মুস্তাফিজ ও মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে। আসলে টিমওয়ার্ক সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলেই এমন একটা স্বপ্নের জয় ধরা দিয়েছে। ম্যাচ জিততে জিততে হেরে বসার দুঃস্বপ্ন ঝেড়ে ফেলে সগৌরবে উঠে দাঁড়াক মুশফিকের দল। স্বাধীনতার মাসে আরেকটি গৌরবময় জয়ের আনন্দমুখর স্বাদ এনে দেয়ার জন্য টাইগারদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। সামনে অভিন্ন প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ। দুটি সিরিজে টাইগারদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুকÑ এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×