ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রাঙ্ক পলোত্তা

নতুন গেমিংয়ের অগ্রদূত নিনটেনডো সুইচ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৮ মার্চ ২০১৭

নতুন গেমিংয়ের অগ্রদূত নিনটেনডো সুইচ

নিনটেনডোর ক্লাসিক ভিডিও গেম ফ্রাঞ্চাইজি ‘দি লিজেন্ড অব জেলদা’ সর্বদাই দর্শককে ভিন্ন এক জগতে টেনে নিয়ে যায়। সে কারণেই আমি যখন ১১ বছরের কিশোর সে সময় সারাটা দিন আমি নিনটেনডো ৬৪ তে ‘দি লিজেন্ড অব জেলদা : ওকারিনা অব টাইম’-এ নানা দেশ বিচরণ করে বেড়িয়েছি। এখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক। (দুর্ভাগ্যবশত) আমার দিনে দশ ঘণ্টা বাড়িতে বসে থাকার মতো বিলাসতা করার উপায় নেই। সুইচ এন্টার দিলাম। নিনটেনডোর সর্বশেষ প্লাটফর্মে আমার সেই বাছ-বিচারের সুযোগ নেই। নিনটেনডো সর্বদা দুই ধরনের কনসোল বিক্রি করেছে। একটি বাড়ির জন্য। অন্যটি বাইরের জন্য। তবে সুইচ হচ্ছে এই দুইয়ের শঙ্কর রূপ। ওটাকে ডকে রেখে টিভিতে প্লে করুন। অথবা কন্ট্রোলার পুলিকে কনসোলের দুইপাশে সংযুক্ত করে চালান। ওটাকে টেবিলের উপরও রেখে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা যেতে পারে। বিভিন্ন মোডের মধ্যে খুব সহজে বেঁধেও রাখতে পারেন। এতে আপনাদের খেলায় খুব একটা ব্যাঘাত ঘটবে না। সম্প্রতি সিএনএন টোকের সুইচ নিয়ে খেলার সুযোগ হয়েছে। দেখা গেছে যে নিনটেনডোর সৃষ্টি করা জগতগুলো এটি আপনার সামনে উন্মোচিত করে দিতে পারে অথচ তার জন্য বাস্তব জগত থেকে আপনাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হতে হবে না। ছোট্ট বয়সে বাবা-মা আমাকে একটা অপশন দিয়েছিল : আমি একটা টিভি কনসোল পেতে পারি সেখানে গ্রাফিক্স ভাল অধিক আকর্ষণীয় গেমের ব্যবস্থা আছে অথবা পেতে পাড়ি ‘গেম বয়’ এর মতো একটা মোবাইল ব্যবস্থা যা আমাকে ক্ষুদ্রতর অভিজ্ঞতা দিলেও চারদিকে বিচরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন সুইচ পেয়ে যাওয়ায় আমি দুটো কাজই করতে পারি। কাজেই নিনটেনডোর জেলদার সর্বশেষ কিস্তি ‘লিজেন্ড অব জেলদা, ব্রেথ অব দ্য ওয়াইল্ড’ দেখার মাঝপথে আছি এমন সময় আমাকে আসন থেকে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করার কিংবা নিজের কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল। সেক্ষেত্রে গেমটিকে থামিয়ে আমার সঙ্গে নেয়ার প্রয়োজন আদৌ হবে না। পোর্টেবল মোডে ব্যাটারির শক্তি কম থাকে। অন্যদিকে সুইচের মবিলিটি হলো সিমলেস। এর ফলে সুইচ নিনটেনডোর শ্রেষ্ঠ সম্পদÑ এর ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি হওয়ার গর্ব করতে পারে। মারিও থেকে শুরু করে পোকিমন পর্যন্ত সবকিছু সন্ধান করে দেখুন। এবারের গ্রীষ্মে পোকিমন গো নিয়ে ক্রেজ চলেছে। অসংখ্য লোক চারিজার্ড খুঁজে বের করার জন্য পার্কে ছুটে গেছে। তবে নিনটেনডোর গেম সিরিজ ও চরিত্রগুলোর মোবাইল ভবিষ্যত কেমন দেখতে হতে পারে আমরা দেখেছি। অনেকটাই দেখতে ছিল শেষবারের অসাধারণ উদ্ভাবনী গেম নিনটেনডো উই’য়ের মতো। এরপর নিনটেনডো গেমিংয়ের আদর্শ রীতিনীতিগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু গ্রহণ করে। এভাবেই এসেছে সুইচ গ্রেট। তবে এর মধ্যে কিছুটা ঝুঁকিও আছে। যেমন গোটা পরিবারের মজার খেলা ‘১-২ সুইচ’। গেমটি কনসোলের টেবিলটপ মোডে সেট করা এবং এতে একদল লোকের ‘কুইক ড্র’ নামে বুনো পশ্চিমের পিস্তলের দ্বন্দ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে গাভীর দুগ্ধ দোহন পর্যন্ত সব ধরনের গেম খেলার সুযোগ থাকে। ১-২ সুইচের বেশির ভাগ গেম নিঃসন্দেহে মজার। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ক্রিনের পরিবর্তে প্রতিপক্ষের দিকে তাকানোর প্রয়োজন হয়। ব্যাপারটা বেশ কয়েক বছরের ভিডিও গেমের মাসল মেমোরির পরিপন্থী। সত্যি কথা বলতে কি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গাভী দোহনের সময় প্রসারিত প্রত্যক্ষ দর্শনগত যোগাযোগের দ্বারা কারোর দিকে তাকিয়ে থাকা স্রেফ এক অদ্ভুদ ব্যাপার। তা সত্ত্বেও এ ধরনের অদ্ভুত ব্যাপারস্যাপার বা অস্বাভাবিকতার কারণে সুইচের আবেদন বা আকর্ষণ ক্ষুণœ হয় না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ সুইচ চালু হওয়াটা গেমারদের জন্য এক দারুণ ঘটনা। তবে নিনটেনডোর পণ্য এটা তার চেয়েও বড় ব্যাপার। গত কয়েক বছরে ভিডিও গেম কোম্পানির আকর্ষণ বা জৌলুস খানিকটা ক্ষুণœ হয়েছে। সেটা এই কারণে হয়েছে যে সনি কোম্পানির প্লেস্টেশন ও মাইক্রেসফটের এক্সবক্সের মতো অধিক শক্তিশালী ব্যবস্থা হার্ডকোর গেমারদের কব্জা করে ফেলেছে এবং অন্যদিকে স্মার্টফোন ও ট্রাবলেট সাধারণ গেমারের বাজার আঁকড়ে ধরেছে। ভিডিও গেমের রাজ্যে আবার রাজত্ব করার উদ্দেশ্যে এই দুই বাজারের মধ্যে একটা স্থান খুঁজে পাওয়ার জন্য কোম্পানির প্রয়োজন নিনটেনডো সুইচ। কোম্পানি সেটা করতে পারবে কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়। তবে সুইচ নিঃসন্দেহে সঠিক পথে একটা পদক্ষেপ এবং সম্ভবত এমন এক পদক্ষেপ যার মধ্যে দিয়ে গেমিংয়ের এক নতুন জগত সূচীত হতে যাচ্ছে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক, সূত্র ॥ সিএনএন
×