ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও কোচই ঠিক করেনি বাফুফে!

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৮ মার্চ ২০১৭

এখনও কোচই ঠিক করেনি বাফুফে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মানুষ যখন খাদের কিনারায় চলে যায়, অধঃপতনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়, ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় কিংবা গহীন অতল কুয়ার গভীরে তলিয়ে যায় ... তখন সে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে খুড়কুটো হলেও আঁকড়ে ধরে, বাঁচার শেষ একটা চেষ্টা করে। বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হয়েছে এখন একই অবস্থা। ‘ভুটান-লজ্জা’র পর দেশের ফুটবল বলতে গেলে রসাতলে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলেও খাবি খাচ্ছে এদেশের ফুটবল। যার সর্বশেষ দুটি প্রমাণ শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবলে তিন ক্লাব ঢাকা আবাহনী, চট্টগ্রাম আবাহনী এবং ঢাকা মোহামেডানের ব্যর্থতা এবং এএফসি কাপে মালদ্বীপের মাজিয়া ক্লাবের কাছে ঢাকা আবাহনীর হার। খাদের কিনারা থেকে উঠতে গেলে চাই সাফল্য, চাই জয়। আর সেটার জন্য চাই সদিচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৯৩। যা তাদের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বনিম্ন র‌্যাঙ্কিং। এখন এই অবস্থা থেকে কিছুটা উত্তরণের একটা ধাপ বা উপায় আছে। তার নাম বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আন্তর্জাতিক এ ফুটবল আসর চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে। যেখানে ভাল ফল করতে পারলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে লাল-সবুজ বাহিনী। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আসরে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়েছিল। এবার কেমন করবে তারা? গতবার অংশ নেয়া আট দলের মধ্যে বাংলাদেশের দল ছিল দুটি। জাতীয় দল ও অনুর্ধ ২৩ দল। এবারও দুই দল খেলানোর পরিকল্পনা ছিল বাফুফের। যদিও সে পরিকল্পনা থেকে ইতোমধ্যেই সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি। আসন্ন আসরটিতে কেমন ফল করবে বাংলাদেশ দল? এ নিয়ে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা যতটা না ভাবিত, ঠিক ততটাই যেন নিষ্ক্রিয় এবং উদাসীন বাফুফে। যদিও টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে জাতীয় দলের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছেÑ দলে নেই কোন হেড কোচ। আর মাত্র সময় আছে এক মাস। অথচ এখনও জাতীয় দলের জন্য একজন কোচই চূড়ান্ত করতে পারেনি ন্যাশনাল টিমস কমিটি। এই কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদের কথার সঙ্গে কাজের মিল খুব কমই পাওয়া যায়। তিনি গণমাধ্যমকে গত ১৬ জানুয়ারি বলেছিলেন জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেই জানা যাবে কে হচ্ছে টম সেইন্টফিটের উত্তরসূরি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। অথচ এখনও কোচের দেখাই নেই। ফলে ফুটবলমোদীরা প্রশ্ন তুলছেন কাজী নাবিল এই পদে থাকার কোন যোগ্যতা আদৌ রাখেন কি না। অথচ ফুটবলের এই নিদারুণ দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হতে পারত মামুনুল-বাহিনীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আদর্শ মঞ্চ। কেননা আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টটি ফিফা স্বীকৃত। উল্লেখ্য, ফিফার আইন অনুসারে স্বীকৃতি পাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো কিন্তু একই শ্রেণীর নয়। এগুলোর মধ্যে আবার শ্রেণীবিভাগ আছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ টায়ার। ‘টায়ার’ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে স্বীকৃত প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। তাছাড়া প্রীতি ম্যাচ খেললে সেটা হবে ‘ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীত ম্যাচ।’ আবার কোন প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হলে সেটা হবে ‘ফিফা আন্তর্জাতিক ম্যাচ।’ গত দুই আসরের মতো আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টটির ম্যাচগুলোকেও ‘টায়ার-১’এর স্বীকৃতি দেয়ার কথা ফিফার। এই ম্যাচগুলো ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের মর্যাদা পেলে সেটা প্রতিটি দেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৯৩, এএফসি র‌্যাঙ্কিং ৩৪ এবং সাফ অঞ্চলে অবস্থান সাত দেশের মধ্যে পঞ্চম। আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ ছাড়া আরও ৫ দেশের জাতীয় দল অংশ নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের র‌্যাঙ্কিং বা টুর্নামেন্টে ভাল ফল করা নিয়ে কতটা চিন্তা আছে বাফুফের, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের ফুটবল সমর্থকরা হতাশ ও রাগান্বিত বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিংয়ের এমন অবনমনে। তারা এ দুর্দশার জন্য বাফুফেকেই দায়ী করছে। যদিও কার্যনির্বাহী কমিটির সপ্তম সভা শেষে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন চলতি সপ্তাহেই কোচ বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে আরও একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে। তা হলোÑ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে কোচ নিয়োগে বাফুফে কি দেরি করল না এবং এত দ্রুত কোচ নিয়োগ দিয়ে কতটাই বা ফায়দা হবে? নতুন কোচ এসে দলকে ভালমতো চিনতে-বুঝতেই তো টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওই আসরে বাংলাদেশ কতটাই বা ভাল ফল করবে? এবারই প্রথম নয়, কাজী নাবিলের মতো ‘করিৎকর্মা’ ও ‘বিচক্ষণ’ ব্যক্তির অধীনে ন্যাশনার টিমস কমিটি এর আগেও ঠিক এভাবেই একই কাজ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচের আগে সেইন্টফিটকে ডেকে এনে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। ফলাফল কি হয়েছে, তা সবারই জানা। এবার কি সেই একই বিষয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×