ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

লে. কর্নেল মহিউদ্দিন সেরনিয়াবাত (অব)

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৭ মার্চ ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি

বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সেই জনপদ যার ইতিহাস অন্তত পাঁচ হাজার বছর পূর্বের। কিন্তু ১৯৭১-এর পূর্বে এই দেশ কখনও স্বাধীন ছিল না। স্বশাসিত তো নয়ই। তবে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ছিল বরাবর জীবন্ত অগ্নিগিরির মতোই তীব্র। তাই তো যুগে যুগে এই জনপদের মানুষ সাধারণ কৃষক, ধর্মীয় নেতা কিংবা শিক্ষকের নেতৃত্বে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ করেছে। অকাতরে তারা প্রাণ দিয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান কখনও জেলের ভেতরে, কখনও বাইরে থেকে ধীরে ধীরে আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে লক্ষ্য রেখে ঘুমন্ত এই বাঙালী জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। যথাসময়ে তাদের মস্তিষ্কে, হৃৎপি-ে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে গেঁথে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁরই নেতৃত্বে মাত্র ৯ মাসে নিরস্ত্র বাঙালী জাতি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীকে ভয়াবহ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত ও দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সাড়ে তিন বছর পরই স্বাধীনতার এই প্রাণপুরুষকে, বাংলাদেশের স্থপতিকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। কি অকৃতজ্ঞ আমরা। গত বছর ছিল বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমি যুক্ত আছি সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী সেখানে রুটিন দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছিল। দোয়া মাহফিলে বঙ্গবন্ধুর ওপর আমি দু’একটি কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। এখানে উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরিবেশ এখনও অনুকূল নয়। বঙ্গবন্ধুর কথা এরা শুনতে খুব আগ্রহী নয়। কিন্তু যে জাতি তার স্বাধীনতার স্রষ্ঠাকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে কিভাবে? বঙ্গবন্ধুকে না জানলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তার মতো বাংলাদেশকে ভালবাসবে কিভাবে? তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবনের চুম্বক অংশ উপস্থাপন করছি। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সাহারা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মেছিল এক শিশুপুত্র, নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন খোকা। মুজিবুরের পূর্ব পুরুষ শেখ বোরহানুদ্দিন দুইশত বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইরাক থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলার টুঙ্গিপাড়ায় এসে আবাস গেড়ে ছিলেন। কঠিন ধর্মীয় অনুশাসন এবং মূল্যবোধে বিশ^াসী শেখ পরিবারের নিজস্ব মাদ্রাসায় আমপাড়ার মাধ্যমেই মুজিবের হাতেখড়ি। ছয় বছর বয়সে মৌলিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে তাকে স্থানীয় গিমাডাঙ্গা স্কুলে ভর্তি করা হয়। এই গিমাডাঙ্গা স্কুলে সেই সময়ে এক হিন্দু শিক্ষক জ্যোতিষ শাস্ত্রের ওপর ভাল জ্ঞান রাখতেন। মুজিবের বাবা শেখ লুৎফর রহমানের সঙ্গে ছিল তার সখ্য এবং শেখ বাড়িতে ছিল তার যাতায়াত। একদিন স্রেফ কৌতূহলবশত ওই জ্যোতিষী শিশু মুজিবের হস্তরেখা পড়তে গিয়ে কপাল কুঁচ্কে ফেলেন। তিনি শেখ লুৎফর রহমানকে এই বলে সতর্ক করেন যে, এই শিশু বেঁচে থাকলে বড় একটা কিছু হবে, বংশের নাম আলোকিত করবে। তবে প্রতি পদে পদে তার বাধা, এমনকি অপঘাতে মৃত্যু যোগ রয়েছে। পরবর্তীকালে সেইদিনের শিশু শেখ মুজিবুর জ্যোতিষের চিন্তা ও কল্পনারও সীমা ছাড়িয়ে শুধু বংশের নয়, সমগ্র বাঙালীর মুখ উজ্জ্বল ও আলোকিত করে ফেলবে তা কে জানত! কিন্তু নির্মম সত্য- জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী অপঘাতে মৃত্যু কিছুতেই তার পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয়নি। জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণীতে শেখ লুৎফর রহমান কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। দুই কন্যার পর প্রিয় খোকা যে তার চোখের মণি। তাই নিজের ছায়ার মধ্যেই ছেলেকে আগ্লে রাখার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি শিশু মুজিবুরকে নিজ কর্মস্থল মাদারীপুরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ইসলামিয়া স্কুলে ভর্তি করা হয়। দুই বছর এখানে থাকার পর পিতা পুনরায় গোপালগঞ্জে বদলি হয়ে গেলে মুজিবুরকে এবার গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। এখানে অধ্যয়নকালেই মুজিবুর চোখের কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অন্ধ হওয়ার উপক্রম হন। এই কারণে প্রায় চার বছর তার পড়াশোনা বন্ধ থাকে। ১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফরের কর্মসূচী নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করে। কংগ্রেস এই দুই নেতাকে গোপালগঞ্জে প্রবেশে বাধা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। এমতাবস্থায় মুজিবুর ও তার সহকর্মীরা দুই নেতাকে শুধু স্বাগতই নয়, নিজেদের স্কুলে সংবর্ধনার আয়োজন করে। ওই দুই নেতার সফরকে কেন্দ্র করে মুজিবুরের সাহসী ভূমিকার কথা যেমনি চারদিকে জানাজানি হয়ে যায়, তেমনি তিনি কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের রোষানলেও পড়েন। ফলে এই সফরের কিছুদিন পর একটি তুচ্ছ ঘটনার অজুহাতে মুজিবুরকে গ্রেফতার এবং এভাবেই তার কারা জীবনের সূচনা হয়। এক সপ্তাহ কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান। ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণীতে ভীত পিতা তাকে ফরিদপুরে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সকল নিষেধ উপেক্ষা করে শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে গিয়ে ভর্তি হন। এখানে অধ্যয়নকালেই মূলত মুজিবের নেতৃত্বের প্রাথমিক বিকাশ ঘটে। তার সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, বাগ্মিতা ও সকলের বিপদে-আপদে সক্রিয় উপস্থিতি অল্প দিনেই ক্যাম্পাসে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। নিজ নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লী থেকে উঠে আসা এই ছাত্র নেতা সমসাময়িক অনেককে পেছনে ফেলে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র সংঘের সম্মেলনে যোগ দেন। বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালে মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছর ছাত্রনেতা মুজিব কলকাতার ফরিদপুর জেলা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে সাংগঠনিক দক্ষতা, সাহসিকতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী শেখ মুজিবুর রহমানের ভেতরে এতটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ১৯৪৬/৪৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফরিদপুর অঞ্চলে মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচারাভিযানের দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয়। সেই নির্বাচনে তার অক্লান্ত পরিশ্রম, বাগ্মিতা, যুক্তি দ্বারা বোঝানোর ক্ষমতা এবং সাহসিকতায় সকলে মুগ্ধ এবং তখনি তিনি ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে নোয়াখালী ও কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বেধে যায়। শেখ মুজিব নিজ জীবনের তোয়াক্কা না করে লাঠি হাতে কলকাতার রাস্তায় সহকর্মীদের নিয়ে টহল দিয়ে দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান এবং পিতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় মাস না পেরুতেই তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাঙালীরা স্বাধীন হলেও মুক্তি পায়নি। সেই অনুভূতি ও বিশ^াস থেকেই সমমনা প্রগতিশীল ছাত্র নেতা-কর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মুজিব গঠন করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। সহসাই তিনি শাসকগোষ্ঠী মুসলিম লীগ সরকারের টার্গেট হয়ে যান। এই সময় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনের পেছনে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের অভিযোগে মুজিবুর ও অন্য বেশ কয়েকজনকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রায় সকলেই জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফেরত পায়। কিন্তু মুজিব মুচলেকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তার এই একগুঁয়েমি ও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে আটক করা হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জনক ও গবর্নর জেনারেল কায়েদ-ই-আযম জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্র নেতাকর্মী সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরদিন ভাষার দাবিতে সচিবালয়ের সামনে মিছিল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয়ের মাত্র এক বছরের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মুজিবুরকে গ্রেফতার করা হলো। বেশ কিছুদিন আটক থাকার পর তাকে জেল থেকে ছাড়া হলে টাঙ্গাইলে একটি সভায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় তিনি বক্তব্য রাখেন। ফলে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায় মুজিবকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। নতুন রাষ্ট্র প্রাপ্তির মোহ ভঙ্গ হলে এই নব রাষ্ট্রেরই প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠিত অনেক রাজনীতিকের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ৩০ জুন তারিখে গঠিত হয় অল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে। তার অনুপস্থিতিতেই প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেন যে, সদ্য ভূমিষ্ঠ এই দলটির জন্য মুজিবের ন্যায় সাহসী ও তেজদীপ্ত যুবকের নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাই কারারুদ্ধ অবস্থায়ই মুজিবকে দলের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫০ সালে কারামুক্ত হয়ে বাইরে এসে দেশের দুর্ভিক্ষাবস্থা ও ক্ষুধার্ত মানুষের করুণ চিত্র তাকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে। ঢাকায় ভুখা মিছিল আয়োজন ও নেতৃত্বদানের অপরাধে আবারও তাকে জেলে পাঠান হয়। এবার ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি কারাগারের বাইরে আসেন। কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিন কর্তৃক পুনরায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষিত হলে পূর্ব বাংলা গর্জে ওঠে। স্বাভাবিক নিয়মেই শেখ মুজিবকে বাইরে রাখা নিরাপদ নয় ভেবে যুবনেতা মুজিবকে আবার বন্দী করা হয়। কিন্তু এভাবে আটকে রেখেই তাকে কি আন্দোলন থেকে বিরত রাখা সম্ভব? ঢাকার মিছিলে তিনি যোগ দিতে পারেননি; কিন্তু রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ ও তা আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি ’৫২ শেখ মুজিব ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদ জেলখানায়ই আমরণ অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির পুলিশের গুলিতে নিহতদের সংবাদ তাদের কাছে পৌঁছলে তারা অনশন ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১১তম দিনে তেজি অথচ পাতলা ছিপছিপে মুজিবের জীবন বিপদাপন্ন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সরকার তাকে মুক্তি এবং বাইরে হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ২১ ফেব্রুয়ারির ক্ষত বাঙালীর বুক থেকে তখনও শুকিয়ে যায়নি। প্রথম শহীদ দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েই তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি। এই আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজে সাইকেল চালিয়ে ঢাকার পাড়া-মহল্লায় উপস্থিত, মিছিল-মিটিং -এ অংশ নেন ও বক্তৃতা দেন। ১৯৫৩ সালের পুরো সময়টা তিনি জেলের বাইরে সূর্যের সান্নিধ্য পেলেও তার পরিবার খুব কমই তার দেখা পেয়েছে। মূলত দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমে পুরো বছর তিনি ব্যস্ত সময় কাটান এবং এই সময়ই তিনি আওয়ামী লীগকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ১৯৫৪ সালে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা এবং কোন কোন দল ও নেতার সুবিধাবাদী নীতির কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম দিকে যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তারপরও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি এবং হক-ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর প্রতি সম্মান ও আনুগত্যের কারণে যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। নির্বাচনে গোপালগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ও মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠিত নেতা ওয়াহিদুজ্জামানের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মুজিব সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। মুজিব যুক্তফ্রন্টের তরুণ অথচ প্রভাবশালী মন্ত্রী হন। কিন্তু পাকিস্তানের প্রাসাদ ষরযন্ত্রের কারণে অল্পদিন পরই যুক্তফ্রন্ট সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের স্থান হয় সোজা কারাগারে। বছরখানেক কারাভোগের পর বাইরে এসে তিনি গণপরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নির্বাচিত হন। চলবে...
×