ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৩ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ অজপাড়াগাঁ আর পাহাড়ের বাঁকে মিয়ানমার সীমান্ত জিরো পয়েন্ট লাগোয়া ছোট খালের এপারে ঘুমধুম। ওপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে চোখে পড়ার মতো সরকারীভাবে একের পর এক উন্নয়ন কর্মকা- চলছে। এখানে বদলে গেছে ভাঙ্গা রাস্তা আর ধসে পড়া সেতু ও কালভার্ট। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক লাগোয়া পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমেও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছে ঘুমধুম সীমান্তের জনপদ। প্রায় শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ কাজ। অবশিষ্ট কাজ টুকুনও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় শুক্রবার রচিত হলো সম্ভাবনার আরেক নতুন দিগন্ত। ঘুমধুমে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আরেক দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে, তা আনুষ্ঠানিক জানান দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ঘুমধুমের মাটির উপর দিয়ে বয়ে চলা বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রীসড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তি পর্যায়ে। শীঘ্রই দোহাজাহারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় দেশটির ঢেঁকিবুনিয়া ও এদেশের ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে স্থলবন্দর স্থাপনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞজনরা। শুক্রবার সকালে ঘুমধুম স্থলবন্দরের সম্ভাব্য স্থানসমূহ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংকালে মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে কাগজকলমে ১২টি স্থলবন্দরের নাম থাকলেও কার্যকর ছিল মাত্র ২টি। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩টি স্থলবন্দর মধ্যে ১০টি বন্দরে পুরোদমে কাজ চলছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ গঠনের যে স্বপ্ন ছিল, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলবন্দর চালু করতে যাচ্ছেন। ঘুমধুমে প্রস্তাবিত স্থলবন্দর চালু হলে অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। সূত্র জানায়, মিয়ানমার লাগোয়া ঘুমধুমে স্থলবন্দর ছাড়াও সীমান্ত হাটও বসানোর আয়োজন চলছে। বৃহত্তর পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি ছিল ঘুমধুম সীমান্তে স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাট স্থাপন করার। ঘুমধুমে স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাট বাস্তবায়ন হতে চলছে শুনে ঘুমধুমের সীমান্ত অঞ্চলবাসী দারুণ উৎফুল। যেহেতু ঘুমধুমে রয়েছে প্রাকৃতিক প্রচুর সম্পদ। রয়েছে অপার সম্ভাবনা। পাহাড়ের পাদদেশে বিদ্যমান রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কুমির প্রজনন কেন্দ্র। অসংখ্য পাহাড়ে আছে নানা প্রজাতির বনজ-ফলদ বাণিজ্যিক বাগান। রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিপুল সম্ভাবনার সমাহার। রয়েছে চোখ ধাঁধানো পর্যটক স্পটও। প্রতিনিয়ত পর্যটক সাধারণের বিচরণ রয়েছে ওসব স্পটে। ঘুমধুম এলাকায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট জনরা বিনিয়োগ করেছে কোটি কোটি টাকা। তাদের মতে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণে সরকার রাজস্ব আদায়ের বিশাল একটি খাত নাগালে পেল। এসবের কারণে ঘুমধুম এখন আলোচিত একটি নামে পরিণত হতে চলছে। শুধু প্রয়োজন সরকারের নীতিনির্ধারকদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদিচ্ছা থাকা। বহুমুখী আয়ের উৎস দৃশ্যমান হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক ভাবেও ঘুমধুম সমৃদ্ধ জনপদ। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘুমধুম আর মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রমের চিহ্ন হচ্ছে মাত্র ছোট একটি খাল। ছোট ওই খালের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে ঘুমধুমে ও মিয়ানমারে অনায়াসে কথা বলা যায়। ওই খালের উপর বিদ্যমান মজবুত ঝুলন্ত সেতু। টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট থেকে বিশাল নাফনদী পেরিয়ে মংডু ঘাটে পৌঁছতে হয় ব্যবসায়ীদের। ঘুমধুম পয়েন্টে স্থলবন্দর স্থাপন হলে গাড়িযোগে আমদানিকৃত মাল বহন করা অতি সহজতর হয়ে উঠবে। কম সময়ে গন্তব্যে পণ্য পৌঁছানো ছাড়াও ব্যবসায়ীদের খরচও কমে যাবে। ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের কার্যক্রম চালু হলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হবে নিশ্চয়। দু’দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভুটান, চীন, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বহির্বিশ্বে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সৃষ্টি করা যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ঢেঁকিবুনিয়া-ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের কার্যক্রম চালু হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বহুমুখী উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এতে প্রতিদিন সরকারী কোষাগারে জমা হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রসারিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত। সবকিছু মিলিয়ে নতুন দিগন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের দ্বার আরও একধাপ উন্মোচন হচ্ছে।
×