ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অশুভ আলামত

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৫ মার্চ ২০১৭

অশুভ আলামত

তিনি লেজে কাটবেন না মাথায়, তা কারও জানা নেই! তার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সম্যক পরিচিতিও নেই বিশ্বের। তার প্রতিটি নীতিকে বঁটিতে কাটতে শুধু বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা নয়, মার্কিন কংগ্রেসের কতিপয় রিপাবলিকান সদস্য এবং মার্কিন প্রথম সারির গণমাধ্যমও সক্রিয়। তিনি অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট তার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আইন তৈরিতে অনেক সময় লেগে যায়। কিন্তু হোয়াইট হাউস কলমের খোঁচাতেই সরকারের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা প্রয়োগে এক মুহূর্তের জন্যও সময় নষ্ট করেননি ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেয়া প্রধান প্রধান প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একের পর এক নির্দেশনা জারি করে চলেছেন। শপথ নেয়ার পর অনেক কিছুই বদলে দিয়েছেন। তার প্রেসিডেন্টশিপের তেতাল্লিশ দিন গড়িয়েছে। কিন্তু এই সময়কালে ট্রাম্পের প্রশাসন যেমন অকার্যকর প্রমাণিত তেমনি নিয়োগপ্রাপ্ত অনেককেই পদত্যাগ করতে হয়েছে। অনেকে তার আহ্বান সত্ত্বেও দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। শুরুতেই বলাবলি ছিল, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট দফতরের জন্য অযোগ্য এবং তিনি বিপজ্জনক পর্যায়ের অস্থির চরিত্রের মানুষ। তার ক্ষেত্রে অনেক হিসেবই শেষ পর্যন্ত মেলে না। তার অদ্ভুতুড়ে মন্ত্রিপরিষদের মেরুদ- এখনও শক্ত হয়ে ওঠেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প-বিস্ময়যুগ শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার জয় পাওয়াটাই ছিল সাম্প্রতিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিস্ময়। অত্যন্ত ধনী ব্যবসায়ীর লেবাস হতে প্রথমবারের মতো তিনি রাজনীতির শাঁখের করাতের ওপর আসীন হয়েছেন। এমন কণ্টকাসনে উপবিষ্ট হওয়ার পর তিনি এমন কৌশল অবলম্বন করলেন, যাতে মার্কিনীদের মতো বিশ্ববাসীও প্রতিনিয়তই চমকিত ও চমৎকৃত হন। এর জন্য প্রয়োজনে তিনি অফুরন্ত নির্জলা মিথ্যা কথা বলতেও দ্বিধা করেন না। তিনি সেøাগান তুলেছেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেটার এগেইন।’ অর্থাৎ আমেরিকা এখন হীন, দুর্বল, মর্যাদায় পা-ুবর্ণ। সেই রক্তশূন্যতা তিনি দূর করবেন। কিন্তু কাদের রক্তশূন্যতা? সর্বস্তরের মার্কিনীদের নয়। তার উগ্র জাতীয়তাবাদী বলয়ে আমেরিকান হচ্ছে শ্বেতাঙ্গরা। তারা আজ হীন, দুর্বল, কর্মশূন্য! আমেরিকা যতই অভিবাসীদের দেশ হোক, এমনকি ট্রাম্প নিজেও, শ্বেতাঙ্গদের মনে নিজভূমে পরবাসী হওয়ার ভয় কৃতিত্বের সঙ্গে উস্কে দেয়াই হলো, ‘ট্রাম্পইজম বা ট্রাম্পবাদ।’ ‘আমেরিকায় প্রথম অধিকার আমেরিকানদেরই’ বলে ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প দাবি করছেনÑ তিনি দেশের পুনর্গঠনে এক মহান প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে যে নীতি নিয়েছেন তিনি, তাতে বাকি সব দেশ লাস্ট। মাঝখানে বিশেষ কোন সেকেন্ড থার্ড ইত্যাদি নেই। বন্ধু, শত্রু ভেদাভেদ নেই। নিজের দেশের স্বার্থকে প্রাথমিক গুরুত্বদানের মধ্যে নতুন কিছু নেই। আমেরিকা ফার্স্ট হোক্ ক্ষতি নেই। কিন্তু গোটা বিশ্বকে এ্যান্টি কিংবা শত্রু বা পরিত্যাজ্য করে রাখলে ফার্স্ট হওয়ার পথটি ত্বরান্বিত হতে পারে না। সংবাদমাধ্যমকে গণশত্রু বলা সাংবিধানিক গণতন্ত্রে বিপজ্জনক। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে অস্বীকার করে ট্রাম্প তার স্বেচ্ছাচারিতাকেই সামনে এনেছেন। তার অনেক বক্তব্য বর্ণবিদ্বেষী। আর সে কারণে ভারতীয় এক প্রযুক্তিবিদকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। বর্ণবিদ্বেষ যুক্তরাষ্ট্রের নিজের মধ্যেই রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণের প্রভাব গভীরভাবে বিভক্ত দেশটির রাজনৈতিক চিত্রটির ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক তিক্ততা দূর করার জন্য ভাষণটি যথেষ্ট নয়। মার্কিন মহিমায় নয়া অধ্যায় রচনার যেসব কথা বলেছেন, তাতে মার্কিন চেতনায় পুনর্জাগরণ ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং তার বক্তব্যে অশুভ আলামত যেমন রয়েছে তেমনি ভাষণটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। আলোর মশাল জ্বালাতে মার্কিনীরাই একদিন এগিয়ে আসবেন নিজেদের প্রয়োজনেই।
×