ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবহন ধর্মঘটে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের সীমাহীন ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২ মার্চ ২০১৭

পরিবহন ধর্মঘটে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের সীমাহীন ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ হঠাৎ অযৗক্তিক পরিবহন ধর্মঘটে থমকে যাওয়ায় সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে মাছ, আলু ও সবজি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণে চলা এ কারবারে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কিত হলেও দুপুরের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণায় তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তবে দেড় দিনে তাদের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেড় দিনের পরিবহন ধর্মঘটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের বেশ সময় লাগবে বলে জানান তারা। রাজশাহীর পরিবহন মালিকরা জানান, রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে দিনে অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের। বেকার হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের ২০ লাখ পরিবহন শ্রমিক। এদিকে হঠাৎ ধর্মঘটে জিম্মি হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের পুরো অর্থনীতি। গণপরিবন সঙ্কটে দুর্ভোগের শেষ নেই এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরও। ধর্মঘটে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি পণ্যের সরবরাহ। বিশেষ করে প্রতিদিনই রাজশাহী থেকে অন্তত দুই কোটি টাকার তাজা মাছ পৌঁছে রাজধানীতে। তা দু’দিন পুরোপুরি বন্ধ। এতে লোকসান হয়েছে সীমাহীন। জেলার পবা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাগমারা, মোহনপুর এবং নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলার মাছ ঢাকাসহ সারাদেশে যায়। শুধু রাজশাহী জেলার চাষিরাই প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার ১০০ ট্রাক মাছ ঢাকায় পাঠান। এখানকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে মাছ চাষ করে। অথচ দুদিন ধরে তারা কোন পণ্য পাঠাতে পারেননি। পবা উপজেলার চিটের মোড় এলাকার মৎস্যচাষি মোজাফফর আলী জানান, তাজা মাছ বিক্রি করলে চারভাগের একভাগ দাম বেশি পাওয়া যায়। পবা উপজেলার অনেক মাছচাষির ভাগ্য বদলে গেছে এই মাছ বিক্রি করে। তবে গত দু’দিন ধর্মঘটে থমকে যায় তাদের এ কার্যক্রম। একই অবস্থা পবার পারিলা এলাকার ফুলকপি চাষি ওবাইদুল ইসলামের। তিনি বলেন, জমির ফসল পচে যাচ্ছে। জমিতে ফসল পেকে যাওয়ার যেগুলো জমি থেকে তোলা হয় তার জন্য যে পরিশ্রম দেয়া হয় তার দামই ওঠে না। ওই এলাকার কয়েকজন সবজি চাষি জানান, ধর্মঘটে তাদের সবারই সর্বনাশ হয়েছে। সবজিতে পয়সা উঠে আসছে না। টানা দু’দিন পণ্য পরিবহন না করতে পারায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি তুলতে তাদের বেশ কয়েকদিন লেগে যাবে। তাই কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এ অবস্থায় দিশেহারা। তারা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন গণ পরিবহনে রাজশাহীর আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, সিম, কপিসহ নানা সবজি রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়। সবজির মৌসুম হওয়ায় এ কারবার চলছিল জমজমাট। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটে চাষি ও ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়েছে লোকসানের মুখে। এদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদেরও ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত পানামা ইয়ার্ডের ভেতরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণভর্তি ৫ শতাধিক ভারতীয় ট্রাক আটকে ছিল। বন্দর সূত্র জানায়, স্থলবন্দর খোলা রয়েছে ভারত থেকে পণ্য আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বাংলা ট্রাকের অভাবে দেশের অভ্যন্তরের এসব আমদানিকৃত পণ্য যেতে পারছিল না। পানামার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকতা জানান, ইয়ার্ডের ভেতরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি ট্রাকগুলোতে রয়েছে ফল, পিঁয়াজ, ছাই ও পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। সব মিলিয়ে দু’দিনে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলো এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী, চাষি, কৃষক থেকে শুরু করে সব সেক্টরে জড়িত লাখ লাখ মানুষের।
×