স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন শহীদ আফ্রিদি। এটিকে ‘অবসর’ না বলে ‘আত্ম উপলব্ধি’ বলাই ভাল। কারণ গত টি২০ বিশ্বকাপের পর থেকেই দলের বাইরে। আধুনিক পাকিস্তানের সফলতম অলরাউন্ডার সত্যি অবসর নিচ্ছেন কিনা, এ নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। বিশ্বকাপে ছিলেন অধিনায়ক হিসেবে, পরবর্তীতে আর দলেই ডাকা হয়নি। রবিবার শারজায় পিএসএলে (পাকিস্তান সুপার লীগ) পেশোয়ার জালমির হয়ে করাচী কিংসের বিপক্ষে ২৮ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দেয়ার পর সংবাদ মাধ্যমকে আফ্রিদি বলেন, ‘আমি আমার ভক্তদের জন্য খেলি এবং পিএসএলে আরও দুই বছর খেলতে চাই। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে নিচ্ছি। এই মুহূর্তে আমার দাতব্য সংস্থা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেশের হয়ে দায়িত্ব নিয়ে ও পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গেই প্রতিনিধিত্ব করেছি।’
এ নিয়ে কতবার অবসরের ঘোষণা দিলেন? সেটি বোধ হয় আফ্রিদির নিজেও মনে করতে পারবেন না। কখনও পরিবার ও বন্ধুদের চাপে, কখনও বা নিজের মতো করেই আবার ফিরে এসেছেন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। টেস্ট ছেড়েছেন অনেক আগে, ২০১০ সালে; গত বিশ্বকাপে ওয়ানডে (২০১৫), আর সর্বশেষ গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের (২০১৬) পর সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগাম সিদ্ধান্ত জানিয়েও ইউটার্ন করেছিলেন। বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর অবশ্য দল থেকেই বাদ পড়েন। এরপর অনেক নাটকীয়তা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) উর্ধতন কর্তারা ইঙ্গিতে জানিয়ে দেন আফ্রিদি অধ্যায় আসলে ওখানেই শেষ। তবে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ঘরোয় টি২০ আসর বিপিএলে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর নতুন প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল হক আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। এরপরও উইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ৩৬ বছর বয়সী তারকা উপেক্ষিত থেকে গেছেন। টি২০ বিশ্বকাপে কোচ ওয়াকার ইউনুসের রিপোর্ট, ‘অধিনায়ক আফ্রিদি আসলে কি বলতে বা বোঝাতে চাইছেন, ক্রিকেটাররা এ নিয়ে দ্বিধায় থাকত।’
সে সময়ের পাকিস্তান ম্যানেজার তার প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, ‘আফ্রিদি একদমই দিশাহীন একজন অধিনায়ক।’ ওই দুই রিপের্টেই তার ভবিষ্যত লেখা হয়ে যায়, আফ্রিদি একটু দেরিতে বুঝলেন, এই যা। মাঝে মাঠ থেকে অবসর নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেটিও হয়নি। পরশুর ঘোষণায়, বোঝা যাচ্ছে সেই সাধটাই এখন তার মরে গেছে। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে কেনিয়ার চার জাতি প্রতিযোগিতায় অভিষেক হয়েছিল আফ্রিদির। জীবনের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। ধুরন্ধর ব্যাটিংয়ের জন্য ভক্তদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘বুম বুম’ খ্যাতি। ক্রমশ আফ্রিদি পাকিস্তান ক্রিকেটের এক অধ্যায়ে পরিণত হন। ২১ বছরে সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৭ টেস্ট, ৩৯৮ ওয়ানডে ও ৯৮ টি২০ খেলেছেন ১ মার্চ ৩৭ বছরে পা দিতে যাওয়া তুখোড় এই অলরাউন্ডার।
ওয়ানডেতে ৩৯ হাফসেঞ্চুরি ৬ সেঞ্চুরিতে আফ্রিদির মোট রান ৮ হাজার ৬৪। ১৯৯৮-২০১০ পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র ২৭। রান ১ হাজার ৭১৬, সেঞ্চুরি ৫। আর ৯৮ টি২০তে তার মোট রান ১ হাজার ৪০৫। বোলার আফ্রিদির রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ। ৯৭ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০’র সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। ওয়ানডেতে উইকেট ৩৯৫, টেস্টে ৪৮।
শীর্ষ সংবাদ: