ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের শীর্ষ ২০ রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকের বৈঠক

প্রবাসী আয় না বাড়লে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রবাসী আয় না বাড়লে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি উত্তরণে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে রবিবার দেশের শীর্ষ ২০ রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ব্যাংকাররা হুন্ডিতে অবৈধ উপায়ে অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধে বিকাশের ক্যাশ আউট (অর্থ উত্তোলন) বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না। কেননা বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধে বিদেশে দূতাবাসগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বৈধপথে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও প্রবাসী আয় না বাড়লে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বসেছিলাম। তারা দাবি করেছেন, যেহেতু হুন্ডিরা ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশকে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন-সেহেতু বিকাশের ক্যাশ আউট বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু এ ধরনের দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্মতি দেয়নি। বিকল্প হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেটা ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের বড় অবদান রয়েছে। এর ইতিবাচক ধারা যেন অব্যাহত হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় রয়েছে। এ লক্ষ্যে বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ্যাপস তৈরি করে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিকাশ এতোদিন এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও দূতাবাসগুলোর নজরদারিতে এর সত্যতা মিলেছে। এই ধরনের কাজে সম্পৃক্ত থাকায় ইতোমধ্যে ২৫ জনকে জরিমানাও করা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমানে ছোট অঙ্কের টাকা পাঠাতে কেউ আর ব্যাংকিং চ্যানেলে যাচ্ছেন না। তারা খুব সহজে স্বল্প সময়ে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় ছোট অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যয় ফ্রি করা যায় কি-না বা ব্যাংকগুলো যেসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে-তাদের চার্জ বেশি কি-না, এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাবিনিময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অনেকসময় দর কম থাকে। এতে প্রবাসী কম আগ্রহ দেখায়। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প অঙ্কের রেমিটারদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া যায় কি-না, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি গবর্নর সুর চৌধুরী বলেন, কোন ব্যাংক ছোট অঙ্কের রেমিটেন্সে বিনিময়মূল্য নির্ধারণে বিশেষ প্রণোদনা দিতে চায়, তাদের অতিরিক্ত সেই ব্যয় সমন্বয়ে যা খরচ হবে- তা ব্যাংকের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে দেখানোর সুযোগ দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সবগুলো ব্যাংক মিলে অভিন্ন নেটওয়ার্ক স্থাপনে বিকাশকে ব্যবহারের প্রস্তাব উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেও কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। হুন্ডিওয়ালারা যাকে কোনভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি ’১৭) ৬২২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৭৩৩ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের সাত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১১১ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছিল আড়াই শতাংশ।
×