ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা একাডেমির কর্মপরিধি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলা একাডেমির কর্মপরিধি

জাতির মননের প্রতীক হিসেবে প্রচারিত বাংলা একাডেমি বিগত ছয় দশকেরও বেশি সময়ের পথ পরিক্রমায় প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষের নানা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের লেখক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীগণ বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর ভরসা করেন। তাই প্রতিষ্ঠানটির জন্য কোন্ কাজ গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন্টি জরুরী নয় তা নিয়ে নানা সময়ে নানা কথা ওঠে। কিছুটা বিতর্কেরও জন্ম হয়। যেহেতু এটি সরকারী বাজেট তথা দেশের মানুষের অর্থায়নে পরিচালিত হয়, তাই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কিভাবে প্রয়োজনীয় কর্মসম্পাদন সুসম্পন্ন হতে পারে সেই আলোচনা সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রক্তস্নাত বাংলা ভাষার অহঙ্কারের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষায় রচিত সেরা রচনাসম্ভার পৌঁছে দেয়ার আবশ্যকতা বেশি করে দেখা দেয়। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশে বাংলা একাডেমির মতো অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিগত নয় বছরের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে ওয়েবসাইটে বাংলা একাডেমি যে সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছে তার শুরুতেই রয়েছে- প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান প্রণয়নের প্রসঙ্গ। বাংলা একাডেমির দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে বাংলা একাডেমির দায়িত্ব হলো : ১. জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও প্রসার ঘটানো। ২. জীবনের সব ক্ষেত্রে ও সব স্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সংস্থাটি আত্মঘোষণায় পরিচয় দিতে গিয়ে বলছে- ‘বাঙালী জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক’। সত্যিকার অর্থেই সেটি হতে হলে, জাতির প্রত্যাশা যথাযথভাবে পূরণ করতে গেলে বছরের বারো মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টিশীলতা ও কর্মপ্রাচুর্যের স্বাক্ষর রাখার কোন বিকল্প নেই। অথচ মর্মপীড়ার সঙ্গেই বলতে হচ্ছে যে, বাংলা একাডেমি প্রকৃত নিজ কাজ নয়, এমন একটি কাজে বছরের অন্তত চারটি মাস সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে ব্যয় করে থাকে। সেটি হচ্ছে মহান একুশের বইমেলার আয়োজন। বইমেলাটি দেশে প্রকাশকরাই চালু করেছিলেন। এখন আবার সেটি প্রকাশকদের কাছেই ফিরিয়ে দেয়ার দাবি উঠছে। বাংলা একাডেমির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক গবেষণা। শুধু গবেষণা তো নয়, সুপরিকল্পিতভাবে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজনও বাংলা একাডেমির কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে। বাংলা একাডেমি তার কর্মপ্রবাহে জঙ্গমতা ও প্রাজ্ঞতার পরিচয় রাখুক- এটাই মানুষের চাওয়া।
×