ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সবকিছুই ইতিবাচক মনে করছেন তামিম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

সবকিছুই ইতিবাচক মনে করছেন তামিম

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্টে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। এমন সময় টেস্ট নেতৃত্বে অভিষেক হবে তামিমের, যখন দলের বিধ্বস্ত অবস্থা। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকুর রহীম, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হককে পাচ্ছেন না। ভঙ্গুর একটা দল নিয়েই নামছেন তামিম। ব্যাটিংয়ে সবসময়ই আক্রমনাত্মক থাকা এ ওপেনার ইতিবাচক দিকেই মনোযোগ দিতে চান। কোন নেতিবাচক কিছুই যেন তাকে ছুঁতে না পারে সেদিকেই লক্ষ্য রাখবেন। বৃহস্পতিবার টেস্টপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যেমন বলেছেন, ‘আমার জন্য এটা সুযোগ নিজের অধিনায়কত্ব কেমন, তা প্রমাণের। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। তবে আমি যে রকম অধিনায়কত্ব করি, সব পরিকল্পনা ঠিকমতো কাজে লাগলে দেখতে ভাল লাগে। পরিকল্পনা কাজে না লাগলে অন্যরকম হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব আমার জন্য নতুন। ঘরোয়া ক্রিকেটে যদিও অনেকদিন করেছি। আমার জন্যও এটা শেখার সুযোগ। আমার মানসিকতা আক্রমণাত্মক। ব্যাটিং ওভাবেই করতে পছন্দ করি। অধিনায়ক হিসেবেও আমি যতটা সম্ভব ইতিবাচক থাকতে চাই।’ ঘরোয়া ক্রিকেটে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীর নেতৃত্ব দিয়ে দলকে শিরোপা এনে দেন তামিম। বিপিএলে চিটাগাং ভাইকিংসের নেতৃত্ব দেন। টেস্টেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়েলিংটন টেস্টেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। একরকম অধিনায়কের ‘ওয়ার্ম আপ’ হয়েও গেছে। তবে সেটি মুশফিকুর রহীম ইনজুরিতে পড়ে ফিল্ডিংয়ে না থাকায়। এবারই প্রথম কোন টেস্ট শুরুর আগেই তামিম অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান। চাপ অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তামিম এসব নিয়ে যেন একদমই ভাবছেন না। বলেছেন, ‘চাপের কিছু নাই। প্রথমে আমাকে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এটা ভেবেই দেয়া হয়েছিল, অধিনায়কের কিছু হলে আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমার যে দায়িত্ব, ঠিকমতো করতে পারলে তা সবার জন্য ভাল হবে। আমার দিক দিয়ে চেষ্টা করব সবকিছু ঠিকভাবে করা। একটা পরিকল্পনা তো থাকবেই। পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ীও পরিকল্পনা করতে হবে। সবসময় আমার পরিকল্পনা কাজে দেবে না, এমনও নয়। তবে ঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমি পরিকল্পনা করেছিলাম কি না, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ তামিম আরও জানান, ‘ম্যাচের মাঝখানে অধিনায়ক হয়ে গেলে পরিকল্পনা সাজানো কঠিন হয়। যখন আপনি বুঝতে পারবেন পরের ম্যাচে অধিনায়ক, কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। আমরা টিম মিটিংয়ে যেসব পরিকল্পনা করছি, চিন্তা করছি, খেলা শুরু হওয়ার আগেও করব, ঠিকমতো কাজে লাগতে পারলে তবে ভাল ফল আসবে। আমি অধিনায়ক হলেও সবার সহযোগিতা তো লাগবে। আমি পরিকল্পনা বললাম, বোলার অন্যভাবে বল করল, তাহলে তো হবে না। সবাই এক পথে হাঁটতে হবে। তাহলে আমার কাজটা সহজ হয়ে যাবে। বাকি দশজনের জন্যও।’ মুশফিক, ইমরুল, মুমিনুল না থাকায় দল দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটা যে কেউ বুঝে। তামিমও বুঝছেন তা, ‘তারা দু’জনই (মুশফিক ও ইমরুল) এই টেস্টে (দ্বিতীয় টেস্টে) খেলতে পারবে না। ইমরুল ১০-১২ দিনের জন্য বাইরে চলে গেছে। মুশফিকের আরেকটু বেশি সময় লাগবে, ৩-৪ সপ্তাহ। আমরা আশা করেছিলাম ওরা আরও আগে ফিরবে। তবে দু’জনের চোট গুরুতর নয়। উদ্বেগের কিছু নেই। ছোটখাটো সমস্যা। আশা করছি, ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ওরা দু’জনই ফিরবে। মুশফিকের চোট বুড়ো আঙ্গুলেই। মাথায় আঘাতজনিত কোন সমস্যা নেই। আর ইমরুলের চোট উরুতে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ওরা দু’জনই প্রথম একাদশের নিয়মিত খেলোয়াড়। একজন ওপেনার। অন্যজন শুধু অধিনায়ক নয়, দলের মিডল অর্ডারের মূল খেলোয়াড়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু’জনকে আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু চোটের ওপর তো কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তামিমের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, হতাশ তিনি। এরপরও তামিম মনে করছেন ভাল খেলা সম্ভব। সেই রসদও নাকি আছে। প্রথম টেস্টে ভাল খেলা থেকেই সেই রসদ, প্রেরণা মিলেছে। পুরো সফরজুড়ে শুধু হার হলেও বাংলাদেশ দল খারাপ খেলেনি বলেই তামিম মনে করেন, ‘ফলাফলের দিকে তাকালে হয়তো মনে হবে আমরা সবম্যাচ হেরেছি। পারিনি একবারের জন্যও। কিন্তু একটু মন দিয়ে খেয়াল করলেই দেখবেন আমরা মোটেই খারাপ খেলিনি। এই ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে প্রথম ওয়োনডে থেকে শুরু করে পুরো ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ এবং সর্বশেষে প্রথম টেস্ট, আমরা হয়তো এর কোনটাই জিতিনি। কিন্তু প্রায় সব ম্যাচের কোন না কোন সময় বেশ ভাল ক্রিকেট খেলেছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছি। কখনও কিউদের চেয়ে এগিয়েও ছিলাম। জয়ের সুযোগ ও সম্ভাবনাও তৈরি করেছি। হয়ত ফলটা আমাদের পক্ষে আসেনি এই যা। বলতে পারেন, জয় ছাড়া অনেক কিছুই করে দেখিয়েছি। আমার মনে হয় ৬/৭ বছর পর নিউজিল্যান্ডের অনভ্যস্ত ও প্রতিকূল কন্ডিশনে এসে যতটা ভাল খেলা যায় আমরা চেষ্টা করেছি। আমাদের টিম পারফর্মেন্সে আমি সত্যিই খুশি। গর্বিতও। এটা সত্য, আমাদের মাঠে হয়ত কিছ ভুল ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু ভাল খেলার ইচ্ছেতে কোনই কমতি ছিল না। মানসিকতাও ছিল বেশ ইতিবাচক। আমার মনে হয় হতাশায় আচ্ছন্ন হবার মতো কিছু নেই। বরং শেষ টেস্টে মাঠে নামার আগে আমাদের সঙ্গে কিছু ইতিবাচক বিষয়ও আছে। যা ভাল খেলার রসদ হিসেবেই কাজ করবে।’ এখন ভঙ্গুর দল নিয়ে ভাল খেললেই হয়।
×