ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের কারণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের কারণ

১৮৮৭ সাল। জার্মান ডাক্তার থিয়োডার সেমিশ্চ তার কাছে আসা এক রোগীর চোখের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখলেনÑ তার আইলিডের নিচের অংশ কার্সিনোমা আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত। যা তার কর্নিয়াকে এক্সপোজডই কেবল করেনি আইল্যাশও ভেতরের দিকে কালর্ড। রোগীর অবস্থা দেখে সেমিশ্চ কৃত্রিম চক্ষু তৈরিতে বিশেষজ্ঞ দুই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা প্রতিরক্ষামূলক হাতে তৈরি গ্লাস নির্মাণ করে দেন। যার মাঝখানে ছিল স্বচ্ছ, প্রান্ত ওপেক সঙ্গে রক্ত নালীর জন্য লাল থ্রেড। এর ঠিক ২১ বছর পর সেই রোগী দুই ভাইকে চিঠি লিখে জানান- ‘আমি দিন-রাত তোমাদের তৈরি করা গ্লাস ব্যবহার করি। আর আমার অনুভূতি এখনও অনেক ভাল।’ তবে দৃষ্টিশক্তির সমস্যার জন্য গোল গ্লাস পরার ধারণাটি আরও অনেক আগের, সেই ১৮২৭-এর। জন হারস্কেল প্রস্তাব করেন এনিমেল জেলি পূর্ণ গ্লাস ক্যাপসুল হয়ত কর্নিয়ার অস্বাভাবিকতা দূর করতে পারবে। কিন্তু ১৮৮৭’র আগে কেউ ধারণাটির চর্চা করেননি। একই সময় চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র জনৈক আগস্ট মিলার বার্লিনের এক মাইক্রোস্কোপ নির্মাতাকে একটি গ্লাস ডিভাইস তৈরির অর্ডার করেন মৃতদেহের চোখ থেকে। উদ্দেশ্য ছিল তার মায়োপিয়ার সমস্যা দূর করা। আর সুইজারেল্যান্ডর চিকিৎসক এডলফ এগেন তখন কন্টাক্ট লেন্সের পরীক্ষা পরিচালনা করেন ইঁদুর, সহকর্মী ও নিজের ওপর। কন্টাক্ট লেন্সের ইতিহাস গবেষক টিমোথি বাউডেন একে বলেন, এগুলো লন্ডনের বাসের মতো। সময়ের সঙ্গে এটি মানিয়ে যায়, কিছুই হয় না। তবে সমস্যা যখন আসে তা তাৎক্ষণিক উদয় হয়। বর্তমানে প্রচলিত কন্টাক্ট লেন্সের চেয়ে পূর্বে ব্যবহৃত লেন্সগুলো ছিল আকারে অনেক বড়। আর অতটা আরামদায়কও ছিল না। এটি একসঙ্গে খুব কম সময়ের জন্য ধারণ করা যেত। কর্নিয়াতে অক্সিজেন সরবরাহ বাধার কারণে গ্লাস ধারকের দৃষ্টি খোলা হয়ে যেত। এছাড়াও আলোতেও সমস্যা সৃষ্টি হতো। এর পূর্বাবস্থাকে বলা হয় সেটলারস ডেইল। আর এজন্য রোগীকে উপদেশ দেয়া হয় প্রতি ঘণ্টায় লেন্স একবার করে খুলে রাখতে। নরম প্লাস্টিকের ব্যবহার এই সমস্যা কিছুটা দূর করে। ১৯৫০-এ চেক রসায়নবিদ ওটো ইউচটারলি ঐঊগঅ নামে এক প্রকার পলিমার আবিষ্কার করেন ,যা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকে সহজ করে তোলে। ব্যবহারকারীরা তখনও খুব স্বল্পমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ সঙ্কটে ভুগছিলেন। সেটলারস ডেইলও ছিল। কিন্তু এটি বেশি সময় ধরে ধারণ করা যেত। লেন্সগুলো ফ্লেক্সিবল ছিল তাই চোখেই সরিয়ে ব্যবহার করা যেত। শেষ পর্যন্ত ১৯৮০’র দশকের শুরুতে ডেনিশ চক্ষু বিশেষজ্ঞ মাইকেল বে, ডিসপোজেবল লেন্স চালু করেন। ব্যবহারকারীরা রক্ষা পায় নোরাং ও বাতিল হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লেন্স ব্যবহারের হাত থেকে। মাইকেল বে’র এই আবিষ্কার লেন্সের ব্যবহারকে করে অনেক আরামদায়ক ও আবেদনময়। বাউডেন লিখেন- ‘কন্টাক্ট লেন্স শিল্পের পথিকৃৎ জনসন এ্যান্ড জনসনের লেন্স টেকনোলজি তাদের করেছে মিলিওনিয়ার। আর লেন্স ব্যবহারকে করেছে সহজ। ধন্যবাদ তাদের।’ সূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
×