ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রানার্সআপ-প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাবিনাদের

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

রানার্সআপ-প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাবিনাদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হারানোর কিছুই ছিল না। এই হারে লজ্জা বা অগৌরবের কিছু নেই, বরং আছে মাথা উঁচু করা সম্মান ও প্রত্যাশা। বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশিই পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। বুধবার ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’ ফুটবলের ফাইনালে শক্তিশালী-ফেভারিট ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হলো বাংলাদেশ। লড়াই করে হারলো বাংলার বাঘিনীরা। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সন্ধ্যার ফাইনালের প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। বাংলাদেশের সিরাত জাহান স্বপ্না ম্যাচের ৩৮ মিনিটে দলের একমাত্র গোলটি করেন। স্বাগতিক দলের গোলদাতারা হলেন দাংমেই (১২ মিনিট), সাসমিতা (৬২, পেনাল্টিতে) এবং ইন্দুমতি (৬৮)। ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে বালা দেবী-কমলা দেবীর ভারত। একের পর এক উপর্যুপরি আক্রমণ শাণায় বাংলাদেশের গোলমুখে। সেগুলো দক্ষতার সঙ্গেই সামাল দিতে থাকে বাংলাদেশের গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার এবং তিন ডিফেন্ডার। তবে ১২ মিনিটে রক্ষণদুর্গে ফাটল ধরে। গোল প্রচেষ্টা সফল হয় ভারতের। গোল খেয়ে সেটা শোধের জন্য স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয় সাবিনা-কৃষ্ণারা। তারাও একের পর এক পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে ভারতীয় রক্ষণ শিবির। অবশেষে ৩৮ মিনিটে গোল করে সমতায় ফেরে লাল-সবুজরা। গোল করেন সেমিফাইনালের হ্যাটট্রিকধারী স্বপ্না। দ্বিতীয়ার্ধে এই স্বপ্নাই নিশ্চিত একটি গোল মিস করলে হতাশায় পোড়ে বাংলাদেশ দল। এই হতাশা দ্বিগুণ হয় ছয় মিনিটের মধ্যে আরও দুই গোল হজম করলে। অনেক চেষ্টা করেও ওই গোল আর শোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ আসরের গ্রুপ পর্বে (বি) বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি (০-০) বলে ভারত দলের মন খারাপ ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানর জন্য আগে থেকে আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠানের। বাংলাদেশ মহিলা দলকে দাওয়াতও দিয়ে রেখেছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু পার্টি শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ করে বাতিল করা হয় আয়োজন। তবে বুধবার বাংলাদেশকে হারানোয় এবার আর মন খারাপ করতে হয়নি ভারত দলকে। তবে এই আসরে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় মন খারাপ হয়নি গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের। কারণ যাদের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল সেমিফাইনাল খেলা, সেখানে রার্নাসআপ হতে পারাটা ছিল নিঃসন্দেহে বাড়তি অর্জন। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবগুলো আসরেই (চতুর্থ) শিরোপা জিতলো ভারত। এ আসরে বাংলাদেশ এবারই প্রথম ফাইনালে খেলে এবং রানার্সআপ হয়। এছাড়া তৃতীয় হয় ২০১০ এবং ২০১৪ আসরে (নেপালের কাছে দুবারই সেমিফাইনালে হেরে)। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য ভারত অনেক এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। ভারত ৫৪, বাংলাদেশ ১১৪। হেড টু হেড পরিসংখ্যানেও যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। সাতবারের মোকাবেলায় তারা জিতেছে ৬টিতেই। একটি ম্যাচে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এই আসরে বাংলাদেশ দল গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করে। পরের ম্যাচে ভারতকে রুখে দেয় গোলশূন্য ড্র করে এবং অপরাজিত গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। সেমিতে তারা মালদ্বীপকে কচুকাটা করে ৬-০ গোলে। এই জয়ে নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথমবার এই আসরের সেমির বাধা ডিঙ্গিয়ে ঐতিহাসিক এবং স্বপ্নের ফাইনালে উন্নীত হয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। তবে অল্পের জন্য ইতিহাস গড়া হলো না সাবিনাদের। ভারতের মাটিতে ভারতকেই হারিয়ে শিরোপা জিতে অবিস্মরণীয় কীর্তিগাথা রচনা করতে পারলো না। গোলাম রব্বানী ছোটনের বহুদিনের স্বপ্ন ছিল সাফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের হাত থেকে দেশের হয়ে একটি ট্রফি নেয়ার। নিজের সে স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন সেমির আগেই। কিন্তু তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। কারণ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়িতে পা রাখেননি সাফের সভাপতি।
×