ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সফটওয়্যার খাতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

সফটওয়্যার খাতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

সুমন্ত গুপ্ত ॥ গুটি গুটি পায়ে প্রযুক্তি জগতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেরিতে প্রবেশ হলেও অর্জনের দিক থেকে বেশ এগিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার বিদেশের বাজারে ক্রমশ দ্বার উন্মোচন করছে। এ অবস্থায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশী সফটওয়্যার রফতানি করে বছরে ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে বছরে ১০ কোটি ডলার ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে সফটওয়্যার রফতানি করে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে লক্ষাধিক যুবকের। বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশী সফটওয়্যার। এ খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ১৫টি রফতানি খাতের একটিতে স্থান করে নিয়েছে এ খাত। ফলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সফটওয়্যার রফতানিতে সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এ খাতে রফতানি বেড়েছে সাড়ে সাত গুণ। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সাল নাগাদ সফটওয়্যার রফতানি ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা। আবার স্থানীয়ভাবেও অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটা, আবেদন-নিবন্ধন ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) পরিশোধ; বিভিন্ন ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মুঠোফোন কোম্পানির প্রয়োজনীয় এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত (আইটি) অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় ও সফটওয়্যারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের সফটওয়্যার খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস) সূত্র মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা রফতানির মাধ্যমে বেসিস সদস্যভুক্ত ১৮৫টি কোম্পানি ৬০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ খাতে কর্মরত আছেন আড়াই লাখের বেশি লোক। সঠিক পরিকল্পনায় এগোতে পারলে ২০১৮ সালের মধ্যে জনবল ১০ লাখে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করেন এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। সফটওয়্যারের অভ্যন্তরীণ বাজারটিও বেশ বড়, যার আকার ৪৫ থেকে ৫০ কোটি ডলার। রফতানি আয় যোগ করলে এ খাতের আকার এখন ৭০ কোটি ডলারের বেশি। কাজের ধরন অনুযায়ী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো দুই রকমের সরাসরি সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোকে বলা হয় আইটি কোম্পানি এবং সফটওয়্যার-নিয়ন্ত্রিত সেবা প্রদানকারী বা আইটিইএস কোম্পানি। বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪৫ ভাগ আয় আসে সফটওয়্যার বিক্রি করে, বাকি ৫৫ ভাগ আয় আসে আইটিইএস-সংক্রান্ত সেবা থেকে। দেশী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, আইটি-সংক্রান্ত সেবা বা আইটিইএস, ই-কমার্সভিত্তিক ওয়েবসাইট সেবা, মুঠোফোনের এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন, আইটি অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সেবা দিচ্ছে। বছর কয়েক আগেও সফটওয়্যার খাতে বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে একচেটিয়া ব্যবসা করত। কিন্তু ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নের পথ ধরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু“করে। দেশে ব্যাংকিং, ই-গবর্নমেন্ট কার্যক্রমে দেশী কোম্পানির অংশগ্রহণ যেমন বেড়েছে তেমনি বহির্বিশ্বেও সমাদৃত হচ্ছে বাংলাদেশী সফটওয়্যার। বিশ্বে বর্তমানে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি ডলারের সফটওয়্যার রফতানির বাজার রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী ভারত একাই রফতানি করে আট হাজার কোটি ডলারের। শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন প্রভৃতি এশীয় দেশও এ খাত থেকে ভালো আয় করছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ২০১১ সালে এ খাতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ৩০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকেও রেখেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩০টি দেশে সফটওয়্যার সেবা রফতানি করে। সবচেয়ে বড় পাঁচটি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্ক। কোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে একাধিক ব্যাংক এখন বাংলাদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ব্যাংকিং খাতে ৩৬ ভাগ দেশীয় সফটওয়্যার, ৫৭ ভাগ ব্যাংকে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদেশী সফটওয়্যার। বিদেশী সফটওয়্যার যেখানে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকায় কিনতে হয় সেখানে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকায় দেশী সফটওয়্যার পাওয়া যাচ্ছে। মেইনটেন্যান্স ও কাস্টমাইজেশনেও বিদেশীর তুলনায় দেশীয় সফটওয়্যারে খরচ কম। এক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগী হলে ব্যাংকিং খাতে পুরোটাই দেশীয় সফটওয়্যারের আওতায় আসতে পারে। এজন্য দেশীয় কোম্পানিকে সহজ শর্তে ঋণ, সরকারী ব্যাংকে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি বিদেশী সফটওয়্যারে বর্ধিত কর আরোপের দেশীয় সফটওয়্যার বাজার এগিয়ে যাবে।
×