ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ইইউ বিজনেস ক্লাইমেট সংলাপ

ইইউর চোখে ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগে ৫ বাধা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

ইইউর চোখে ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগে ৫ বাধা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে প্রধান পাঁচটি বাধাকে চিহ্নিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাধাগুলো দ্রুত দূর করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ব্যবসায়িক পরিবেশ ঠিক করা, ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করা, সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা, কমিউনিকেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব প্রতিবন্ধকতা সমাধানে বাংলাদেশের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন এসব তথ্য তুলে ধরেন। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সকালে দ্বিতীয় বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিজনেস ক্লাইমেট সংলাপ শুরু হয়। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ইইউ বিজনেস কাউন্সিল যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করেছে। সংলাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তার নেতৃত্বে মোট ২৮ সদস্যের একটি দল এ সংলাপে অংশ গ্রহণ করে। অপরপক্ষে পিয়েরে মায়াদুন ইইউ দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ছাড়া ইইউভুক্ত নয়টি দেশের নয় রাষ্ট্রদূত ও ১৪টি বিজনেস ফোরামের প্রতিনিধিসহ মোট ৩৪ জন বিদেশী অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরে এরই মধ্যে আমরা পাঁচটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছি। কমিটি কিছু ত্রুটি বের করেছে, সেগুলো সমাধানে কাজ করছি। ইইউর সঙ্গে আমরা কোন দূরত্ব রাখব না। আমাদের রফতানির ৫৫ ভাগ আয় আসে ওই ২৮টি দেশ থেকে। আমরা সব সমস্যা দূর করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে ইইউ। চারটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সব দেশই তাদের শিল্প রক্ষায় শুল্ক আরোপ করে থাকে। আমরাও আমেরিকাতে ১৬ ভাগ শুল্ক দিয়ে ব্যবসা করে থাকি। বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ২৩টির কাজ শুরু হয়েছে। ইইউ চাইলে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে আমরা ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছি। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ইইউ মনে করে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধাটি হলো বাণিজ্যসহায়ক পরিবেশ তৈরি না হওয়া। ইইউ মনে করে, শুধু রফতানি দিয়েই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফবিআই)। পাশাপাশি আমদানিও বাড়াতে হবে। মায়াদুন জানান, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো পাঁচটি বিষয়ে অভাব। পিয়েরে মায়াদুনের বক্তব্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইইউর ইস্যুভিত্তিক যৌথ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি এসবের সমাধান করবে। সুতরাং এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তিনি বলেন, ২৮ দেশের আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভাল। যুক্তরাজ্য যদিও বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভাল। দেশটিতে আমরা কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রফতানির ৫৫ শতাংশই ইইউতে। একমাত্র অস্ত্র ছাড়া আর সব পণ্যেই বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এ মুহূর্তে ইইউতে রফতানির অর্থমূল্য ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অচিরেই ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
×