ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজন একটি ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বতন্ত্র বিভাগ চায় ইসলামী ব্যাংকগুলো

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বতন্ত্র বিভাগ চায় ইসলামী ব্যাংকগুলো

রহিম শেখ ॥ মহাজনী প্রথা থেকে সুদভিত্তিক ব্যাংকের জন্ম হয়েছে। সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আসল পরিচয় তারা টাকার ব্যবসায়ী। টাকাকেই তারা পণ্যের মতো বেচাকেনা করে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যগত ও পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ব্যাংক কাউকে সরাসরি টাকা না দিয়ে পণ্যের মাধ্যমে বিনিয়োগ পরিচালনা করে। এ ব্যবস্থায় এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারের যেমন সুযোগ থাকে না আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঋণ নেয়ারও সুযোগ নেই। এছাড়া জনকল্যাণের লক্ষ্যে বড় শিল্পের তুলনায় ছোট শিল্পে বেশি ঋণ দেয়া হয়। জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। ইসলামী ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা একটি স্বতন্ত্র বিভাগ তৈরির দাবি জানান তিনি। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালা। আবদুল মান্নান বলেন, ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রাহকের জমা গ্রহণ ও বিনিয়োগ কার্যক্রমসহ সব কাজে ইসলামী শরিয়ার নীতি অনুসরণ করে। সুদের উচ্ছেদ এবং প্রকৃত ব্যবসায়ের প্রচলন এ ব্যাংকের অন্যতম মূলনীতি। ইসলামী শরিয়ার আল-ওয়াদিয়া নীতির ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংকে চলতি হিসাব পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সুদভিত্তিক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে এমনকি আন্তর্জাতিক সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনেও ইসলামী ব্যাংক সুদ পরিহার করে। এখানে পারস্পরিক সম্পর্ক অংশীদারিত্বের, দাতা-গ্রহীতার নয়। তাই ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থায় সব পক্ষ তাদের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে সমন্বিত করে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হন। গ্রাহক-সম্পৃক্ততার এই আদর্শ ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম প্রধান শক্তিরূপে বিবেচিত। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে ভাল করার। ইসলামী ব্যাংকগুলোর শাখা এখন গ্রামমুখী হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদের বর্তমানের পরিবর্তনটা ইতিবাচক। কেননা পরিচালনা পর্ষদে যত বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন আমানতকারীর স্বার্থরক্ষা তত সহজ। আর শুরু থেকে ইসলামী ব্যাংকের বড় অংশের শেয়ারের মালিক বিদেশী উদ্যোক্তারা। ফলে এতদিন পরিচালকদের বেশিরভাগ ছিলেন বাইরের। বিশেষ করে পরিচালক হতে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপের পর দেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র একজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালক হওয়ায় যোগ্য বিবেচিত হন। তবে বর্তমানে দেশীয় পরিচালক বেশি হওয়ায় এখন পরিচালনা পর্ষদের অডিট কমিটি ও নির্বাহী কমিটি আগের চেয়ে আরও কার্যকরভাবে কাজ করছে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই। গ্রাহকের আস্থা নিয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান আবদুল মান্নান। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে দেশের ১ কোটি ১৫ লাখ গ্রাহকের প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এছাড়া ৫৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে ইসলামী ব্যাংক। বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য অংশ কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে ৩ গুণ বেড়েছে গ্রামীণ বিনিয়োগ। এর মধ্যে দেশের উত্তর জনপদ রাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ১৩৮ শতাংশ, রংপুরে ১১৬ শতাংশ ও বগুড়ায় ১০৮ শতাংশ। দেশের মোট রেমিটেন্সের এক-তৃতীয়াংশ আসছে ৩১২টি শাখার এ ব্যাংকের মাধ্যমে। আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশও হচ্ছে এ ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে সম্প্রতি রেমিটেন্স কমে আসার পেছনে ‘হুন্ডি’কে দায়ী করেন তিনি। এদিকে অন্য ব্যাংকের তুলনায় মুনাফায়ও এ ব্যাংক এগিয়ে আছে। যে কোন দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে মুনাফার একটি অংশ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। আগামীতে আরও শাখাসহ সার্বিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যাংকের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যে কোন ব্যাংকের জন্য প্রধান সমস্যা খেলাপী ঋণ। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইসলামী ব্যাংক সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। বেসরকারী খাতে প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হয়েও বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ খেলাপী। ব্যাংক খাতে গড়ে যেখানে খেলাপী ঋণ রয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। আদায় জোরদারের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপী ঋণের এ হার আরও কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতির তুলনায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেশি সংরক্ষণ করা হয়েছে।
×