ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

রাজধানীতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ১৪তম স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত ছবির আন্তর্জাতিক উৎসব। এই উৎসবে এবার বিশ্বের ১০৮টি দেশ থেকে জমা পড়েছে আড়াই হাজার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তা থেকে আয়োজকরা যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচ শতাধিক ছবি নির্বাচন করেছেন দর্শকদের প্রদর্শনের জন্য। এ থেকে সহজেই ধারণা করা যায় যে, ঢাকার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবটি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এত বিপুলসংখ্যক নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে রাজধানীর ছয়টি মিলনায়তনে। এর বাইরেও কয়েকটি ছবি প্রদর্শিত হবে রাজশাহীর বড়কুটি ও লালন মঞ্চে। আয়োজকদের এই উদ্যোগটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত উৎসবের ক্ষেত্রে অধিকাংশের প্রবণতা থাকে রাজধানীকেন্দ্রিক। এতে ঢাকার বাইরের দর্শক-শ্রোতাদের আনন্দ ও বিনোদন উপভোগের সুযোগ তেমন ঘটে না। তবে শিল্প-সংস্কৃতির সুযোগ তো সবার জন্যই অবাধ ও উন্মুক্ত হওয়া আবশ্যক। উৎসবটি শুরু হয়েছে উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেনের জীবনীভিত্তিক একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল দিয়ে তাঁর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। এই কৃতী সন্তান জন্মগ্রহণ করেন ঢাকার অনতিদূরে মানিকগঞ্জে। এর জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রামোদী ও দর্শকবৃন্দ অবশ্যই শ্রদ্ধা ও গর্ব অনুভব করতে পারেন। ইংরেজী শর্ট ফিল্মের বাংলা পরিভাষা করা হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। অধুনা কেউ কেউ বলে থাকেন ছোট ছবি। আসলে ছোট ছবি বড় ছবি বলে কিছু নেই। অনেক সময় ছোট ছবিও জীবনের মহৎ ও নিগূঢ় কথা বাক্সময় করে তুলতে পারে, যা তথাকথিত অর্থে বড় ছবি বলতে ব্যর্থ হয়। সেই হিসেবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বরং বলা যায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। সংস্কৃতির বিকাশে এবং দেশ ও জাতি গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতেই পারি। একেবারে বিশ্বমানের না হোক, অন্তত বেশকিছু আন্তর্জাতিকমানের চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেও। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, নানা কারণে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই গৌরব ধরে রাখা যায়নি। বিপুল পুঁজি বিনিয়োগের অভাব, ভাল চলচ্চিত্রকার, গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী সর্বোপরি দক্ষ ক্যামেরাম্যান ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজনের অভাবে বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্প প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভাল চলচ্চিত্র ও দর্শকের অভাবে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একে একে। তবুও আশার প্রদীপ জ্বেলে ইদানীং আবার ভাল ছবি নির্মিত হতে শুরু করেছে, যা হলমুখী করছে দর্শকদের। টিভি চ্যানেলগুলোও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কেননা এতে পুঁজি অপেক্ষাকৃত কম লাগে। সীমিত আয়োজনেই নির্মিত হতে পারে একটি উন্নতমানের স্বল্পদৈর্র্ঘ্য চলচ্চিত্র, যার মাধ্যমে জীবন ও জগতের ছোট ছোট দুঃখ-গাথা, আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন মেলে ধরা সম্ভব প্রকৃত সৃজনশীল মেধার মাধ্যমে। ঢাকার ১৪তম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে তার যথাযথ স্ফুরণ ঘটবে বলেই প্রত্যাশা।
×