ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক সংস্কারে তাড়াহুড়া

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক সংস্কারে তাড়াহুড়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে বিলম্বে হলেও সংস্কার করা হচ্ছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। তবে বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন বলছে ট্র্যাকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাতে এই টাকায় এর পুরোপুরি সংস্কার সম্ভব নয়। এছাড়াও ট্র্যাকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়েও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কড়া সমালোচনা করেন এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম চেঙ্গিস। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক নিয়ে এ রকম কথা শোনা যাচ্ছে বেশ ক’বছর ধরেই। কিন্তু তাতে কেবল ক্ষতির পরিমাণটাই বেড়েছে। ২০০৬ সালে নির্মাণের পর ট্র্যাকের ওপর নানাবিধ অত্যাচার, যথেচ্ছ ব্যবহার (কনসার্টসহ বিবিধ অনুষ্ঠান) আর পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মূল্যবান এই স্থাপনাটি বলতে গেলে এখন পরিত্যক্ত ঘোষণার অপেক্ষায়। প্রতি বছর এনএসসি থেকে পাস হয় সংস্কার বাজেট। কিন্তু বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায় এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক। অবশেষে প্রায় এক দশক পর কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে এনএসসির। ট্র্যাকটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এজন্য প্রয়োজনীয় মালামালও (পিভিসি, রাবার ইত্যাদি) চলে আসার পর কাজও শুরু হয়ে গেছে। শেষ হতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগতে পারে। কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সংস্কার করা ট্র্যাকটি হয়তো বড়জোর তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকবে। তার মানে এটি পুরোপুরি নয়, সংস্কার করা হচ্ছে আধা-খ্যাঁচড়াভাবে। এদিকে দীর্ঘদিনের অযতœ-অবহেলায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে ট্র্যাকের, এই বাজেটে তার সংস্কার সম্ভব নয় বলে মনে করছে এ্যাথলেটিক ফেডারেশন। এছাড়াও ট্র্যাকের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহলের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। প্রায় দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে চলবে সংস্কার কাজ। ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে সপ্তাহখানেক। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ম্যাচের জন্য সাময়িক বন্ধ রাখা হবে এই কার্যক্রম। তারপরও আসন্ন জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার আগেই সব কাজ শেষ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দরপত্রের মাধ্যমে ট্র্যাক মেরামতের দায়িত্ব পেয়েছে রানা বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি তারা করাচ্ছে মুনির কন্সট্রাকশনকে দিয়ে। মুনির কনস্ট্রাকশন সেটা আবার সাব-কন্ট্রাক্টে করাচ্ছে ক্লাসিক স্পোর্টসকে দিয়ে। ক্লাসিক স্পোর্টসও পুরোপুরি নিজেরা কাজ করছে না। তারা এক্ষেত্রে কাজ করাচ্ছে এক চীনা প্রকৌশলীকে দিয়ে। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ইংরেজী জানেন না বলে এড়িয়ে যেতে চান। নিজের নামও বলতে চাননি তিনি। তবে অনেক চেষ্টা করে তার চীনা কোম্পানির নাম জানা গেছে (চায়না স্পোর্ট ফ্যাসিলিটি কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, চাওইয়াং, বেজিং)। ক্লাসিক স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ট্র্যাকের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। আয়ুষ্কাল শেষের পথে। ট্র্যাকের নিচে বাতাস ঢুকেছে। ফুলে-ফেঁপে গেছে। এমনকি ঘাসও জন্মে গেছে। ক্লাসিক স্পোর্টসের প্রোপ্রাইটার ইমাম হোসেন বাবুল জানান, তারা ট্র্যাক সংস্কারের কাজ এর আগেও করেছেন। যেমন ২০১০ এসএ গেমসের সময় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে, বিকেএসপিতে এবং ভলিবল স্টেডিয়ামে। এই ট্র্যাকে এখন কোনমতেই এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব নয়। কাজেই এনএসসি থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর এবং আসন্ন জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা যেন আয়োজন করা যায়, সেজন্যই তড়িঘড়ি করেই সংস্কার করা হচ্ছে ট্র্যাকটি। ট্র্যাকের আপাতত তিন হাজার স্কয়ার ফিট অংশ নষ্ট হিসেবে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে সংস্কারক সংস্থা। ট্র্যাকের একটি অংশের আন্তর্জাতিক মাপ ১৪ মিলিমিটার। যদিও ১২ী৪০ মিলিমিটার মাপের মধ্যেই এই ট্র্যাকের সংস্কার করার কথা। কিন্তু কাজ করা হচ্ছে ১২ী৩০ মিলিমিটার মাপের মধ্যেই। এমনটাই স্বীকার করেন বাবুল। কারণ হিসেবে জানান, দ্রুত কাজ শেষ করার চাপ থাকায় এই ট্র্যাকের উচ্চতা ঠিক করার জন্য এমনটা করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে আমাদের আর্থিক লাভও তেমন হবে না। বাবুল আরও জানান, ‘আমরা তো সংস্কার করে দিচ্ছি ঠিকই। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমরা চলে যাই। এরপর এই ট্র্যাক পাহারা দেয়ার দায়িত্ব এনএসসির। কিন্তু পরদিন সকালে এসে প্রায়ই দেখি ট্র্যাকের ওপর বিভিন্ন কুকুরের হাঁটাহাঁটির দাগ। পরে এই দাগ আমাদের মুছতে হয়। ফলে এতে সমস্যা হচ্ছে ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।’
×