ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

আবার ফিরবেন আজারেঙ্কা!

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

আবার ফিরবেন আজারেঙ্কা!

সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুটি গ্র্যান্ডসøাম জিতেছেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। তার দুটিই আবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় মেজর শিরোপা জয়ের পর কেটে গেল আরও তিন বছর। কিন্তু এই সময়ে বেলারুশ সুন্দরীকে আর স্বরূপে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের শুরুতে কোর্টে ফেরার দারুণ আশা জাগান তিনি। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ সবাইকে অবাক করে ঘোষণা দেন মা হতে চলেছেন তিনি। যে কারণে মৌসুমের বাকি সময়টা আর টেনিস কোর্টে দেখা যাবে না ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে। মা হওয়ার পর আজারেঙ্কাকে কী তার পুরনো রূপে দেখা যাবে? অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও আত্মবিশ্বাসী আজারেঙ্কা। এ প্রসঙ্গে তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘আমি অনেক মহিলা এ্যাথলেটকেই দেখেছি যে মা হওয়ার পরও তারা ক্রীড়ার শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তারাই হবে আমার অনুপ্রেরণা। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমিও ঠিক তেমনটাই করতে চাই।’ বিশ্ব টেনিসে অভিজ্ঞ তারকার নাম ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা দুই মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন। ২০১২-১৩ মৌসুমে ক্যারিয়ারের দুই গ্র্যান্ডসøাম জিতে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানেও জায়গা করে নেন বেলারুশ সুন্দরী। কিন্তু এরপর থেকেই বাদ সাধে চোট। যে কারণে কোর্টের বাইরে ছিটকে পড়েন বেলারুশ সুন্দরী। তথাপি দমে যাননি ছয় ফুট উচ্চতার এই টেনিস তারকা। দুই মৌসুম কোর্টের বাইরে ছিটকে পড়ার পর আবারও প্রিয় কোর্টে ফিরেন তিনি। ফিরেই নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন আজারেঙ্কা। প্রমাণ করলেন জাত চ্যাম্পিয়নরা কখনোই চোট-সংশয়ে নুইয়ে পড়েন না। ইনজুরি থেকে ফিরেই যে এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবেন কেউই ধারণা করতে পারেননি। মৌসুমের শুরুতেই ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এরপর ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন আজারেঙ্কা। সেই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতে মিয়ামি ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বেলারুশ তারকা। সেইসঙ্গে হারানো সময়গুলোকে যেন আবারও উজ্জীবিত করে তুলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। ইতিহাসের তৃতীয় প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে ইন্ডিয়ান ওয়েলস ও মিয়ামি ওপেন জয়ের রেকর্ড গড়েন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। মিয়ামির ফাইনালে বেলারুশের সাবেক এই বিশ্বসেরা তারকা দুইবারের গ্র্যান্ডসøামজয়ী রাশিয়ার সভেতলনা কুজনেতসোভাকে হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে মিয়ামি হার্ডকোট টুর্নামেন্টের তৃতীয় শিরোপা নিশ্চিত করেন। আর ইতিহাসের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে তিন কিংবা তারও বেশিবার মিয়ামি ওপেনের শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েন বেলারুশ সুন্দরী। এর আগে তিন কিংবা তারও বেশিবার মিয়ামির চ্যাম্পিয়ন হওয়া খেলোয়াড়রা হলেন, আমেরিকার ভেনাস উইলিয়ামস ও তার ছোট বোন সেরেনা উইলিয়ামস এবং স্টেফি গ্রাফ। এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ আটবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আমেরিকান কিংবদন্তি সেরেনার। তারপর পাঁচবার জিতেছেন জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফ। এছাড়া তিনবার জিতে এলিট ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন ভেনাস। তাদের এই তালিকায় সর্বশেষ যোগ দেওয়া তারকার নাম ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। অসামান্য এই কীর্তি গড়ার পর বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়েও অগ্রগতি হয় তার। অষ্টম থেকে পঞ্চম স্থানে উঠে আসেন তিনি। ২০১৪ সালের মার্চের পর এ বছরের শুরুতেই প্রথমবারের মতো শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। কিন্তু হাঁটুর ইনজুরির কারণে মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলা হয়নি তার। একই চোটের কারণে উইম্বলডন থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন বেলারুশ সুন্দরী। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ প্রথমবারের মতো ঘোষণা দেন মা হতে চলেছেন তিনি। যে কারণে এই মৌসুমে আর টেনিস কোর্টে দেখা যায়নি ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে। সেই প্রভাব পড়েছে তার টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে। শীর্ষ পাঁচ থেকে ছিটকে গিয়ে বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বরে অবস্থান করছেন তিনি। আজারেঙ্কা-শারাপোভাদের অনুপস্থিতিতে এ বছর রাজত্ব করেছেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মৌসুমের পুরোটা সময়ই যেন নিজের করে নিয়েছেন জার্মানির এই টেনিস তারকা। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ডসøাম জয়। অলিম্পিকের রৌপ্যপদক। এমনকি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করেন এই জার্মান তারকা। শুধু তাই নয়, ১৯৭৫ সালে র‌্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর থেকে ১২তম খেলোয়াড় হিসেবে মহিলা এককে শীর্ষ থেকে মৌসুম শেষ করছেন তিনি। স্টেফি গ্রাফের পর প্রথম জার্মান খেলোয়াড় হিসেবে অবিস্মরণীয় এই কীর্তি গড়লেন কারবার। অসামান্য এই অর্জনের পর দারুণ রোমাঞ্চিত জার্মান তারকা, ‘বিশ্বের এক নাম্বার খেলোয়াড় হিসেবে মৌসুম শেষ করাটা আমার জন্য সম্মানের এবং অনেক অর্জনের। সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য আমি আমার সবটুকু দিয়েই পরিশ্রম করেছি। চমৎকার এই বছরটা যেন ঠিক সেই প্রচেষ্টারই প্রতিফলন।’ শুরুটা করেছিলেন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে। সেই যে শুরু এরপর আর কখনই পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অসাধারণ পারফর্ম করে উইম্বলডনের ফাইনালেও জায়গা করে নেন তিনি। উইম্বলডনের পর রিও অলিম্পিকের ফাইনালেরও টিকিট কাটেন কারবার। কিন্তু স্বর্ণপদক জয়ের লড়াইয়ে পুয়ের্তো রিকোর অখ্যাত মনিকা পুইগের কাছে হেরে যান তিনি। তবে ইউএস ওপেন জিতে শীর্ষে থেকেই মৌসুম শেষ করতে যাচ্ছেন স্টেফি গ্রাফের এই উত্তরসূরি।
×