ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনার হ্যাটট্রিক জয় ঢাকাকে হারিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২০ নভেম্বর ২০১৬

খুলনার হ্যাটট্রিক জয় ঢাকাকে হারিয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) চতুর্থ আসরে উড়তে থাকে ঢাকা ডায়নামাইটস। একের পর এক ম্যাচে জয় তুলে নেয়। অবশেষে খুলনা টাইটান্সের কাছে এসে ঢাকার ওড়া থামে। ঢাকার জয়রথ থামিয়ে দেয় খুলনা। উল্টো তারাই জয় রথের পথে পাঁ বাড়ায়। শনিবার ৯ রানে ঢাকাকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক জয় তুলে নেয় খুলনা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৬২) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর মোশাররফ হোসেন রুবেলের (৩/৩১) ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয় ঢাকা। ম্যাচে টস জিতে খুলনা আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৭ রান করে খুলনা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শুভাগত হোম চৌধুরী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন। অপরাজিত ২১ রান করেন তাইবুর রহমান। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো ২ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ১৯.১ ওভারে ১৪৮ রান করতেই অলআউট হয় ঢাকা। শ্রীলঙ্কান সেকুগে প্রসন্ন সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেভন কুপার ও মোশাররফ হোসেন রুবেল ৩টি করে উইকেট নেন। খুলনার টার্গেট অতিক্রম করা ঢাকার কাছে বিষয় নয়। অন্তত দলের ব্যাটসম্যানদের থেকে তাই মনে হয়েছে। টানা ম্যাচ জিততে থাকা দলটির একাদশে হার্ডহিটার মেহেদী মারুফ। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা, ইংল্যান্ডের ম্যাট কোলস, নাসির হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাকিব আল হাসান, ডোয়াইন ব্রাভো, সানজামুল ইসলাম, শ্রীলঙ্কান সেকুগে প্রসন্ন ও সোহরাওয়ার্দী শুভ আছেন। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই ব্যাটিং করতে পারেন। তাহলেতো ঢাকার কাছে এ রান কিছুই না। কিন্তু এ রানই কঠিন হয়ে গেল। হারতেও হলো। ৮৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। এরমধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন (৩৫) শুধু ৩০ রানের বেশি করতে পারেন। দলের সব তারকা ব্যাটসম্যানই আউট হয়ে যান। তখনই বোঝা যায় ঢাকা হারতেই চলেছে। কিন্তু অষ্টম উইকেটেই আবার জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন সানজামুল ইসলাম ও শ্রীলঙ্কান সেকুগে প্রসন্ন। দু’জন মিলে জয়ের কাছাকাছি দলকে নিয়ে যান। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন প্রসন্ন। ১৫ ওভারে ৯৩ রান থাকে ঢাকার। ৩০ বলে জিততে তখন ৬৫ রান লাগে। সেখান থেকে এক লাফে ১৬তম ওভার শেষে ১১৪ রান হয়ে যায়। কেভন কুপারের করা ১৬তম ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকান প্রসন্ন। পরের ২ ওভারে আরও তিনটি ছক্কা হাঁকান। এমন মুহূর্তেই মারমুখি হয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন। একটা সময়ে গিয়ে ১২ বলে জিততে ১৫ রান লাগে। হাতে থাকে ২ উইকেট। মনে করা হচ্ছিল প্রসন্ন জিতিয়ে দেবেন ঢাকাকে। কিন্তু ১৯তম ওভারে সোহরাওয়ার্দী শুভ আউট হয়ে সেই জয়ের আশা ফিকে করে তুলেন। ২০তম ওভারে গিয়ে ৬ বলে ১০ রান লাগে। হাতে থাকে ১ উইকেট। এবার প্রসন্ন নিজেই ২২ বলে ৭ ছক্কায় ৫৩ রান করে আউট হয়ে যান। কুপারের করা প্রথম বলটিতে লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান। সেই সঙ্গে ঢাকার ইনিংসও ১৪৮ রানের বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি। টানা তিন ম্যাচে জয়ের পর আবার হারল ঢাকা। ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই আছে ঢাকা। ঢাকার মতো শুরুতেই বিপত্তিতে পড়ে খুলনা। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে। তবে এরপর টানা তিন উইকেটে জুটি হয়। ছোট বড় জুটি মিলিয়ে বড় স্কোরই দাঁড় করায় খুলনা। তৃতীয় উইকেটে শুভাগত হোম ও মাহমুদুল্লাহ মিলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। ৬৭ রানে শুভাগত আউটের পর চতুর্থ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরানকে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। ৯৬ রানে পুরান আউটের পর তাইবুর রহমানকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৫৭ রানের বড় জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। দলের বিপত্তির সময় হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। বল হাতে যেমন শেষ ওভারের নায়ক বনে গেছেন, তেমনি ব্যাট হাতেও ঢাকার বিপক্ষে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন। ৪৪ বলে ৪টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরে ৬২ রান করে দলের ১৫৩ রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। তার আউটের পর আর ৩ রান হতেই খুলনার ইনিংস শেষ হয়। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে এতদূর নিয়ে আসেন। তবে ম্যাচের নায়ক হতে পারেননি। তা হয়েছেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। কারণ? প্রসন্ন ও সানজামুল মিলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি দলকে জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। এমন মুহূর্তে দলের ১৩৯ রানে গিয়ে সানজামুলকে আউট করে দিয়ে জুটি ভাঙ্গেন মোশাররফ। এই জুটি ভাঙ্গাতেই শেষ পর্যন্ত জয় মিলে। মোসাদ্দেক ও সাকিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানকেও আউট করে দেন। এই ম্যাচে জয়ে টানা তিন জয়ের সঙ্গে ৫ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট পায় খুলনা। তবে রানরেটে ঢাকার চেয়ে পিছিয়ে থাকায় শীর্ষে উঠতে পারেনি। ঢাকাকে হারিয়ে ঠিকই হ্যাটট্রিক জয় তুলে নেয় খুলনা।
×