ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ব্যাংক বদলালেই কম সুদ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২০ নভেম্বর ২০১৬

ব্যাংক বদলালেই কম সুদ

বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে চলছে এক অসম প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘ স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ঋণ গ্রহীতাদের। ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার কমে এখন ২০ বছররে মধ্যে সর্বনিম্ন। ব্যাংকগুলোতে জমে আছে প্রচুর নগদ টাকা। ঋণ বাড়াতে যে কারণে এখন নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে অনেক ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণ টেকওভার বা অধিগ্রহণের প্রতযোগিতা শুরু হয়েছে ব্যাংক খাতে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অলস অর্থ থাকলেও কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না বিনিয়োগ। ফলে নতুন বিনিয়োগের অভাবে ভাটা পড়েছে ব্যাংক ঋণের চাহিদায়। গত জুলাই শেষের হিসেবে দেখা গেল হঠাৎ করেই বেসরকারী খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছে। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এর আগে টানা বছর খানিক ধরে এ খাতে ঋণ বাড়ছিল। জুন শেষে দেখা যায়, বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এদিকে আমানতের ওপর সুদের হার কমার ফলে মধ্যবত্তি শ্রেণীর অনেকেরই পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের কোন লাভ হচ্ছে না। কারণ আমানতে সুদ কমিয়ে ব্যাংক যে পরিমাণ আয় করছে, তার চেয়েও বেশি পরিমাণ অর্থ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে খেলাপ ঋণের বিপরীতে। এতে একদিকে ব্যাংক মালিকরাই মুনাফার টাকা ঘরে নিতে পারছেন না, অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের ফি-কমিশন আরোপ করায় উদ্যোক্তারাও ব্যাংকে ঋণ নিতে এগিয়ে আসছে না। এ কারণে ব্যাংক খাতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে রয়েছে। তা ছাড়া বিদেশে থেকে প্রচুর ঋণের অনুমোদন, আগে নেয়া ঋণ সমন্বয়, সুদহার কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি একটি ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় যে, বর্তমানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে ঋণ দেয়ার জন্য সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা না চাইলে ও তার লোন লিমিট বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা ব্যাংকের সঙ্গে দর-দেনা করে তার লোনের সুদের হার কমিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে এখন প্রচুর ঋণ নিচ্ছেন। গত জুন পর্যন্ত বিদেশ থেকে স্বল্প মেয়াদী বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ কোটি ডলারে। এর বাইরে গত ৬ বছরে দীর্ঘ মেয়াদী প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ঋণের অনুমোদন দিয়েছে বিনিয়োগ বোর্ড। এ ছাড়া মাত্র তিন মাসে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বেড়ে ৩৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। এসব ঋণও বিদেশী ঋণ হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি আগে নেয়া বড় কিছু ঋণ গত জুলাইতে সমন্বয় হয়েছে। গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমকি ৩২ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল। এদিকে বেশকিছু বেসরকারী ব্যাংক, ব্যাংক বদলের আকর্ষণীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিচ্ছে। আবার কিছু ব্যাংক অন্য ব্যাংকের হোম লোন তাদের ব্যাংকে স্থানান্তর করলে মাত্র ৮ শতাংশ সুদ অফার করছে। অবশ্য নতুন গৃহ ঋণে সুদ নেয়া হচ্ছে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একইভাবে নতুনভাবে ব্যক্তিগত ঋণ নিতে যেখানে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ দিতে হবে, অন্য ব্যাংকের ব্যক্তিগত ঋণ টেকওভারে সুদ নেবে মাত্র ১০ শতাংশ। বর্তমানে ১৫ শতাংশ সুদে এসএমই খাতে মেয়াদী ঋণ দেয়া হচ্ছে। বড় ও মাঝারি শিল্পে সুদ নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ। বিদেশী মালিকানার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও ঋণ টেকওভারে আকর্ষণীয় সুদ অফার করছে। এক সময় ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকদের ব্যাংকের পক্ষ থেকে টেলিফোনে জানতে চাওয়া হচ্ছে নতুন করে কোন ঋণ নিতে তিনি আগ্রহী কিনা। অন্য ব্যাংকের ঋণ টেকওভারে বিশেষ অফার রয়েছে ব্যাংকটিতে।
×