ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি বেসরকারী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা হবে নতুন কল, চুক্তি স্বাক্ষর

বন্ধ হচ্ছে কর্ণফুলী পেপার মিল

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২০ নভেম্বর ২০১৬

বন্ধ হচ্ছে কর্ণফুলী পেপার মিল

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পুঞ্জীভূত লোকসান ও চরম অর্থ সঙ্কটে জর্জরিত কর্ণফুলী পেপার মিল লিমিটেড (কেপিএম) অবশেষে বন্ধ হওয়ার পথে। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার অন্যতম এই কাগজ কলটির সংলগ্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সৌদি বেসরকারী অর্থায়নে নতুন পেপার মিল। সেটি উৎপাদনে গেলে সরিয়ে ফেলা হবে কেপিএম। এমনই তথ্য মিলেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) অভ্যন্তরীণ সূত্রে। কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কেপিএম সংলগ্ন বিসিআইসির জায়গায় আরেকটি কাগজ কল স্থাপন করবে সৌদি শিল্পগ্রুপ ‘আলরাজি’। এ লক্ষ্যে গত ২০ অক্টোবর বিসিআইসির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী কাগজ কলটির ৩৯ শতাংশ মালিকানা থাকবে বাংলাদেশের। আর ৬১ শতাংশ মালিকানা থাকবে সৌদি শিল্প গ্রুপ আল রাজির। দৈনিক ১ হাজার টন হিসেবে বার্ষিক ৩ লাখ ৬৫ হাজার টন কাগজ উৎপাদিত হবে এই মিলে। এতে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। কেপিএমের পাশে এ মিলটি স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কাগজ কলে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। নতুন মিলটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে বন্ধ হবে পুরনো কারখানা। যদি তাই হয়, এর মাধ্যমে শেষ হবে একটি অধ্যায়ের। বিসিআইসি ও কেপিএম সূত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্রমেই সিক হতে থাকে এক সময়কার গর্ব কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড। ১৯৫৩ সালে চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠিত হয় কেপিএম, যা এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কাগজ কল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। এই মিল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা ছিল আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালির। ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে শুরুতে এটি সফলতা পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৯৬৪ সালে এর মালিকানা হস্তান্তরিত হয় পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে। এই গ্রুপটি কারখানার আধুনিকায়ন করে। এলাকায় বনজ কাঁচামাল এবং দেশে শ্রমের সহজলভ্যতা থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখে কেপিএম। এর লাভের টাকায় সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কর্ণফুলী রেয়ন মিলস লিমিটেড। লাভের ধারাবাহিকতা ২০০১ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। এরপর নানামুখী দুর্নীতি ও অনিয়ম কেপিএমকে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে শুরু করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসান অন্তত ৩শ’ কোটি টাকা বলে তথ্য রয়েছে। অবসরে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীদের অনেক পাওনাও বকেয়া রয়েছে। কেপিএমের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত এই প্রতিষ্ঠানটি এখন চরম অর্থ সঙ্কটে জর্জরিত। বিসিআইসির পক্ষ থেকে দফায় দফায় বরাদ্দ দিয়েও কারখানাটিকে লাভজনক করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ গত আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের তিনটি ইউনিটে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১০ থেকে ১৩০ মেট্রিক টন। কাঁচামাল ও বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে ঠিকাদার ও সরবরাহকারীরা পাওনা রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। এত বড় অঙ্কের পাওনা পরিশোধ এবং নতুন করে অর্থ যোগান দিয়ে কারখানাটিকে সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। লোকসানের মধ্যে থাকায় ঠিকাদাররাও কাঁচামাল সরবরাহে আগ্রহ হারিয়েছেন। এত বেশি সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় কেপিএমকে সচল রাখা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কেপিএম বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় বিচলিত সেখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাছাড়া ঐতিহ্যবাহী এই মিল বন্ধ হওয়ায় চন্দ্রঘোনা এলাকার একটি গৌরবও বিলীন হতে চলেছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, সেখান থেকে যারা কর্মহীন হবেন তারা তাদের পাওনা এবং উপযুক্ত সার্ভিস বেনিফিট পাবেন। এছাড়া নতুন মিলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। অনেক পুরনো হওয়ায় এর যন্ত্রাংশও পুরোপুরি কর্মক্ষম ছিল না। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো এমনিতেই জরুরী হয়ে পড়েছিল, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কাঁচামালের সহজলভ্যতা বিবেচনায় সেখানে আরেকটি কাগজ কল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যার উৎপাদন ক্ষমতা হবে অনেক বেশি। সৌদি আলরাজি গ্রুপের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যেই চন্দ্রঘোনা কাগজ কল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গ্রুপটি প্রাকৃতিক কাঁচামালের উৎস বিশেষ করে বাঁশ ও নরম কাঠের সরবরাহের নিশ্চয়তা উপলব্ধি করে সেখানে বড় বিনিয়োগে কাগজ কল প্রতিষ্ঠা লাভজনক হবে বলে মনে করছে।
×