ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াহিদ তারেক

লাইভ ফ্রম ঢাকা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

লাইভ ফ্রম ঢাকা

‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ সিনেমাটা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আর সেটা অবশ্যই পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সুবাদে। কারণ ওর সঙ্গে জানাশোনা, কাজ করা, আইডিয়া নিয়ে রাতের পর রাত জেগে তর্ক-বিতর্কের বয়স কমপক্ষে ছয় বছর; বা তারও বেশি হবে হয়ত। সেই সাদ, আগামী ২৮ নবেম্বর তার সিনেমা ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ নিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের সিলভার স্ক্রিন এ্যাওয়ার্ডে কম্পিট করতে। এই দারুণ খুশির খবর সবাই জানার পরে সাদ যা করল, তাতে অনেকেই বড় অবাক; রীতিমতো শকড বলা যায়। মিডিয়ার কাছ থেকে রীতিমতো পালিয়ে বেড়াতে থাকল আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। এমনকি সিনেমা নিয়ে বা তার অনুভূতি নিয়ে কোন মন্তব্যের জন্য তাকে খুঁজে বের করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমি অবশ্য খুব বেশি অবাক হইনি কারণ আমি জানি- দিস ইজ সাদ। অসম্ভব জিনিয়াস, ম্যাচিউরড কিন্তু একইসঙ্গে ভয়ানক লাজুক আর গুটিয়ে থাকা একজন মানুষ। সাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই অবশ্য তার লেখার সঙ্গে আমার পরিচয়। এক তরুণ লেখকের স্ক্রিপ্ট হাতে আসে আমার; সালটা বোধহয় ২০০৬। ওই সময়ে কয়জন মানুষ ‘কেলটেক্স’ সফটওয়্যারের ব্যবহার জানতেন, আমি জানি না। কিন্তু একজন তরুণ সফটওয়্যারে স্ক্রিপ্ট লিখছেন, তাতেই বেশ অবাক হয়েছিলাম। এরপর দিন দিন তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি বেশকিছু টিভি ফিকশনে। তার ঝরঝরে লেখার হাত, সময়ের তুলনায় অগ্রসর ভাবনা আমাকে সবসময় টেনেছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা কেবল ওই কাজের সম্পর্কের মধ্যে আটকে থাকেনি। আমি অবাক হয়ে দেখেছি, তার লেখায় সিনেমাটিক সেনসিবিলিটি কি অসম্ভব রকম ভাল! আমি তখন একজন ব্যস্ত বিজ্ঞাপন নির্মাতা। মাথার মধ্যে সিনেমার আইডিয়া ঘুরে বেড়ায়, উত্তেজিত করে তোলে কিন্তু জীবনের নানা চাপে স্বপ্নটা ঠিক দানা বাঁধতে পারেনি। বলতে দ্বিধা নেই, লেখক হিসেবে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ সেই সময় আবার আমার সিনেমা বানানোর স্বপ্নটা উসকে দিয়েছিল। ওর সঙ্গে বসে কাজ করা ও গল্প তৈরি করা এক অদ্ভুত আনন্দময় অভিজ্ঞতা। ওকে অনেক জ্বালিয়েছি, খাটিয়েছি, অনেক লিখিয়ে নিয়েছি। গল্প তৈরি, তার ট্রিটমেন্ট নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্কে রাতের পর রাত পার করেছি। আমার সিনেমা ‘আলগা নোঙ্গর’ এর স্ক্রিপ্ট লেখার শুরুও ওর সঙ্গে। সাদ তার চলচ্চিত্র পরিচালনার আগে অডিও ভিজ্যুয়ালের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেছে। সে বিজ্ঞাপন বানিয়েছে, টিভি ফিকশন বানিয়েছে, ডকুমেন্টারি বানিয়েছে, দারুণ প্রশংসা পাওয়া শর্ট ফিল্মও বানিয়েছে। প্রতিটি জায়গায় তার সিগনেচার স্টাইল আছে। লেখক থেকে তার পরিচালক হয়ে ওঠার ধাপগুলো আমি দেখেছিলাম। তাই সিনেমাটা যখন দেখেছি, তখন আমি তার সেই ম্যাচিউর হয়ে ওঠাটাকে পর্দায় অনুভব করেছি। আশ্চর্য রকম বিনয়ী ছেলেটা লেখাতে যেমন মানুষের বিপন্নতা আর বিষাদকে ধরতে পারে, তেমনি সেটা পর্দায় দেখানোর কৌশলটাও সে নিজের মতো করে আয়ত্ত করে নিয়েছে। ওর একটা বড় সুবিধা হলো, চলচ্চিত্রের প্রায় সব বিভাগ সম্পর্কে ও খুব ভাল ধারণা রাখে। সে নিজে খুব ভাল ফটোগ্রাফার এবং প্রথম শ্রেণীর এডিটর। সে যেভাবে ঢাকাকে দেখেছে, ঢাকার মানুষকে তার ফ্রেমে ধরছে, তেমন করে দেখা যায় বা ভাবা যায়Ñ এটা কখনও মাথায় আসেনি। সিনেমাটা সে বানিয়েছে অনেক যতœ নিয়ে, অনেক কষ্ট করে; নিজে টাকা সংগ্রহ করে। ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে এত অল্প বয়সেই সে গল্প বলার একটা নিজস্ব স্টাইল খুঁজে পেয়েছে। এই স্টাইলটা ফুটিয়ে তোলার জন্য তার নিজের মধ্যে যে ছটফটানি ছিল, সেই জন্য কোন কষ্টকেই সে আর কষ্ট মনে করেনি। সিনেমার জন্য এই ভালবাসা আমাকে অন্তত ভীষণভাবে স্পর্শ করেছে। লেখক : স্বনামধন্য বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও ‘আলগা নোঙ্গর’ চলচ্চিত্রের পরিচালক
×