ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত

নানা সময়ে দেখা বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

নানা সময়ে দেখা বাংলাদেশ

আমি নানা সময়ে বাংলাদেশকে দেখেছি। প্রথমটি হলো স্বপ্নের স্বাধীনতা লাভের বাংলাদেশ। তার প্রথমটা দেখেছি আমার ছোটবেলায় সেটা হলো সদ্য, স্বাধীন, পাকিস্তানের একাংশ পূর্ব পাকিস্তান। যে অংশটুকু ব্রিটিশ শাসকদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পরে আবার কলোনিয়াল হয়ে গেল। পশ্চিম পাকিস্তান, ইসলামের দোহাই দিয়ে একটা রাষ্ট্র সৃষ্টি করার পরে, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ঠিক ব্রিটিশরা যে রকমভাবে শাসন চালিয়েছিল, শোষণ চালিয়েছিল, অত্যাচার করেছিল একই পদ্ধতিতে কখনও কখনও আরও কঠিনভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করতে শুরু করল। যে কারণে মওলানা ভাসানী, তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি দলের সৃষ্টি করেন। যেই দলের মাধ্যমে তারা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর প্রতিটি অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তাদের শেখাতে পেরেছিলেন। সে কথা যদি আমরা দেখি যেটা আমার জন্মের পূর্বে সেটা হলো ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন। আমার জন্মের পরে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। তারপরে সরকার গঠন করার পরে যুক্তফ্রন্টের সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে না দেয়া। ১৯৫৮ সালে আবার সামরিক শাসন। ’৫৮-৬৯ এই দশ বছরের আইয়ুবীয় সামরিক শাসনের মাঝে যে আন্দোলন হয়েছে। সে আন্দোলনগুলো একে একে এ দেশের মানুষকে রাজপথে মিছিল করতে শিখিয়েছে, কার্ফ্যু ভঙ্গ করতে শিখিয়েছে। অকুতোভয় সেনানীর মতো নিজের দাবি বা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বক্ষেত্রে সোচ্চার হতে শিখিয়েছে। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে এই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আন্দোলন করেছে। জাতির পিতার দূরদর্শিতা যেই শাসনের মধ্যে নির্বাচন হোক না কেন, তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন। যেটা আজকের বিএনপি সরকার কোন অবস্থাতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি সেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন এবং মেজরিটি আসন নিয়ে পাকিস্তানে পার্লামেন্টে সরকার গঠন করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে তিনি জয়ী হলেন। কিন্তু আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তাকে ক্ষমতা না দেয়ার জন্য, পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তা যত রকমের কূটকৌশল আছে সবই শুরু করলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদরাও। রাজনীতিবিদদের এক বিরাট অংশ। জাতির পিতা সেটা বিশ্বাস করলেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘটনা তিনি পর্যবেক্ষণ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণের একটি ভাষণ যিনি দিয়েছিলেন। সেটা হলোই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। স্পষ্টভাবে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চের রাতে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকারসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞে নেমে গেল তখনও তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়ে গেলেন। সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এটাই ছিল আন্দোলনের বাংলাদেশ। আমার দেখা প্রথম বাংলাদেশ, স্বপ্নের বাংলাদেশ। এবার দেখলাম দ্বিতীয় বাংলাদেশ। এটা এ দেশের আপামর জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাংলাদেশ। ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-মজুর, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিডিআর, রাজনীতিবিদসহ সবাই বঙ্গবন্ধুর এক উদাত্ত আহ্বানে সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দিলেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এদেশের এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় নিল। এই শরণার্থীদের তদানীন্তন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আশ্রয় দিয়েছিল, ভরণ-পোষণ দিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীর কোমল হৃদয় ভারতীয় জনগণের অসম্ভব সাহায্য এবং সহযোগিতা পরিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা, সবকিছু নিয়ে কিন্তু দ্বিতীয় বাংলাদেশ সৃষ্টির পথে চলল। গেরিলা বাহিনী, পদাতিক বাহিনী, নৌ-কমান্ড, বিমানবাহিনীÑ সবই পাঠানো হলো। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে ডিসেম্বর মাসে ভুটানের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরে মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে নব্বই হাজারেরও বেশি পাকিস্তানী সেনা ইস্ট পাকিস্তানে পর্যুদস্ত শুধু হলেন না, খোলা মাঠে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেন। যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয় এবং গ্লানির আত্মসমর্পণ। বাঙালী আপামর জনতা সাড়ে সাত কোটি সবাই অপেক্ষা করতে লাগলেন। কখন জাতির পিতা ফিরে আসবেন। অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বরের পরে অপেক্ষার পালা, যার ২৪ দিন পরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান স্থপতি, মুজিব নগর সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তিনি ফিরে এলেন। শেষ হলো প্রত্যাশার এবং স্বপ্নের দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু না ফেরা পর্যন্ত যা ছিল অসম্পূর্ণ। এবার তৃতীয় বাংলাদেশের কাছে। তৃতীয় বাংলাদেশ হলো ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এখানেও বঙ্গবন্ধু তাঁর বহুমাত্রিক দার্শনিক চিন্তাধারার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যান। যার জন্য পৃথিবীর মুক্তিকামী সব মানুষ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব এবং ভারত প্রত্যেকের কাছে সাহায্য চাইলেন কিভাবে চট্টগ্রাম বন্দর আবার মাইনমুক্ত করা যায়। কিভাবে রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণ করা যায়। কিভাবে রিলিফ পাওয়া যায়। কিভাবে এ দেশের গৃহহীন, খাদ্যহীন মানুষকে খাদ্যের যোগান ও আশ্রয় দেয়া যায় । জাতির পিতা তার ব্যক্তিগত কারিশমা দিয়ে সবকিছু ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যখন দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে অর্থাৎ ঝঃধনরষরঃু-এর পথে নিয়ে যেতে লাগলেন ঠিক ওই সময়েই পাকিস্তানী প্রেতাত্মা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যারা কখনও বাংলাদেশকে মেনে নেননি তারা একটি অঘটনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ভান ধরেছিলেন যে তারা বাংলাদেশের সন্তান, বাঙালীর সন্তান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অকুণ্ট সমর্থন ছিল। তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে তৃতীয় বাংলাদেশকে হত্যা করল। যেই বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেখলাম চতুর্থ বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়, এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়, এ বাংলাদেশ এ দেশের দরিদ্র, মেহনতী মানুষের বাংলাদেশ নয়, এটা পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশ। পাকিস্তানী প্রেতাত্মা জিয়াউর রহমান নেপথ্যে থেকে পাকিস্তানী এজেন্ট খন্দকার মোশতাকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টি করে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতে শুরু করলেন। যেই মীরজাফরের ভূমিকায় খন্দকার মোশতাক অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার দূরদর্শিতা এতই কম ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করে, সে দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হবেন বা রাষ্ট্রনায়ক হবেন। এটা ক্ষণস্থায়ী। সেনাবাহিনীর হাতে তাকে আবার ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিতে হলো। জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনী প্রহসন, সামরিক উর্দি পরে দল গঠন, এ দেশের কোমলমতি ছাত্রদের হিজবুল বাহার জাহাজে করে শিক্ষা সফরের নামে ছাত্রদের হাতে পিস্তল তুলে দেয়া, অস্ত্র তুলে দেয়া অর্থাৎ প্রতিপক্ষ স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে পর্যুদস্ত করার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠন করলেন। জিয়াও ভুল করলেন, ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না। এই বাংলাদেশ চলল ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পরে তখনকার সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ধীরে ধীরে সেই বিএনপি সরকারকে সরিয়ে নিজে আবার সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা নিলেন অর্থাৎ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতন পর্যন্ত পুরোটা ছিল এক পাকিস্তানী প্রেতাত্মার সামরিক শাসনের বাংলাদেশ। এটাই হলো আমার দেখা বেদনার বাংলাদেশ। তারপরে নতুন করে জন্ম নিতে লাগল ৫ম বাংলাদেশ। এটা গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া তাতেও কিন্তু নেপথ্যে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে জনগণের রায়কে পাল্টিয়ে নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসল। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায়। তারপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এই রাষ্ট্র পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র যখন অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়ে চলতে লাগল ২০০১ সালের নির্বাচনে, আবার সেই পাকিস্তানী প্রেতাত্মা জামায়াত পাকিস্তানী আইএসআইয়ের পয়সায় নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে অধিষ্ঠিত হলো এবং তখন আরেক বাংলাদেশের জন্ম দিলেন খালেদা জিয়া। সেটা হলো জঙ্গীর বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় বোমাবাজি করে বাংলাভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমানের মতো উগ্রপন্থীদের সৃষ্টি করে দিয়ে তারা এগিয়ে যেতে লাগলেন এবং ওই নির্বাচনে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিলেন। যেখানে কিছু আমলাও জড়িত ছিল। ২০০৮-এর নির্বাচনের পরে আবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো এবার যে বাংলাদেশ আমি দেখলাম সেটা ষষ্ঠ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের এক বৈপ্লবিক কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন তিনি সেদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন, অনেক বিজ্ঞজনের কাছেই তা অতিরঞ্জিত মনে হয়েছিল। সাধারণ লোকে ভেবেছিল এসব নিছক কথার কথা। আমাদের মতো অনুন্নত গরিব দেশে এমন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া আদৌ সম্ভব হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই প্রতিশ্রুতি কেবল কথার কথা ছিল না। তাঁর গৃহীত বৈপ্লবিক পদক্ষেপে প্রথমেই বিএনপি আমলের মুঠোফোনের মতো দুর্লভ যন্ত্রটি চলে এলো আমজনতার হাতে। সেটি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনালগ্ন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে মাত্র ছয় বছরের মধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তথ্যপ্রযুক্তিসেবা নিশ্চিত হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। তৃণমূল পর্যায়ে। মাত্র ৭ বছরের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দেশ সারাবিশ্বে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, তার নেপথ্যে মেধা-মনন ও নিরলস শ্রম দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি এখন কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কোন্ কোন্ দফতর কিভাবে কাজ করবে তা নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১১ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (আইসিটি মন্ত্রণালয়) গঠন করা হয়। জয়ের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারপর থেকেই ডিজিটালাইজেশনের পথে দেশ ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ যে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে, এক কথায় তা বিস্ময়কর। এখন জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় হাজারো কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সময় ও খরচে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষার ফরম পূরণ, ফল, পাসপোর্ট ফরম পূরণ করা, জাতীয় পরিচয়পত্র, জমিজমার দলিল, নকশা, পর্চা, জন্ম-মৃত্যুর সনদ, বিভিন্ন প্রশংসাপত্র, আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ যাবতীয় ফরম পূরণ এবং বিভিন্ন বিষয়ের আবেদন করা যায় অনলাইনে। টাকা পাঠানো, ব্যবসায়িক লেনদেন, কেনাকাটা, আমদানি-রফতানির দাফতরিক প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব সুবিধা। ভাইবার, স্কাইপিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বজনরা তাদের প্রবাসী আপনজনের সঙ্গে শুধু কথা বলাই নয়, সরাসরি তাঁর ছবিও দেখতে পাচ্ছেন স্ক্রিনে। বিশ্ব বাস্তবেই এখন এসেছে হাতের মুঠোয়। এ সুবিধাগুলোর সঙ্গে দিনে দিনে জনসাধারণের জীবনযাত্রার অভ্যস্ততা এমন নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছে যে, বলতে গেলে এসব ছাড়া জীবন এখন অচল। মনে হয় এসব তো স্বাভাবিক, সহজাত। কিন্তু আমাদের মতো প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিভাবে পিছিয়ে থাকা একটি দেশে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ সুসম্পন্ন করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। কোন কাজের সাফল্য নির্ভর করে যথার্থ পরিকল্পনা, দক্ষতা, নিষ্ঠা, দিকনির্দেশনা, সুসমন্বয় এবং নেতৃত্বের ওপর। সজীব ওয়াজেদ জয়ের দক্ষতা ও নেতৃত্বে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ এসবেরই দীপ্তিমান দৃষ্টান্ত। দেখেছি স্বপ্নের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, সামরিক শাসকের বাংলাদেশ, জঙ্গীবাদের বাংলাদেশ, পরিশেষে গণতন্ত্র এবং প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বর্তমানে সমাজ, পরিবার বা রাষ্ট্রের করণীয় হলো প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা অন্যথায় শুধু মোবাইল ফোন অপব্যবহারের জন্য লাখ লাখ তরুণ-তরুণী তাদের কানের বিপর্যয় ঘটাবে। লেখক : সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×