ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এম. আমীর উল ইসলাম

বাংলাদেশের সংবিধানের পটভূমি

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৭ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের সংবিধানের পটভূমি

(গতকালের পর) পাশাপাশি জনগণ প্রত্যাশা করে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বর্তমান সংসদ। স্থানীয় সরকারকে সাংসদদের প্রতিপক্ষ বিবেচনা না করে সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতার মূল বাহন হিসেবে সংসদ ও স্থানীয় সরকার একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন এটাই জনগণের সাংবিধানিক প্রত্যাশা ও দেশবাসীর অঙ্গীকার। সংবিধান রচনার ৩৮ বছর পর আজও পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে সংসদে যে আইন প্রণয়ন করার কথা ছিল তা আজও পর্যন্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতি রুল ও রেগুলেশনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের চাকরিসংক্রান্ত নীতিমালা এখনও চালু রয়েছে। অতীতে সংসদ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন আইন প্রণয়ন করেনি। সংবিধানে ন্যায়পাল সৃষ্টির বিধানও কার্যকর করা হয়নি। সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে গড়িমসি বা গাফিলতি এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে উপযুক্ত পরামর্শ ছাড়া বিচারক নিয়োগ অতীতে সবই ছিল সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারকদের আইন ও সংবিধান, ন্যায় বিচার, মৌলিক অধিকারের বিষয়ে কতটুকু আনুগত্য তা নিরূপণ করার মাপকাঠি অনুপস্থিত। বিচারক হবার যোগ্যতার মাপকাঠি এখনও পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি। সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বিভিন্ন সময় হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে তাদের দেয়া রায়ে। সংসদকে কেন্দ্র করে জনগণের যে প্রত্যাশা অতীতে তার একটিও পূরণ হয়নি এবং সংসদকে কার্যকর করার জন্যে যে ন্যূনতম সহনশীলতার প্রয়োজন এবং যে সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য তা ছিল চরমভাবে অনুপস্থিত। যার ফলে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তুতি সংসদে মীমাংসা না হয়ে সমস্যাটি উপচে পড়েছিল রাজপথে-জনপদে। শত শত লোক প্রাণ দিলেন, দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধ-আন্দোলনে জনগণকে আবার রাস্তায় নেমে এসে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল। নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম আর দ্রোহের সংস্রবে জনগণের মহান বিজয় সূচিত হয়েছিল। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি মুক্তচিন্তা, চেতনা ও বিবেকের স্বাধীনতার অপার স্রোতধারায় এবার অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মানবাধিকার সংগ্রামের প্রজ্ব¡লিত শিখাকে জনগণ আবারও তুলে দিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। নির্বাচনে জনগণের বিপুল অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র কার্যকারণে জনগণের অপরিসীম আগ্রহ। জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নির্বাচিত সরকার ও বিরোধী দলের ওপর সমান দায়ে ন্যস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আবারও স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের সংগ্রামে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছে। কার্যকর সংসদ, সরকারের জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় উন্নয়নে পার¯পরিক শঙ্কামুক্ত সহযোগিতাÑ এ সবই আজ বীর বাঙালী জাতির বহুদিনের প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা। জাতির প্রত্যাশা ও অঙ্গীকারের দ্যোতনায় দীপ্তমান জাতীয় নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির প্রচলিত সীমাবদ্ধতাকে জয় করে সংবিধান ও গণতন্ত্রকে উর্ধে তুলে ধরতে হবে। জনগণের অর্জিত সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব জনগণ কখনও বিসর্জন হতে দেয়নি। পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানবহির্ভূত যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে পঞ্চম সংশোধনীর ভিত্তি মূলের বিলুপ্তি ঘটেছে। একই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে সপ্তম সংশোধনীর বিলুপ্তি সাধন ঘটেছে। তাই আমাদের মূল সংশোধনীতে ফেরার জন্য মাননীয় বিচারপতি খায়রুল হকের যুক্তি ও সূত্রগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তার রায়ের সারমর্মগুলো নিচে তুলে ধরছি যার সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের মূল সূত্র হিসেবে ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা দেবে এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধকে পুনঃস্থাপন করতে যুুক্তি হিসেবে যা অতুলনীয়। ১. বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এ দেশ শাসিত হবে আইনানুগ সরকারের মাধ্যমে। ২. বাংলাদেশের সংবিধানই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন যেখানে জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল আইন বাতিল এবং অস্তিত্বহীন বলে পরিগণিত হবে। ৩. আইন সভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ প্রজাতন্ত্রের তিনটি মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হবে। আইন সভা আইন প্রণয়ন করবে, নির্বাহী বিভাগ শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং বিচার বিভাগ সাংবিধানিক নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করবে। ৪. প্রজাতন্ত্রের সকল কার্যক্রম সংবিধানের অধীনে পরিচালিত হবে। ৫. জরুরী অবস্থা একমাত্র রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবনের আসন্ন বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করতে পারবেন। ৬. কোন ব্যক্তি কর্তৃক (তার সামাজিক পর্যাদা নির্বিশেষে) নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল কার্যক্রম দেশদ্রোহিতা বলে গণ্য হবে। ৭. ঘোষণাপত্র শুধু প্রচলিত আইন অথবা সংবিধানের অধীন প্রণীত হবে; কোন নতুন আইন অপরাধ অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে প্রণীত হবে না। ৮. বাংলাদেশে মার্শাল ল’ বলতে কোন আইন নেই। যে কোন ব্যক্তির সামরিক শাসনের ঘোষণা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হবে এবং অধীনস্থতার নীতি কোন রকম প্রতিরক্ষা হিসেবে গণ্য হবে না। ৯. ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর সকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক সামরিক শাসনের অধীনে ক্ষমতা গ্রহণ ছিল অবৈধ আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং এখতিয়ারবহির্ভূত। ১০. ৬ নবেম্বর ১৯৭৫ এর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ এবং প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে ৮ নবেম্বর ১৯৭৫ সালে তার নিযুক্তি ছিল সংবিধানবহির্ভূত। ১১. ২৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তৃতীয় ঘোষণার মাধ্যমে প্রধান সামরিক শাসকের পদ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিকট হস্তান্তর ছিল সংবিধানের আওতাবহির্ভূত। ১২. বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম কর্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মনোনয়ন এবং পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান কর্র্তৃক রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ ছিল অবৈধ এবং এখতিয়ারবহির্ভূত। ১৩. ১৯৭৭ সালের রেফারেন্ডাম অর্ডার (মার্শাল ল’ অর্ডার নং-১, ১৯৭৭) এর প্রকৃতি সংবিধানে অপরিচিত এবং এটি প্রণীত হয়েছে একমাত্র একজন ব্যক্তির সুবিধার্থে। তিনি হলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৪. ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত প্রণীত সকল প্রক্লেমেশন, মার্শাল ল অর্ডার এবং রেগুলেশনসমূহ ছিল বেআইনী এবং বাতিলযোগ্য। ১৫. অনুচ্ছেদ-৩ এ ছিল বেআইনী। কারণ, সকল প্রক্লেমেশনসমূহে বৈধতা দান, এমএলআর এবং এমএলও সমূহের বৈধতা দানের জন্য প্রণীত হয়। সেগুলোও তাই বেআইনী। ১৬. আইন সভা শুধু সংবিধানের অধীন যে কোন আইন প্রণয়ন করতে পারবে (পঞ্চম সংশোধনী আইন-১৯৭৯ আল্ট্রাভায়রার্স)। ১৭. ৪র্থ সিডিউলে অনুচ্ছেদ-৩ এবং ১৮ এর সংযোজন সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদের এখতিয়ারবহির্ভূত। ১৮. দেশের কোনও সঙ্কট সংবিধান অবজ্ঞার ক্ষেত্রে অজুহাত হিসেবে গণ্য হবে না। ১৯. 19. Violation of the Constitution is a grave legal wrong and remains so for all time to come. It cannot be legitimized and shall remain illegitimate for ever, however, on the necessity of the State only, such legal wrongs can be condoned in certain circumstances, invoking the maxims, Id quod Alias Non Est Licitum, Necessitas Licitum Facit, salus populi est suprema lex and salus republicae est suprema lex ২০. ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সকল কার্যক্রম past and closed transaction হিসেবে ক্ষমা করা যাবে এজন্য নয় যে এগুলো আইনসিদ্ধ ছিল বরং প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য। যদিও এগুলো সব সময়ের জন্যই বেআইনী এবং বাতিল। ২১. Condonations of provisions were made, among others, in respect of provisions, deleting the various provisions of the Fourth Amendment but no condonation of the provisions was allowed in respect of omission of any provision enshrined in the original Constitution. The Preamble, Article 6, 8, 9, 10, 12, 25, 38 and 142 remain as it was in the original Constitution. No condonation is allowed in respect of change of any of these provisions of the Constitution. Besides, Article 95, as amended by the Second Proclamation Order No. IV of 1976, is delcared valid and retained. অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সামরিক ডিক্রির মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের যে অবৈধ রেওয়াজ সৃষ্টি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে পঞ্চম সংশোধনী ইতোমধ্যেই অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। আপীল বিভাগে আপীল শুনানির অপেক্ষায় সপ্তম সংশোধনী ও অষ্টম সংশোধনী বিচারিক প্রক্রিয়ায় অথবা সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে ১৯৭২-এর মৌলিক সংবিধানের আদল ফিরিয়ে আনা অতি আবশ্যকীয় একটি পদক্ষেপ। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র বা মূল সংবিধান বা সংবিধানের প্রস্তাবনা কখনই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানী সামরিক ধারার রাজনীতিতে সামরিক শাসনের নাগপাশে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারাকে বার বার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। সংবিধান কোন শাসকের পোশাক বা ইউনিফরম না, যে ইচ্ছা করলে তার মাপে কেটে কুটে বানিয়ে দেয়া যাবে। সংবিধানবহির্ভূত শাসনের ছায়ায় যেসব পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে তা অসাংবিধানিক হিসেবে বাতিল ঘোষণার দাবি রাখে। আমেরিকার প্রধান বিচারপতি মারবুরী বনাম মেডিসনের মামলায় রায়ে বলেছেন যে, “ঞযব ঢ়বড়ঢ়ষব যধাব ধহ ড়ৎরমরহধষ ৎরমযঃ ঃড় বংঃধনষরংয, ভড়ৎ ঃযবরৎ ভঁঃঁৎব মড়াবৎহসবহঃ, ংঁপয ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ধং, রহ ঃযবরৎ ড়ঢ়রহরড়হ, ংযধষষ সড়ংঃ পড়হফঁপব ঃড় ঃযবরৎ ড়হি যধঢ়ঢ়রহবংং. ঞযব বীবৎপরংব ড়ভ ঃযরং ড়ৎরমরহধষ ৎরমযঃ রং ধ াবৎু মৎবধঃ বীবৎঃরড়হ; হড়ৎ পধহ রঃ হড়ৎ ড়ঁমযঃ রঃ ঃড় নব ভৎবয়ঁবহঃষু ৎবঢ়বধঃবফ. ঞযব ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ঃযবৎবভড়ৎব, ংড় বংঃধনষরংযবফ, ধৎব ফববসবফ ভঁহফধসবহঃধষ. অহফ ধং ঃযব ধঁঃযড়ৎরঃু ভৎড়স যিরপয ঃযবু ঢ়ৎড়পববফ রং ঝঁঢ়ৎবসব, ধহফ পধহ ংবষফড়স ধপঃ, ঃযবু ধৎব ফবংরমহবফ ঃড় নব ঢ়বৎসধহবহঃ.” রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারনামার ২৫ অনুচ্ছেদে ভোটের অধিকার অর্থাৎ স্বাধীন, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণের অধিকার স্বীকৃতি পায়। এই অঙ্গীকারনামায় স্বাধীন ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার গঠনের অধিকার স্বীকৃতি লাভ করে। তেমনি একইভাবে বাংলাদেশ সংবিধানের ৭ ও ১১ অনুচ্ছেদে সংবিধানের প্রাধান্য, মানবিক ও মানব সত্তার মর্যাদা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিধানও প্রণীত হয়। জনগণের ক্ষমতা কার্যকর ও সচল রাখার প্রয়োজনে মত প্রকাশের ও তথ্য জানার এবং বৈধ উদ্দেশ্যে সংগঠিত হওয়ার অধিকার; পাশাপাশি সংবিধানের সপ্তম ভাগে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সরকার গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে তার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে’ বাস্তবায়ন আবশ্যকীয়। তাই এটা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়। ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রজাতন্ত্র হইবে গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ বাংলাদেশে বিগত ২০০৬ সালের নবেম্বর মাসে তৎপূর্ববর্তী জোট সরকার নিয়ন্ত্রিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ফলে যে সাংবিধানিক বিপর্যয় ঘটেছিল সেটা অতীতের সাংবিধানিক স্খলনের আরেকটি নতুন সংস্করণ মাত্র। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা তথা সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যে কোন রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্য বিশেষভাবে আবশ্যকীয়। আমরা পর পর তিন বার এ ধারিবাহিকতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি। দু’বার সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে, তৃতীয়বার জোট সরকার নিয়ন্ত্রিত অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পদায়নের মাধ্যমে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া ভোটার লিস্ট এবং সুষ্ঠু ভোটার লিস্টবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে সকল বিরোধী দল একত্রিত হয়। প্রতিকার চাইলে আদালতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নজিরবিহীন এক অসাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে মামলাটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দিলেন। ফলশ্রুতিতে আমরা পেলাম সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে অভিজ্ঞতা তার আলোকে পুনঃমূল্যায়নের প্রয়োজন। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা যাবে কিনা। এর ফলে কী কী সাংবিধানিক কুফল জনগণ লক্ষ্য করেছে তার মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়োগ করার ফলে দুটি প্রতিষ্ঠানই বিতর্কিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। প্রধান বিচারপতির নিয়োগ, বয়স বৃদ্ধি, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয় সরকারী দলের মাথায় থাকা যে অস্বাভাবিক নয় জনগণ তা লক্ষ্য করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যখন রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছিল তখন তাদের উদ্দেশ্য ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে পনেরো বছরের জন্য অনুমোদন করা, যতদিন পর্যন্ত না একটি যোগ্য নির্বাচন কমিশন গড়ে ওঠে। চলবে...
×