ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হতো না ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৪ নভেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হতো না ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে নিজের বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘১৯৮০ সালে আমি কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলাম। যে কক্ষে আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই কক্ষেই আমি বন্দী ছিলাম। চার নেতার রক্তের দাগ এখনও মুছেনি। আমার পিতার শেষ নিঃশ্বাসের উত্তাপ এখনও পাই। পিতার মুখ শেষবারের মতো দেখতেও পারিনি।’ বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় চার নেতার স্মৃতি নিয়ে আয়োজিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মহাপ্রাণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘জাতীয় চার নেতা জীবনেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, মরণেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বেইমানি করে মীরজাফর বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে অস্তমিত করেছিলেন। যা ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মাটিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ফিরে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর নির্দেশনায় চার নেতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় চার নেতার সঙ্গে ছিল বিশ্বাসঘাতক খুনী মোশতাক। একাত্তর সালেও সে বেইমানি করার চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তানীদের সঙ্গে আঁতাত করার চেষ্টা করেছিল। জাতীয় চার নেতার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতার কারণে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। মৃত্যুর পর বাবার মুখ শেষবারের মতো দেখার সুযোগ না পেলেও দুঃখ নেই দাবি করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘পিতার মুখ শেষবারের মতো দেখতে পারিনি। আমি তখন রাজনীতি করতাম। আমাকে পেলে তখন মেরে ফেলা হতো। কিন্তু আমি গর্ব ও অহঙ্কারের সঙ্গে বলতে পারি, আমি মোশতাকের মতো বেইমানের সন্তান নই। আমার পিতা জীবন দিয়েছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেননি।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার হত্যাকা-ের বিচার হতো না। পাহাড়সম বাঁধা দূর করে এবং নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর নানা অজুহাতে জাতীয় চারনেতা হত্যা মামলা ঝুঁলিয়ে রেখে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আপীলের মাধ্যমে আমরা এ মামলার বিচারের রায় পেয়েছিলাম। জাতীয় চার নেতাকে খন্দকার মোশতাক নিজের দলে নেয়ার জন্য অনেক প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা যেমন সে প্রলোভনে নিজেদের বিক্রি করেননি, তেমনি মৃত্যুকেও ভয় করেননি। তরুণ প্রজন্মের নেতাদের জাতীয় চার নেতার আদর্শ থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যু অবধারিত জেনেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি জাতীয় এই চার নেতা।’ এর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিআইজির দায়িত্বে থাকা কাজী আব্দুল আওয়ালের ছেলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল হত্যাকা-ের সেই ভয়াল রাতের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আমাদের বাসার টেলিফোনে কল আসে। আমরা থাকতাম দ্বিতীয় তলায়। নিচতলায় ছিল ফোন। আমি ফোন রিসিভ করি। তখনকার আইজি প্রিজন নুরুজ্জামান সাহেব বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান। এরপর বাবা আর ঘুমাননি। কাপড় পরে বেরিয়ে গেলেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি হয়েছে। বাবা জানিয়েছিলেন, ‘আইজি সাহেব ডেকেছেন। অফিসের কাজে যেতে হবে।’ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, পরদিন সকালে কয়েদিসহ কয়েকজন আমাদের বাসায় আসল। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, চার জাতীয় নেতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। বাবার বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ৩ নবেম্বর রাতে সেনা সদস্যরা বার বার জানতে চাচ্ছিল, জাতীয় চার নেতা কোথায়? জেল কর্তৃপক্ষ কি দরকার জানতে চাইলে বলে, শ্যূট করব। এই শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অবশেষে জেল থেকে বলা হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলি। তখনকার সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন মোশতাক। তার সঙ্গে আইজি প্রিজন কথা বললে তিনি বলেন, ওরা মারতে গেছে মারুক আপনি কি করবেন। এরপর জাতীয় চার নেতাকে এক কক্ষে নিয়ে এসে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেকার উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ সালাউদ্দিন, কারা উপ-মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হোসেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও কারা কর্মকর্তারা। এর আগে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ নেতৃবৃন্দ ও কারা মহাপরিদর্শক প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তাঁরা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেন। ৭ নবেম্বর বিপ্লব নয়, হত্যা দিবস ॥ সকালে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৭ নবেম্বরকে বিএনপির ‘জাতীয় বিপ্লব দিবস’ পালনের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা বিএনপির কিসের বিপ্লব দিবস? এটা তো হত্যা দিবস।’ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতীয় চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু আজীবন সহচর, মরণেও সহচর। বঙ্গবন্ধু হত্যার যেমন বিচার হয়েছে, জাতীয় চার নেতা হত্যারও বিচার হয়েছে। বাঙালী জাতি স্বস্তি পেয়েছে। জাতীয় চার নেতার পরিবারও স্বস্তি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার এ কন্যার নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ ২০১৯ সালের নির্বাচনেও সেই পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট যারা জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করব। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মনসুর ভবনে মিলাদ-দোয়া মাহফিল ॥ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব মনসুর ভবন, ধানমণ্ডি-৭০১, রোড ১৩ (নতুন)-এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ-দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর পুত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এসএম কামাল হোসেন, নুরুল ইসলাম ঠা-ু, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মিলাদ মাহফিলে জাতীয় চার নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
×