ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প বাস্তবায়নে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনছে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৪ নভেম্বর ২০১৬

প্রকল্প বাস্তবায়নে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তা বাড়লেও বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতায় ঘাটতি থাকায় প্রায় প্রতি অর্থবছরেই এডিপি কাটছাঁট করতে হয়। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনছে সরকার। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনতে কাঠামোটির অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। এডিপির আকার গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। একই সময়ে এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। তবে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সক্ষমতায় ঘাটতি থাকায় প্রায় প্রতি অর্থবছরই এডিপির বরাদ্দ কমানোর প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রকল্প অনুমোদনের পরে বিভিন্ন সমীক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক/বিশেষজ্ঞ নিয়োগসহ পণ্য/পূর্ত কাজের ক্রয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়। এর ফলে প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু করতে প্রায় এক থেকে দেড় বছর দেরি হয়। সূত্র জানায়, এসব প্রেক্ষাপটে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রকল্প প্রণয়ন পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রস্তুতিমূলক কাজের ব্যয় সংস্থানের জন্য অর্থ বরাদ্দের উৎস, ব্যবহার পদ্ধতি ও কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ সংক্রান্ত ইআরডির প্রস্তাব অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প মনিটরিং কমিটি কর্তৃক সমর্থিত। প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের নীতি ও পদ্ধতি এবং প্রস্তুতিমূলক কাজের চেকলিস্ট প্রণয়ন সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশনের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ‘প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ এবং ‘প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের চেকলিস্ট’ এর খসড়াসমূহ চূড়ান্ত করেছে। প্রকল্পের ডিপিপি/টিপিপি অনুমোদনের আগে প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রস্তুতিমূলক কাজের অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থের উৎস ও খাত, প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন, অর্থের ব্যবহার এবং তদারকির ব্যবস্থা ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দিক নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে এ নীতিমালাটির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাজেট ব্যবস্থাপনায় ‘প্রকল্পের প্রণয়ন ও প্রস্তুতিমূলক কাজ’ শীর্ষক একটি পৃথক ‘উন্নয়ন ব্যয়’ এর খাত সৃজন করা। অর্থ বিভাগের অনুকূলে উক্ত ব্যয় খাতে অর্থবছর ভিত্তিক বাজেটের সংস্থান করা এবং এ নীতিমালায় নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার একক প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ বিভাগ কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ করা। প্রস্তুতিমূলক কাজের ব্যয় অর্থায়নের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে, প্রকল্পে প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ অন্যান্য সমীক্ষা ও বিভিন্ন স্টাডি, খসড়া ডিপিপি/টিপিপি প্রণয়ন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি অধিগ্রহণজনিত পুনর্বাসন, পূর্ত কাজের ডিজাইন প্রণয়ন, পণ্য/পূর্ত/সেবা কাজের বিডিং ডকুমেন্ট প্রস্তুত ও প্রয়োজনে পণ্য/পূর্ত সেবা দরপত্র প্রক্রিয়াকরণসহ কন্ট্রাক্ট এ্যাওয়ার্ড প্রদান-পূর্ব সব কাজ সম্পাদন এবং অন্তর্বর্তীকালীন প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রস্তুতি টিমের অফিস পরিচালনা ব্যয়। তবে নতুন জনবল নিয়োগ ও যানবাহন/যন্ত্রপতি সংগ্রহের জন্য এ খাতের অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। সুপারিশে বলা হয়েছে, এ খাত থেকে একক প্রকল্পের অনুকূলে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা এবং ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমির প্রকৃত দামের সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা। তবে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয়ের পরিমাণ ৫০ কোটি বা তার বেশি হলে অধিগ্রহণযোগ্য ভূমি, পরিমাণ এবং ব্যয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতি নিতে হবে। মূল প্রকল্পের ডিপিপি/টিপিপিতে প্রস্তুতিমূলক কাজসমূহ ও সংশ্লিষ্ট ব্যয় দেখাতে হবে। একইভাবে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের চেকলিস্ট প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রকল্পের ডিপিপি/টিপিপি অনুমোদনকারী বা বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ চেকলিস্টে বর্ণিত কার্যাদি সম্পাদনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে পারবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ পাবে। জিওবি অর্থায়িত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট চেকলিস্টে তিনটি ধাপে মোট ২০টি করণীয় এবং বৈদেশিক অর্থায়ন পুষ্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্ট চেকলিস্টে চার ধাপে ২২ করণীয় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ অনধিক ছয় মাস এবং বৈদেশিক অর্থায়ন পুষ্ট প্রকল্প এবং প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কার্যাদি থাকলে প্রস্তুতিমূলক কাজ অনধিক নয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
×