ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা নওফল হায়দার

কার্টুনের আঁতুড়ঘর

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

কার্টুনের আঁতুড়ঘর

তিনজন টগবগে তরুণ কি খেয়ালের বসে কার্টুন নির্মাণ করতে বসে গেল সে ভাবনা শুধু তারাই বলতে পারে। আর সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রযুক্তিগত যে অবকাঠামো তার সবই নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের এই প্রযুক্তিপ্রবল প্রযুক্তিবিদরা। যে ভাবা সেই কাজ। করলও তাই। এদিক-ওদিক না তাকিয়ে শ্রেফ কার্টুন নির্মাণ। জনকণ্ঠের আইটি ডটকমকে চকডাস্টের এমডি ইমরান জানায়, তারা বিভিন্ন পেশার লোক হয়েও দেশের সব শ্রেণীর মানুষের জন্য বিশেষ করে ছোট্ট সোনামনিদের জন্য বিশেষ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের কার্টুন তৈরি করতে চায়। আর সেই লক্ষ্যে চলছে নানা ধরনের বিশ্লেষণাত্মক কাজ। কেউ চরিত্র নির্মাণে ব্যস্ত, কেউ এনিমেশন তেরিতে ব্যস্ত কেউ বা ব্যস্ত সংলাপ নির্মাণে। চকডাস্টের প্রধানের কাছে প্রশ্ন করেই বসলাম, এই প্রকল্প নির্মাণে আসতে পারে বাধা আর তাছাড়া এখনও এতবড় বিনিয়োগ করে কেউ এই রকম প্রকল্প হাতে নেয়নি। দেশে যতটুকু কাজ হয় তার সবটুকু কাজ করতে হয় বিদেশীদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে। সোজা কথায় ফ্রিল্যাংন্সিং। প্রতিকূলতা রয়েছে সবখানে, তাহলে অনেক বড় ঝুঁকি নেয়া হয়ে গেল না। ইমরান হেসে, বেশ মজা করে এই প্রশ্নের উত্তর দিল। ইমরান জনকণ্ঠকে জানায় যে, তার সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে এই কোম্পানি দাঁড় করিয়েছে। বিশেষ কিছু চাইবার নেই কারও কাছে, কিছু করতে হবে, কিছু দিতে হবে দেশকে আর সেই অনুপ্রেয়ণা নিয়েই এই কাজে নেমেছি আমরা। ইমরানই পরিচয় করিয়ে দেয় চঞ্চল আরও দুই তারুণের সঙ্গে। একজন সাইফুল ইসলাম সোহান, যিনি চকডাস্টের ফিন্যান্স ডিরেক্টর অন্যজন রাহমানুল হক, রনো। তিনজনই খুবই চঞ্চল ও স্বপ্নবাজ। আলোচনায় বার বার উঠে আসছিল তাদের স্বপ্নের কথা। এরই মধ্যে চকডাস্ট তাদের প্রকল্পের যে সহজ সরল উপস্থাপন করল তাতে যে কেউ সহজেই নিতে পারবে প্রত্যেকটি বিষয়। তাই এককথায় নজর কাড়ার মতো। অফিসের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পৃথিবীখ্যাত জনপ্রিয় এনিমেশন চরিত্র। এছাড়াও চকডাস্ট তাদের কর্মী নিয়োগে নিয়ে এসেছে নতুনত্ব। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিন্তু মেধাবী তাদের দলে ঠাঁই দিয়েছে। যেন সব মিলে এক দুর্দান্ত ছুটন্ত দল। মজার করা আর হাসিঠাঠ্টার মধ্যদিয়ে চালানো হচ্ছে নানা ধরনের গবেষণা। চলছে গ্রুপ ডিসকাশন। হৈহুল্লোর লেগেই আছে সারাক্ষণ। যেন সব কমিক চরিত্র। পিসিতে বসে কেউ দিচ্ছে নির্দেশনা দিচ্ছে আবার কেউ শব্দ মিশ্রণ করছে। চকডাস্টের ফিন্যান্স ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম সোহান জনকণ্ঠকে জানায় যে, তাদের তৈরি করা প্রকল্প এই বছরের শেষের দিকে একটি বিশেষ চরিত্র নির্মাণ করতে পারবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক মানের সকল পদক্ষেপ মূল্যায়ন করে এগিয়ে যাবে। এরই মধ্যে তারা তাদের কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষের দিকে নিয়ে এসেছে। কি ধরনের কার্টুন নির্মাণ করা হবে এমন প্রশ্নের সহজ উত্তর দিল সোহান। সবার ভাললাগে এমন একটি ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে আমাদের গবেষণা চলছে। এছাড়াও বিশ্ব নন্দিত চরিত্রগুলোর পাশাপাশি রেখে চলছে গ্রুপ ডিসকাশন। হয়ত এর মধ্য থেকে বেড়িয়ে আসবে আমাদের স্বপ্নের চারিত্রের ভার্চুয়াল রূপ। আর এখন যেমন অন্য দেশের কার্টুন চরিত্রগুলো আমাদের ছোট্ট বন্ধুরা চোখের পাতা না ফেলে দেখে। একদিন এই দেশের তৈরি করা কার্টুন দেখবে সারা বিশ্বের ছোট্ট বন্ধুরা। যেন এক স্বপ্নের ফানুস মেলে ধরেছে চকডাস্ট। যে কারও গর্বে ভরে যাবে এসব প্রযুক্তিবিদদের কল্পনা আর সম্ভাবনার কথা শুনে। সেরা পাঁচ কার্টুন-চরিত্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের সঙ্গে কথা বলে সর্বকালের সেরা পাঁচ কার্টুন চরিত্রের এই তালিকা প্রকাশ করেছে লাসফাইভ নামে একটি ওয়েবসাইট। দেখ তো, তোমার পছন্দের সঙ্গে মেলে কি না? টম এবং জেরি : কার্টুন দেখতে ভালবাসে, অথচ টম এ্যান্ড জেরি পছন্দ করে না, এমন কাউকে সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই প্রথম স্থানটি যে এই দুই চিরশত্রু দখল করবে, সেটা বোধ হয় তোমাদের জানাই ছিল। এক্ষেত্রে টমকে বাদ দিয়ে জেরিকে কিংবা জেরিকে বাদ দিয়ে টমকে প্রথম ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে যে ভাবাই যায় না! তাই যুগ্মভাবে দুজনই শিশুদের পছন্দের তালিকায় প্রথম। পপাই : ‘আই এ্যাম পপাই দ্য সেইলর ম্যান’, হুঁ, পপাই নামের এই নাবিককে তোমরা সবাই চেন। এমনিতে রোগা-পটকা হলে কী হবে, একবার স্পিন্যাক খেয়ে নিলেই গোটা দশেক গু-াপা-া সে এক হাতে কাবু করতে পারে। পপাইয়ের হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি কিংবা মারপিট, ছোটবড় সবাইকে হাসিয়ে ছাড়ে। মিকি মাউস : মিকি মাউস বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র। সেই ১৯২৮ সালে জিজনির এই চরিত্রর জন্ম, অথচ এখনও টিভিতে মিকি মাউস দেখলেই আমরা কেমন রিমোটের দখল নিয়ে নিই, তাই না? মিকি মাউস শুধু দেখতেই নয়, আঁকতেও ছোটরা খুব ভালবাসে। বাগস বানি : লুনি টিউনস! শুনলেই বাগস বানির কথা মনে পড়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে মজার কার্টুন চরিত্রগুলোর মধ্যে বাগস বানি অন্যতম। তার ‘হোয়াটস আপ ডক’ সংলাপটিও ভীষণ জনপ্রিয়! বাগ তার হাস্যরস আর বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ দিয়ে সহজেই জয় করেছে কার্টুনপ্রেমীদের মন। স্কুবি ডু : স্কুবি ডুও নিশ্চয়ই তোমাদের ভীষণ প্রিয়, তোমরা অনেকেই একেবারে ছোট্টবেলা থেকে স্কুবির মজার সব কা-কীর্তি দেখে হেসে লুটোপুটি খেয়েছ। শ্যাগির সঙ্গে আজব সব ঝামেলা পাকিয়ে, বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার হাস্যকর সব উপায় বের করাই হলো স্কুবির কাজ। হাউ টু ট্রেইন ইউর ড্রাগন, হরটন হিয়ারস এ হু, মেঘমাইন্ড, রিও, ডিসপিসিবল মি, কারস, আইস এইজ আরও অনেক নামকরা জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র। সাহিত্য ক্ষেত্রে রম্য রচনা আর চিত্রকলার কার্টুন একই অর্থবহন করে থাকে। সমাজের নানা অসঙ্গতি ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করাটাই কার্টুনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে জানি আমরা। নিজের বক্তব্য প্রকাশে তীর্যক ভাব, রাগ-ক্ষোভ ফুটিয়ে তোলায় কার্টুনের জুড়ি নেই। এক কথায় প্রতিবাদী মনোভাবের জন্য কার্টুন শক্ত হাতিয়ার। কলকাতার বর্ষীয়ান কার্টুনিস্ট চন্ডী লাহিড়ীর মতে পুরো সোস্যালিস্ট আন্দোলনটাই দাঁড়িয়ে আছে কার্টুন আর পোস্টারের ওপর। বিশ্বজুড়ে যখন কার্টুন বিপ্লব যখন শুরু হয় তখন সেখান থেকে পিছিয়ে ছিল না বাংলার মানুষজনও। আজকাল অতীত শিল্পীদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের কার্টুন চিত্রের ঝাঁজ দেখে বোঝা যায় বাংলার কার্টুনের জয়যাত্রা আজও অটুট। বাংলা অঞ্চলে প্রথম এডিটরিয়াল কার্টুন প্রকাশ পায় পশ্চিমবঙ্গের সে সময়কার অমৃত বাজার পত্রিকায়। তখন সময়কাল ছিলো ১৮৭২ সাল। তার দুই বছর পরই ১৮৭৪ এ বিখ্যাত কার্টুন হরবোলা ভাঁড় এবং একই বছর প্রকাশিত হয়েছিল বসন্তক।
×