ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিসের আলোচনা

অভিবাসন সঙ্কট সমাধানে বিশ্ব ঐক্য প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

অভিবাসন সঙ্কট সমাধানে বিশ্ব ঐক্য প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ব জুড়েই চলছে অভিবাসন সঙ্কট। এই সমস্যার সমাধনে বিশ্ব ঐক্যের প্রয়োজন। অভিবাসীদের নিরাপদ রাখতে হলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তারা যে কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হবেই। কারণ ‘খাদ্য’ একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে যখনই কেউ বঞ্চিত হতে থাকবে তখনই তাকে অপরাধের দিকে নিয়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে সমস্যাটি এখন জটিল আকার ধারণ করছে। সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিস) উদ্যোগে ‘মাইগ্রেশন্স এ্যান্ড সিকিউরিটি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকরা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেলেকি রিপাবলিকের (গ্রীস) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত দিমিট্রিওস পারাসকেভোপোলাস। আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসান, রামরুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী ও বিআইআইএসএস’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আব্দুর রহমান। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের বোর্ড অব গবর্নরসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক ছাড়াও ঢাকায় বিদেশী দূতাবাসসমূহের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, অভিবাসী বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকবৃন্দ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত, সাবেক সচিব ও শিক্ষাবিদরা আলোচনায় অংশ নেন। দিমিট্রিওস পারাসকেভোপোলাস বলেন, সারা পৃথিবীতেই অভিবাসী সমস্যা একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা রোধে দেশে দেশে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং যারা অভিবাসী হতে চায় তাদের জন্য বেশি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করলে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অধরাই থেকে যাবে। এর সঙ্গে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে তবেই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। আলোচকরা বলেন, অভিবাসীদের নিরাপদ রাখতে না পারলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। খাদ্যের জন্য যে কোন অপরাধ করতে তারা পিছপা হবে না। এটা যে শুধু বিদেশী অভিবাসীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা নয়। দেশের ভেতরেও মানুষ অভিবাসী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্য যে কোন উপায়ে মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে জীবিকার সন্ধানে। জীবিকার জন্য দেশের ভেতরে অভিবাসীরাও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে অনেক সময়। তাই অভিবাসীদের নিরাপদ রেখে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসনের সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতার সম্পর্ক নেই বরং বেকারত্ব, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যের কারণেই, মানুষ অপরাধে লিপ্ত হয় আর তখনই তৈরি হয় নিরাপত্তা সঙ্কট। তবে আলোচকরা এও বলেছেন, যখন কোন দক্ষ মানুষ অভিবাসী হয়, তখন অভিবাসন গ্রহণকারী দেশ তাকে সাদরে গ্রহণ করে তবে অদক্ষদের বোঝা মনে করে। আর তখনই চলে আসে নিরাপত্তার প্রশ্ন যার কিছুটা ঠিক, কিছুটা অতিরঞ্জিত। অধ্যাপক ড. তাসনিম ছিদ্দিকী বলেন, নিরাপদ অভিবাসন না হলে পৃথিবী জুড়েই ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। অভিবাসীরা যে কোনভাবেই অভিবাসী হোক না কেন তাদের নিরাপদ রাখতে হবে। নিরাপদ রাখতে হলে তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে। যদি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে সিকিউরিটি সমস্যা তৈরি হবেই। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। এখন সবার আগে নিরাপদ অভিবাসন তৈরি করতে হবে। বিআইআইএসএসের সিনিয়র রিসার্স অফিসার আবু শাহ মোঃ ইউসুফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। দেশে সরকার অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। পাচার করে কাউকে বিদেশে পাঠিয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিরাপদ অভিবাসনের জন্য একটি আধুনিক আইন পাস করা হয়েছে। কোন নাগরিককে অবৈধভাবে পাচার করা যাবে না। অবৈধভাবে অভিবাসন ঘটালে জেল জরিমানা থেকে শুরু করে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
×