ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় দিনশেষে বাংলাদেশ পিছিয়ে ৭২ রানে

আশা দেখাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০১৬

আশা দেখাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ লর্ডসের পর ম্যানচেস্টার- ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা সর্বশেষ দুই টেস্টে শতক হাঁকিয়েছিলেন ২০১০ সালের জুনে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বরাবরই ব্যাট হাতে দুরন্ত তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক টেস্ট রানের মালিক চট্টগ্রামে চলমান সিরিজের প্রথম টেস্টেও ইংলিশ বোলারদের বিরুদ্ধে সেই ধারাবাহিকতা রাখলেন। ৬ বছর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেমে এবারও সেঞ্চুরির পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন এ বাঁহাতি। তবে ৭৮ রানে ফিরে গেলেন। তার এই ইনিংসের সুবাদেই প্রথম দিনে বোলারদের মতো দ্বিতীয় দিনে ব্যাটসম্যানদের সাফল্যে ভাল একটা অবস্থান নিয়ে শেষ করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৪ মাস বিরতির পর ব্যাটিং নিয়ে শঙ্কা থাকলেও সেখানে স্বস্তির দেখা মিলেছে ২৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাজে শুরুর পরও। দ্বিতীয় দিনশেষে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা তুলেছে ৫ উইকেটে ২২১ রান। এখন পর্যন্ত ৭২ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রতি সেশনের শেষদিকে উইকেট হারানোয় ইনিংসের চিত্রটা আরও ভাল হয়নি। তবে ৩১ রান নিয়ে ব্যাট করা সাকিব আল হাসানকে সঙ্গ দিচ্ছেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা শফিউল ইসলাম। তাই লিড নেয়ার আশা দেখছে বাংলাদেশ। সকালে এক ঘণ্টার মধ্যেই আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে নিজেদের সর্বনিম্ন ২৯৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা এবং বয়সের বিবেচনায় দেশসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়ে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ৬ উইকেট শিকার করেন ৮০ রান দিয়ে। আগের দিন তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজ পথ দেখিয়েছিলেন। একমাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল ইসলাম সে কারণেই যেন শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে পথের দিশা পেয়ে গেলেন। দিনের প্রথম বলেই তিনি ক্রিস ওকসকে শর্ট লেগে দাঁড়ানো মুমিনুল হকের ক্যাচে পরিণত করলেন। দিনের শুরুর এই সাফল্যই বাংলাদেশ দলকে উজ্জীবিত করেছে। কারণ ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপে বেশ ভাল ব্যাট করতে পারেন এমন ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বশেষ এই ওকসই টিকে ছিলেন। আগের দিন ৩৬ রানে অপরাজিত থেকে আর কোন রানই যোগ করতে পারেননি তিনি। এরপর কিছুটা দ্রুতবেগে রান তুলতে থাকেন আদিল রশিদ। কিন্তু তাকেও (২৬) ফিরিয়ে দেন তাইজুল, শর্ট কাভারে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেন সাব্বির রহমান। আগের দিন ম্যাজিক দেখানো মিরাজ শুরু থেকে বল করলেও উইকেট পাচ্ছিলেন না। কিন্তু বেন ডাকেটকে বোল্ড করে ইংলিশদের ভেতর কাঁপন ধরানো এ ১৮ বছর বয়সী তরুণ শেষটাও করলেন স্টুয়ার্স ব্রডকে সাজঘরে ফিরিয়ে। ব্রডের ক্যাচ ধরে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক ডিসমিসালের মালিকও হয়ে যান মুশফিক। ক্যারিয়ারের ৪৯তম টেস্টে তিনি ৭৭ ক্যাচ ও ১১ স্টাম্পিংসহ ৮৮ ডিসমিসাল করে ছাড়িয়ে গেছেন খালেদ মাসুদ পাইলটকে। পাইলট ৪৪ টেস্টে ৭৮ ক্যাচ ও ৯ স্টাম্পিং করেছিলেন। তবে ইনিংসে সর্বাধিক ৫ ক্যাচ লোফার রেকর্ড আছে মুশফিকের, পাইলট এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ ক্যাচ নিয়েছিলেন একবারই। আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ৩৫ রান যোগ করেই প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই ২৯৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটিই টেস্টে সর্বনিম্ন স্কোর ইংলিশদের। এর আগে ২০০৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২৯৫ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল তারা। মাত্র ১৮ বছর ৩৬১ দিন বয়সে অভিষেক হওয়া মিরাজ বয়সের বিবেচনায় ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখালেন। ৮০ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অবশ্য ৭৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে অভিষেকের সেরা বোলিং সোহাগ গাজীর দখলেই আছে। বয়স বিবেচনায় এত কম বয়সে ৬ উইকেট নেয়ার ঘটনায় স্পিনারদের ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড মিরাজের। তবে ইনিংসে ৫ বার তার বেশি উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ৭৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স এক নম্বরে (১৮ বছর ১৯৩ দিন)। ১৮ বছর বয়সী আর কেউ অভিষেকের এক ইনিংসে ৬ উইকেট নিতে পারেননি। তবে ৫ উইকেট করে নিয়েছেন পাক স্পিনার শহীদ আফ্রিদি (৫/৫২; ১৮ বছর ২৩৫ দিন) ও পাক পেসার শহীদ নাজির (৫/৫৩; ১৮ বছর ৩১৮ দিন)। ১৯৮৭ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর আর তাদের সব উইকেট প্রতিপক্ষ স্পিনাররা নিতে পারেনি। ২৯ বছর আগের সেই স্মৃতিটা এবার বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিল তাদের। তিন স্পিনার মিরাজ (৬), সাকিব (২) ও তাইজুল (২) মিলে গুটিয়ে দিয়েছেন ইংলিশদের ইনিংস। মধ্যাহ্ন বিরতির মাত্র এক ঘণ্টা আগে ব্যাট হাতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে যেমন অফস্পিনার মিরাজ শুরু করেছিলেন সেভাবেই ইংলিশ অফস্পিনার মঈন আলীও উইকেট নিতে শুরু করলেন। বোলিংটা অবশ্য ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার থেকেই অফস্পিনার গ্যারেথ ব্যাটি করেছিলেন। দারুণ খেলতে থাকা ইমরুল কায়েসকে (২১) মধ্যাহ্ন বিরতির আগে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে এবং পঞ্চম বলে মুমিনুল হককে (০) শিকার করেন মঈন। দীর্ঘ সাড়ে ১৪ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হলেন, ৩ বল খেলেই শূন্য রানে সাজঘরে ফিরলেন অথচ দীর্ঘ এ বিরতির আগে ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন এ বাঁহাতি টপঅর্ডার। দলীয় ২৯ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ও স্বস্তি নিয়ে ইংলিশরা বিরতিতে যায়। এরপর অবশ্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দারুণ সামলেছেন শুরু থেকেই সুস্থির ও বুঝেশুনে খেলা তামিম। তৃতীয় উইকেটে ৯০ রান যোগ করেন তারা। ক্যারিয়ারের ১৯তম (ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫ম) অর্ধশতক পেয়ে যান। তবে চা বিরতির আগে শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ লেগস্পিনার আদিল রশিদের বলে সিøপে জো রুটকে ক্যাচ দিয়ে। দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেই তিনি ৬৬ বলে ৩ চারে ৩৮ রান করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের যে কোন দিনের প্রথম সেশনের এক ঘণ্টা আর শেষ সেশনের শেষ ঘণ্টাটা বেশ জরুরী। চা বিরতির পর অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে আরেকটি ভাল জুটি গড়ে তুলছিলেন তামিম। এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেকটি সেঞ্চুরির দিকে। স্পিন স্বর্গের জন্য অনিয়মিত স্পিনার রুটও বোলিং করেন। ১৯৮২ সালে কানপুর টেস্টের পর এই প্রথম আবার ইংল্যান্ডের হয়ে চারজন স্পিনার টেস্টে বোলিং করলেন। তামিম সর্বশেষবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লর্ডস ও ম্যানচেস্টারে। এবারও সেই পুনরাবৃত্তি ঘটার সমস্ত ছাপই প্রতীয়মান হচ্ছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাগরিকায় ব্যাট হাতে নামার আগে সর্বাধিক ৫০৫ রান করেছেন তিনি ৬৩.১২ গড়ে! আর কোন দলের বিরুদ্ধে এক বেশি ব্যাটিং গড় নেই তামিমের। তবে এবার সেঞ্চুরিটা হলো না, বাঁহাতি এ ওপেনারকে থামালেন ৮ বছর পর টেস্ট দলে ফেরা ৩৯ বছর বয়সী অফস্পিনার ব্যাটি। ১৭৯ বলে ৭ চারে ৭৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম উইকেটের পেছনে জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে। তবে এর আগেই ঘরের মাটিতে সাকিবের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন তামিম। সেজন্য ২৪ রান প্রয়োজন ছিল। সাকিব সাগরিকায় ব্যাট হাতে নামার আগে ৩০ টেস্টে ২০৮৬ রান করেছেন দেশের মাটিতে। এখন দেশের মাটিতে তামিমের রান ২৯ টেস্টে ২০৫৪! তিনি চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ৪৪ রান যোগ করেন। মুশফিকও দারুণ খেলছিলেন। তামিমের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে আবার নতুন করে জুটি গড়ছিলেন ভালভাবেই। তবে দিনের শেষভাগে আবার মনোসংযোগে চিড় ধরল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের। এবার অধিনায়ক মুশফিক ফিরে গেলেন ৪৮ রান করে বেন স্টোকসের বলে। পঞ্চম উইকেটে ৫৮ রান যোগ করেছিলেন তিনি সাকিবকে নিয়ে। শেষ দুটি ওভারে শফিউল নেমে আর বিপদ ঘটতে দেননি। ৫ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে মোটামুটি স্বস্তি নিয়েই দিনশেষ করেছে বাংলাদেশ। আজ তৃতীয় দিনে সাকিব নামবেন। লাইনআপে এখন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন দুই অভিষিক্ত সাব্বির ও মিরাজ।
×