ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ জাভেদ হাকিম

নওগাঁ’র পাহাড়পুর বিহার

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

নওগাঁ’র পাহাড়পুর বিহার

বন্ধু গাড়ি কিনেছে তাই তার জরিমানা। কি জরিমানা করা যায় সেই ভাবনা থেকেই হুট করে সিদ্ধান্ত নেই ওর গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াব জেলা থেকে জেলা। যেই চিন্তা সেই কাজ। ফোন লাগাই জয়পুরহাট। আমন্ত্রণ মিলে আরেক বন্ধুর। যাকে বলে গায়ে পড়ে দাওয়াত নেয়া। অবশ্য অনেকে আবার দিলেও নেই না। ব্রড মাইন্ড দোস্তদার বলে কথা। যথারীতি ভোর চারটায় গাড়ি স্ট্রার্ট। ড্রাইভারসহ পাঁচজন। গাড়ির নাম যেমন এলিয়ন, কামও সেই রকম। যেই বনে বাঘ নেই সেই বনে শেয়ালও রাজা। সেই সুযোগে ফাঁকা সড়কে গাড়ি ছোটে তীব্র গতিতে। হেসে-খেলে যাওয়ার পথে জেলায়-জেলায় চা পানের অজুহাতে ব্রেক দিয়ে, বিভিন্ন দোকানের মজাদার খাবার চেখে, দুপুর একটার মধ্যেই পৌঁছাই সবুজের মাঝ দিয়ে ছুটে যাওয়া গাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরে। গেলবার পঞ্চগড় থাকার সময় বন্ধু বাসস্ট্যান্ড এসেই আমাদের অপেক্ষোয় ছিল এবার বাড়ির সামনে এসেও তাঁর দেখা নেই। তখন মনে পড়ে যায় গানের লাইনগুলো- ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না... ।’ মনে মনে ভাবলাম দোস্ত এখন মস্ত বড় গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সেই কারণেই পুরনো দিনের গানের লাইনগুলো আমাদের বেলায় নতুন করে প্রয়োগ হতে যাচ্ছে কিনা? দূর ছাই কি সব চিন্তা। দোস্ত যাই হোক আমাদের চাইতে তো আর বড় কিছু না। পেছন দিয়া দোস্তদার এসে হাজির। প্রথম দেখায় সামান্য কুশলাদি, সঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া, এরপর কী রকম আবেগ, কতটা উচ্ছ্বাস এই দুয়ের মিশ্রণ আমাদের মাঝে কেমন পরিমাণ এখনও বিদ্যমান, তা কষতে কষতে ঢুকি তাঁর ফ্ল্যাটে। হিসাবের খাতায় চোখের আড়ালে থেকে বন্ধুর মহব্বত বেড়েছে বৈ কমেনি। কাপড়-চোপড় ছেড়ে চলে ফেলে আসা দিনের গল্প-গুজব। ঘণ্টাখানেক পর ভেতর থেকে ডাক আসে ডাইনিংয়ে বসার। অতঃপর মিসেস সুরভি মেমের মুচকি হাসি মাখা আপ্যায়ন। ভাবির নাম যেমন সুরভি ঠিক তেমনি তাঁর হাতের রান্নাতেও সৌরভ। নানা পদের মজাদার সব খাবার খেয়ে ভাতিজা সৌহার্দ্যর ভরাট কণ্ঠে পুরনো দিনের গান শুনে ছুটি নওগাঁর পাহাড়পুর বিহারের পথে। বিহারের অবস্থান নওগাঁ জেলা হলেও জয়পুরহাট সদরের পাশে বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। প্রাইভেটকারে অল্পসময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাই বিহারপ্রান্তর। ইতিহাসের সাক্ষী পাল রাজবংশের শৈর্য-বীর্য বহনকারী পাহাড়পুর বিহার। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এই বিহারের আরেক নাম সোমপুর মহাবিহার। এর ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। যা পালবংশের কয়েক শতাব্দীর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে সুবিস্তৃত করে। বিশাল আয়তনের এই স্থাপনার চতুর্দিক ভিক্ষু কক্ষ বিস্তৃত প্রবেশ পথ। নিবেদন স্তূপ, ছোট ছোট মন্দির ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। সু-উচ্চ একটি কেন্দ্রীয় মন্দির রয়েছে। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ১১২.৪০ মিটার এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৯৫.৭৮ মিটার। মন্দিরে দেয়ালের বহির্ভাগ অলঙ্কৃত ইট, উদগত কার্ণিশ ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ধ্বংসাবশেষ হিমালয়ের দক্ষিণে সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহারের পরিচয় বহন করে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রকৃত নাম ছিল সোমপুর বিহার। এ বিহার পালবংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল কর্তৃক ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। বিহার কম্পাউন্ডে বর্তমানে একটা জাদুঘর রয়েছে। বিশাল আয়তনের পুরো বিহারজুড়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। নানা ফুলের বাগান, পাতাবাহার গাছগুলোকে দক্ষ হাতে শৈল্পিক রূপ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর বিকেল কাটিয়ে দেয়া যায় বেশ আয়েশি ঢঙে। এরপর সন্ধ্যায় চলে যাই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। চোখের সামনেই দেখি অনেক কিছু। অনিয়মই যেখানে নিয়মের মাপকাঠি, সেখানে নিয়মের বাণী শোনাবে এমন সাধ্য কার আছে? তাই বেশিক্ষণ না থেকে মানে মানে কেটে পড়ি। পরেরদিন সকালে সদর রোডে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের স্মরণ ও জেলার শেষ সীমানায় নান্দাইলের দীঘি ঘুরে চলে যাই বগুড়ার পথে। আজ এই পর্যন্তই। এরপরে হবে বগুড়ার মহাস্থান গড়ের গল্প। তথ্য: পাহাড়পুর বিহারে প্রবেশ ফি দেশী পর্যটকদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশীদের জন্য ২০০ টাকা জনপ্রতি। যোগাযোগ: পাহাড়পুর বিহারের অবস্থান নওগাঁ জেলাতে হলেও ঢাকা থেকে যারা যাবেন তাদের জন্য যাতায়াতের সুবিধা বেশি হবে জয়পুরহাট জেলা সদর হতে। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল হলে বিভিন্ন পরিবহনের বাস দিনে-রাতে জয়পুরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।এ/সি নন এসি দুই ধরনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া ৪৫০ টাকা হতে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। শহর থেকে অটোতে সোমপুর বিহার, জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। থাকা-খাওয়া: শহরের পূর্ববাজার ও স্টেশন রোডে বেশকিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ভাড়া নাগালের মধ্যেই। আমরা শুধু ধারণা দিলাম মাত্র। বাকিটা আপনার সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী সেরে নেবেন।
×