ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শরীরের উপর আলোর প্রভাব

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ অক্টোবর ২০১৬

শরীরের উপর আলোর প্রভাব

আলো ও অন্ধকার আমাদের অনুভূতির উপর কতটা প্রভাব রাখে, পদে পদে আমরা তা টের পাই। কিন্তু শরীরে ব্যথার তীব্রতাও যে আলো দিয়ে কমানো যায়, তা জানতেন কি? জার্মান বিজ্ঞানীরা লাইট থেরাপি নিয়ে অনেক কাজ করছেন। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ক্রনিক ব্যথার রোগীদের জন্য আলো আর ট্যাবলেট দিয়ে নতুন পদ্ধতি চলছে। ব্যথা চিকিৎসাকেন্দ্রে ডাক্তাররা লাইট থেরাপির উপর জোর দিচ্ছেন, যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ব্যথা এমন এক অনুভূতি, যা শুধু আংশিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব। প্রত্যেক রোগী তার শরীরের সতর্কতার সংকেত আলাদা আলাদাভাবে অনুভব করে। ব্যথা সংক্রান্ত এক জার্মান প্রশ্নপত্র রয়েছে, যার সাহায্যে রোগীদের প্রতিক্রিয়া কতটা স্পর্শকাতর, তা পরীক্ষা করা হয়। সূক্ষ্ম চুল, ব্রাশ ও চাপের সাহায্যে স্পর্শকাতরতার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। কয়েক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় কিছু প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়া যায়। বর্তমান জ্ঞান অনুযায়ী ব্যথা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। শুধু শারীরিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও একটা ভূমিকা পালন করে। স্নায়ু বিশেষজ্ঞ প্রো. টোমাস আর ট্যোলে বলেন, ‘এক্ষেত্রে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি হয়েছে। শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার তফাত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এই দুটি বিষয় যে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, সেই উপলব্ধি থাকলে জানা যায়, যে শুধু ভাল ওষুধ বা পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসা সহজ নয়।’ ডাক্তারদের পাওয়া ফল অনুযায়ী তীব্র ব্যথা এবং চলমান চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলোর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে। তবে সব আলো সমান নয়। উষ্ণ আলো অত্যন্ত আরামদায়ক হতে পারে। নীল, উজ্জ্বল আলোর অন্য প্রভাবও আছে। মানুষ এর ফলে আরও সজাগ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রো. টোমাস আর ট্যোলে বলেন, ‘এ নিয়ে কোন সংশয় নেই, যে কেউ যদি অপারেশনের পর আলোকিত পরিবেশে জেগে উঠে সেখানেই কয়েকদিন কাটায়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ কম ওপিয়েটের প্রয়োজন পড়ে। আমরা এটাও জানি, যে কোন হাসপাতালে আলো ও ছায়ার দিক থাকলে যে রোগীরা সূর্যের আলোর দিকে থাকেন, তারা বাকিদের তুলনায় অনেক দ্রুত সেরে ওঠেন।’ পেশি, জয়েন্ট এবং টেনডনে ব্যথা মুভমেন্ট বা নাড়াচাড়ার মাধ্যমে কমানো অথবা সারিয়ে তোলা যায়। মনঃসংযোগ এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নীল আলো আমাদের সজাগ থাকতে সাহায্য করে। এই আলো আমাদের সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের কথাও মনে করিয়ে দেয়, যা ঘুমানো ও জেগে থাকার নিয়ন্ত্রণকারী মেলাটনিন হরমোন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। অনেক রোগীর জন্য এই আলো বড় বেশি উজ্জ্বল। কথাটা সত্যি, কারণ ৪ হাজার লাখ সাধারণ দফতরের আলোর তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি আলো দেয়। মনস্তাত্ত্বিকের সঙ্গে গ্রুপ থেরাপির জন্য বেশি উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করা হয়। রোগীদের সেখানে শরীর মন শিথিল করে নিজেদের অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেয়ার কথা। উষ্ণ, হলুদ আলোর জন্য আদর্শ। প্রাথমিক পরীক্ষা অনুযায়ী রঙিন আলো নিরাময়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। প্রো. ট্যোলে বলেন, ‘আলো আমাদের সেই ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে, যা আসলে ব্যথার প্রতীক। তাই বাইরে, প্রকৃতির কোলে, আলোর সামনে গেলে নিজের দুর্বলতা দেখাতে পারলে আখেরে ভাল হয়। নিজেকে অসীমের দিকে ঠেলে দেয়াই হলো সমাধান। আলোর বদলে ছায়ার মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিলে কোন লাভ হয় না। এখানে আমরা ভবনের মধ্যে আলো নিয়ে কাজ করছি।’ উজ্জ্বলতা ও রং অনুযায়ী শরীর ও মনের উপর স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়। ব্যথা কমানো, মনঃসংযোগ বাড়ানো, মনমেজাজ ভাল করার এটাও একটা পথ। সূত্র : ইন্টারনেট
×