ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক জাতীয় ফুটবলার শেখ মোঃ আসলাম

‘এত ইগো নিয়ে সালাউদ্দিনের ওই চেয়ারে বসা ঠিক নয়’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ অক্টোবর ২০১৬

‘এত ইগো নিয়ে সালাউদ্দিনের ওই চেয়ারে বসা ঠিক নয়’

রুমেল খান ॥ কোচ আব্দুর রহিম তাকে ডিফেন্ডার থেকে রূপান্তরিত করেন স্ট্রাইকারে। ঢাকার মাঠে এতো গোলক্ষুধা আর কোন স্ট্রাইকারের ছিল কি না সন্দেহ। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে করেছেন অসংখ্য গোল। ছিলেন সুঠামদেহী। পায়ের শটেও ছিল যথেষ্ট পাওয়ার। তীব্র ও তীক্ষè হেডওয়ার্ক। অসম্ভব একাগ্রতা, নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন যিনি, তিনি শেখ মোঃ আসলাম। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে আসলাম জানান, ‘দেশীয় ফুটবলের যে স্বর্ণযুগ বা ধারাবাহিকতা ছিল, তা কিন্তু একদিনে নষ্ট হয়নি। যুযোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যর্থতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যর্থতাই আজকের ফুটবলের অধঃপতনের মূল কারণ।’ উঁচু ইমারত গড়তে গেলে চাই দৃঢ় বুনিয়াদ। সেই বুনিয়াদই যদি হয় নড়বড়ে, তাহলে একসময় ইমারত তো ধসে পড়বেই। বাংলাদেশের ফুটবলেও তাই হয়েছে বলে মনে করেন আসলাম। ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ জেলাতেই নিয়মিত লীগ হয়নি। যে কটায় হয়েছে, তা ছিল নামকাওয়াস্তে লীগ। চার-পাঁচটা দল নিয়ে টুর্নামেন্টের মতো লীগ! বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে শেরে বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ, বিমান কাপ, স্কুল ফুটবল। এর ফলে যুবসমাজ ক্রমশ নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত আট-নয় বছর ধরে এগুলোই চলে আসছে। ফলাফলটা কি, সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন!’ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন কি ব্যর্থ? ‘ভাল খেলোয়াড় হলেই যে ভাল সংগঠক হওয়া যায় না, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। শুনেছি সলিডারিটি কাপে বাংলাদেশের না খেলার পেছনেও নাকি তার হাত আছে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বলব এত ইগো সমস্যা নিয়ে তার ওই চেয়ারে বসে থাকা ঠিক নয়। তার তো দম্ভের শেষ নেই! যদি বিবেক থাকে, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। এটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। এটা তার ওপরেই ছেড়ে দিলাম।’ বাফুফেতে এর আগের কমিটিতে ছিলেন আসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি স্কুল ফুটবল নিয়ে শুরুটা ভালই করেছিলাম। কিন্তু বাফুফের কর্তাদের অসহযোগিতায় কাজটা আর চালিয়ে যেতে পারিনি। কমিটিতে থাকার সময় দেখেছি তারা কি পরিমাণ দুর্নীতিগ্রস্ত। এগুলোর সঙ্গে আপোস করতে না পেরেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলাম।’ ভুটান-লজ্জার পর প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা ক্লাব পর্যায়ে যে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পান, সেটা কি আসলেই তারা পাওয়ার যোগ্য? আসলামের ভাষ্য, ‘পারিশ্রমিক বাড়িয়েছে ক্লাবগুলোই। আসল সত্য হচ্ছে বর্তমানে মানসম্পন্ন ফুটবলার নেই বললেই চলে।’ ভুটান প্রসঙ্গে আসলামের মূল্যায়ন, ‘আমরা যখন খেলতাম, তখন তো ভুটান-নেপাল-মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দিতাম না। সময়ের পরিক্রমায় তারা যেমন ক্রমশ ওপরে উঠেছে, তেমনি আমরা ক্রমশ নিচে নেমেছি। এই অধঃপতনের জন্য প্রশংসা করতেই হবে বাফুফের ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে!’ সবশেষে আসলাম শেষ করেন এই বলে, ‘গত নয় বছরে সালাউদ্দিন যা করে দেখাতে পারেননি, তা তিনি আগামী তিন বছরে কিভাবে করে দেখাবেন, তা আমার বোধগম্য নয়!’
×