ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে স্পিনেই ভরসা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

টেস্টে স্পিনেই ভরসা বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ১৪ মাস টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ দল। সর্বশেষবার চারটি সিরিজ দেশের মাটিতেই খেলেছে। আর এ সিরিজগুলোতে বরাবরের মতোই বোলিং নৈপুণ্যে পেসারদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন স্পিনাররা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে পেস ‘বিস্ময়’ মুস্তাফিজুর রহমান দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন অভিষেকেই। সেই সিরিজে স্পিনাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সেই মুস্তাফিজ ইনজুরির কারণে নেই। পেস বিভাগ নিয়ে আছে নানাবিধ সমস্যা। অবশ্য বরাবরই স্পিনাররাই টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে বেশি সফল। ধারাবাহিকভাবে সেই সফলতা পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। সর্বশেষ কয়েকটি টেস্ট সিরিজে বাঁহাতি স্পিনার সাকিবের সঙ্গে দুই তরুণ স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেন লিখন সামলেছেন দলের স্পিন আক্রমণ। কিন্তু নিজেকে হারিয়ে ফেলা জুবায়ের আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজে দলে নেই। তাইজুল ছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের কাছে আর কোন স্পেশালিস্ট স্পিন বিকল্প হাতে নেই। বাংলাদেশ বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা স্পিন বিভাগটার দায়িত্ব তাই থাকছে সাকিবের সঙ্গে তাইজুলের কাঁধে। আর সে কারণেই সাকিব, তাইজুল ও মাহমুদুল্লাহ ছাড়াও টেস্ট দলে একঝাঁক স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে সাব্বির রহমান, শুভাগত হোম চৌধুরী, মেহেদি হাসান মিরাজকে দলে রাখা হয়েছে। উপমহাদেশে খেলতে আসলে সফরকারী দলগুলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে স্পিনারদের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ের সময়। এ কারণে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে স্পিনেই আস্থা রাখতে হবে বাংলাদেশকে। অবশ্য গত দুই বছরে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ দারুণ সংঘবদ্ধ হয়ে উঠেছে। তবে সেটা স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে। বিশেষ করে টেস্ট বিরতির এ লম্বা সময়ে স্পিনারদের চেয়ে অনেক বেশি সফল ছিলেন পেসাররা। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে যে কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী পেসাররা ভীতিকর হয়ে উঠেছিলেন। অথচ বরাবরই বাংলাদেশ দলের ভরসার অন্যতম স্থান ছিল স্পিন। সেটা দীর্ঘদিন সামলেছিলেন এনামুল হক মনি, মোহাম্মদ রফিক। তবে রফিকের পর আর কোন স্পেশালিস্ট স্পিনার ধারাবাহিকভাবে টানা খেলতে পারেননি। কিছুদিন এনামুল হক জুনিয়র (১৫ টেস্ট), রাজ্জাক (১২), সোহাগ গাজী (১০) ছিলেন। কিন্তু তারা কেউ দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেননি। এ্যাকশনে ত্রুটি চিহ্নিত হওয়ার পর দারুণ সম্ভাবনাময় এবং দলের অপরিহার্য হয়ে ওঠা সোহাগ পরে আর নিজেতে ফেরাতে পারেননি। এবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে পেসার ঘাটতি থাকায় স্কোয়াডে নেয়া হয়েছে তরুণ কামরুল ইসলাম রাব্বীকে এবং ফেরানো হয়েছে শফিউল ইসলামকে। তবে সাকিবের সঙ্গে স্পিন বিকল্প হিসেবে স্পেশালিস্ট তাইজুল ছাড়াও আছেন অলরাউন্ডার শুভাগত, তরুণ মেহেদী মিরাজ, মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির। টেস্টে একমাত্র সাকিবই নিয়মিত খেলে গেছেন এবং অন্যতম নির্ভরতা হিসেবে দলের স্পিন আক্রমণ পুরোটাই সামলেছেন। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে দলে তার সঙ্গী শুধু পালটেছে। সাকিবের পাশাপাশি আরেক অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও নিয়মিত বোলিং করেছেন। তবে স্পেশালিস্ট স্পিনার বিবেচনায় সাকিবের সঙ্গী হিসেবে সর্বাধিক ১১ ম্যাচ খেলেছেন বাঁহাতি আব্দুর রাজ্জাক। সোহাগ গাজী ৮, তাইজুল ৭, জুবায়ের ৬, এনামুল হক জুনিয়র ৪ টেস্ট খেলেছেন সাকিবের সঙ্গে। তবে এই ম্যাচগুলো হিসেব করলেও সাকিবই সেরা বোলিং নৈপুণ্যে। সবমিলিয়ে সাকিব সর্বাধিক ১৪৭ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা বোলার। এরপরের নামটিই রফিকের। তিনি ১০০ উইকেট নিয়েছেন। তবে সাকিবের সঙ্গে যত স্পিনার খেলেছেন তার মধ্যে সফলতম ছিলেন সোহাগ ৮৯ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়ে। ঘরের মাটিতে স্পিনাররা ৫১ টেস্টে ৪২.৮১ গড়ে নিয়েছেন ৩৮৩ উইকেট এর মধ্যে সাকিবের দখলেই আছে ১০৪টি। আর পেসাররা সেখানে ঘরের মাটিতে সমান টেস্টে পেয়েছে ৫৬.২৫ গড়ে ১৮৮ উইকেট। সার্বিকভাবে এখন পর্যন্ত ৯৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সেদিক থেকেও অনেক বেশি সফল স্পিনাররা। ৪৫.৩২ গড়ে স্পিনারদের শিকার ৫৫৫ উইকেট আর পেসারদের ৪০১টি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেও সাকিবই মূল ভরসা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও দারুণ সফল তিনি। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৬.৯৪ গড়ে ১৭ উইকেট। মাহমুদুল্লাহ ছাড়া আর কোন স্পিনারের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি অবশ্য তেমন সফলতা পাননি, মাত্র ৪ উইকেট নিতে পেরেছেন। এ কারণে সাকিবের অন্যতম সঙ্গী থাকবেন তাইজুলই। এ তরুণ বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সেরা ব্যক্তিগত বোলিংয়ের রেকর্ডধারী। দেশের প্রথম বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মিরপুরে ৩৯ রানে ৮ উইকেট দখল করেছিলেন। ৯ ম্যাচে ৩৬ উইকেট নেয়া ২৪ বছর বয়সী তাইজুলের কাঁধেই তাই দায়িত্ব।
×